সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাজারে সোনার দাম হঠাৎ কমে যাওয়ার ঘটনা সবার নজরে এসেছে। কয়েকদিন আগে পর্যন্ত যেই সোনার দাম প্রতিদিনই ঊর্ধ্বমুখী ছিল, সেখানে এখন দামের পতন দেখা যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের বাজারে এখনো সেই কমতির ছোঁয়া লাগেনি।
সোনার দাম: আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারের বাস্তব চিত্র
গত ২৬ মে ২০২৫, আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট গোল্ডের দাম প্রতি আউন্সে ০.৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩,৩৩২.৪ ডলার। অপরদিকে, ফিউচার মার্কেটে সোনার দাম ১ শতাংশ কমে হয়েছে ৩,৩৩১.৯০ ডলার। মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার চাহিদা হ্রাস পেয়েছে।
Table of Contents
অন্যদিকে, ডলারের দাম সাময়িকভাবে কমে যাওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের জন্য সোনা কিছুটা সস্তা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সোনার দাম আবারও নিচের দিকে যাচ্ছে। ২১ মে তারিখে সোনার দাম প্রতি আউন্সে ০.৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছিল ৩,৩০৫.৩৯ ডলার, যা ছিল ১২ মে’র পর সর্বোচ্চ মূল্য।
বাংলাদেশে সোনার বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা
বাংলাদেশে সোনার বাজারে এখনও আন্তর্জাতিক প্রভাব পড়েনি। বরং বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) গত সপ্তাহে টানা দুই দফায় সোনার দাম বৃদ্ধি করেছে। গত ২১ মে ভরিতে ২৮২৩ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেট সোনার দাম নির্ধারণ করা হয় ১,৬৯,৯২১ টাকা। পরদিন, ২২ মে থেকে এই দাম কার্যকর হয়।
বর্তমানে প্রতি ভরিতে সোনার দাম নিচের মতো:
- ২২ ক্যারেট: ১,৬৯,৯২১ টাকা
- ২১ ক্যারেট: ১,৬২,২০০ টাকা
- ১৮ ক্যারেট: ১,৩৯,০২৩ টাকা
- সনাতন পদ্ধতি: ১,১৪,৯৪৯ টাকা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়তে কিছু সময় লাগতে পারে। বাংলাদেশের ব্যবসায়িক বাজার এখনো বেশ চাঙ্গা।
সোনার দামের পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাব
বিশ্ববাজারে দরপতনের ফলে ভবিষ্যতে দেশের বাজারে সোনার দাম কিছুটা কমতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আমদানির খরচ, শুল্ক ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সোনার দামে সামান্য পরিবর্তন বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকেই এখন অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় বিনিয়োগ পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করছেন।
বিশ্লেষকদের পরামর্শ
বিশ্লেষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, এখনই চূড়ান্ত বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত না নিয়ে কিছুটা অপেক্ষা করা উচিত। কারণ বিশ্ববাজারে দাম আরও কমতে পারে অথবা আবার বাড়তে পারে। ফলে এখন ধৈর্য ও বাজার পর্যবেক্ষণের সময়।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সোনার ভবিষ্যৎ মূল্য
বিশ্ববাজারে সোনার দাম পরিবর্তনের মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, মুদ্রানীতির পরিবর্তন, এবং বৈশ্বিক মন্দা শঙ্কা। বিশেষত ডলারের শক্তি ও মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের নীতিমালার পরিবর্তন সরাসরি প্রভাব ফেলে থাকে সোনার দামে।
২০ টাকার নতুন নোট: ডিজাইন, বিতর্ক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান
সোনার বিনিয়োগ: কোন পথে হাঁটবেন?
সোনায় বিনিয়োগ একটি নিরাপদ বিকল্প হলেও বর্তমান অস্থির বাজার পরিস্থিতিতে কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যারা আগে থেকে সোনা কিনেছেন, তারা হয়তো এখনই লাভজনক অবস্থানে রয়েছেন। তবে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজারের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, সোনার দাম নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাজার বিশ্লেষণ, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট এবং দেশীয় অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনা করেই বিনিয়োগ করা উচিত।
সোনার দাম নিয়ে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি (FAQs)
১. বর্তমানে বাংলাদেশে সোনার দাম কত?
বর্তমানে ২২ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ভরিতে ১,৬৯,৯২১ টাকা, ২১ ক্যারেট ১,৬২,২০০ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট ১,৩৯,০২৩ টাকা।
২. বিশ্ববাজারে সোনার দাম কেন কমেছে?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর শুল্ক প্রত্যাহার করায় এবং বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ সম্পদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় দাম কমেছে।
৩. বাংলাদেশের বাজারে এই দরপতনের প্রভাব পড়বে কি?
বিশ্ববাজারের প্রভাব কিছুটা বিলম্বে পড়ে। তাই আগামী দিনে দেশের বাজারেও দামের সামান্য পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
৪. এখন সোনা কিনলে লাভ হবে?
বাজারে দামের উঠানামা চলমান থাকায় এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিয়ে বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করাই উত্তম।
৫. ভবিষ্যতে সোনার দাম আরও কমতে পারে কি?
বিশ্ববাজারের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী আরও দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এটি নির্ভর করবে ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঘটনার উপর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।