উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে নারীর প্রতি সহিংসতার হার। সিলেটে এমসি কলেজসহ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে পাশবিক নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় সারাদেশে।
এর মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) একজন সহকারী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন ওই ডিসিপ্লিনের একজন সাবেক শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন কিভাবে শিক্ষকের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছেন, সে বিষয়টি তুলে ধরেছেন নিজের ফেসবুক আইডিতে।
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মোল্লা আজিজুর রহমান। তিনি ইংরেজি ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক। তবে তিনি এ অভিযোগকে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ এবং উদ্দেশ্যমূলক বলে দাবি করেছেন।
খুবির ইংরেজি বিভাগের সাবেক ওই শিক্ষার্থী তার ফেসবুকের পোস্টটি “প্রবাসীর দিগন্ত”র পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
ওই সাবেক শিক্ষার্থী তা ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘এখনো ধর্ষিত হইনি। কিন্তু হতে পারতাম, বহুবার! আজকে একটা ঘটনা বলি।
২০০৯ সাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সেমিস্টারের পিএল চলে। সঙ্গে ঈদের ছুটিও ছিল সম্ভবত। ডিসিপ্লিন বন্ধ। বাসায় বসে টিভি দেখছিলাম। এরমধ্যে ফোন আসলো সিআর বায়জিদ আলম খান এর নম্বর থেকে। ও বলল, মোল্লা আজিজুর রহমান স্যারের ক্লাস টেস্ট দিছিলি তুই? তোর শিট তো স্যার খুঁজে পাচ্ছেন না। এইমাত্র বললেন আমাকে। স্যার তোকে ফোন করে কনফার্ম করতে বলেছেন। ফোন কর জলদি। ফোন করলাম।
- সিটি দিয়েছিলে?
-জি, স্যার। দিয়েছি তো!
-খুঁজে পাচ্ছি না। আচ্ছা, দেখি আরো খুঁজে। পেয়ে যাব হয়তো। (ধানাইপানাই)… আচ্ছা, তুমি কী একটা সমস্যা নিয়ে আসছিলে না? এখন আমি
ফ্রি আছি। আসতে পারো।
মনে পড়ে গেল, কী কারণে যেন রুমানা ম্যামের রুমের সামনে উঁকি মারছিলাম। স্যার দেখে বলেছিল, কী সমস্যা? হঠাৎ কী বলব, পড়াশুনা বিষয়ক একটা প্রশ্ন হাজির করলাম। স্যার বলেছিল, এখন ব্যস্ত। পরে এসো। মাথা নেড়ে বিদায় হলাম। স্যার তো কারণে অকারণে আমাদের ইনসাল্ট করার জন্য মুখিয়ে থাকে। হঠাৎ যেচে পড়ে উপকার করতে চাইছে! খটকা লাগলো। বললাম, ঠিক আছে, স্যার। প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি। সমস্যা নাই। ধন্যবাদ।
- টার্ম ফাইনালের প্রস্তুতি কেমন চলছে? তুমি এলে কিছু ব্যাপারে গাইডলাইন দিতে পারি।
আমার সন্দেহ বাড়লো।
-স্যার, ছুটি চলছে তো। ডিসিপ্লিন কি কোনো কারণে খোলা?
- না, আমার বাসায় চলে আসো। তুমি নিরালা এলাকা চেন?
এবার আমি মোটামুটি নিশ্চিত, ব্যাটার মতলব খারাপ। কারণ উনার সাথে আমার এমন কোনো সখ্যতা হয়নি যে আমার জন্য তার দরদ এত উতলাইয়া পড়বে! তবু কড়াভাবে কিছু বলতে পারিনি (এখন হলে ওর কপাল খারাপ আছিলো)। তাই ছুতা দেয়া শুরু করলাম।
- না, স্যার। তেমন একটা চিনি না। ভেতরে যাইনি (মিথ্যা কথা। ছাত্রী পড়াই নিরালায়)।
সমস্যা নেই। ইজি এড্রেস। বলে দিলেই আসতে পারবে।
স্যার, আমার ছাত্রছাত্রী আসবে বিকেলে। এখন প্রায় দুটো বাজে। আর আমার বাড়ি ফুলতলা, নিরালা থেকে একঘণ্টার পথ।
- ও, আচ্ছা। ফোন রেখে দিলো সে।
পাশে বড় আপা বসে ছিল। ফোন লাউড মুডে দেয়া ছিল, সব শুনেছে আপা। আমি শুধু তার দিকে তাকিয়ে বললাম, কী হলো এটা!
বড় আপা বললো, একদম সাবধানে থাকবি এর ব্যাপারে। উদ্দেশ্য ভালো না।
আমি বললাম, সে তো বুঝতেই পারছি। আমি বরং যাই। গিয়ে দেখি ও আমার কী করতে পারে।
- কোনো বীরত্ব দেখানোর দরকার নাই। পুরুষ মানুষের সঙ্গে গায়ের জোরে পারবি না। এড়িয়ে চলাই নিরাপদ। কেউ ওর দিকে আঙুল তুলবে
না, তোর দিকে তুলবে।
-আমার কি দুর্নামের অভাব আছে? আর কী হবে? আর একা তো যাব না। নাইম হাসান, অনিন্দ্য মুনাসিব, বায়জিদ ওদের নিয়ে যাব। হাতেনাতে
ধরব ব্যাটাকে।
যাই হোক, আমার মাস্টারপ্ল্যান খারিজ করে দিলো বড় আপা। এরই মধ্যে আবার ফোন বাজলো। শ্রদ্ধেয় স্যারের নম্বর!
- শোনো, তোমার ছাত্রদের আজকে আসতে মানা করে দাও।
ওদের সবার নম্বর নাই আমার কাছে। আর সামনে ওদের ভর্তি পরীক্ষা তো। এখন মিস দিলে ক্ষতি হবে, স্যার।
কোনোভাবেই হচ্ছে না দেখে রণে ভঙ্গ দিল শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আমার।
মাথা পুরাই খারাপ নাকি এই লোকের! এ কী নির্লজ্জ পারসুয়েশন!
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আবার কল বাজলো। আবারো স্যার। বলল, শোনো, আমি যে তোমাকে ফোন করে আসতে বলেছি এটা তোমার বন্ধুদের বলো
না। ওরা তোমাকে খারাপ ভাবতে পারে। তুমি তো সহজ সরল মেয়ে। অনেক কিছু বুঝবে না। ওরা নানান কথা ছড়াবে যদি শেয়ার করো।
-জি, স্যার। বলব না।(বলা বাহুল্য, আমার চেহারায় গাধা ভাব প্রকট!)
এরপর থেকে শুরু হলো স্যারের সঙ্গে আমার ঠান্ডা যুদ্ধ!
ক্লাসে তার দিকে এমনভাবে তাকাতাম, যেন চোখ দিয়েই বলে দিতাম, কী … পড়ান আপনি। ভাড়ামি যতসব! আর সেও তার প্রেমের নিদর্শন দেখাতো পরীক্ষার খাতায়। পুরো চার বছর তার সব কোর্সে দরিদ্র ফলাফল। রেজাল্ট নিয়ে আফসোস করি না। কিন্তু হাজার উপায়ে মানসিক অত্যাচার করেছে, ক্লাসে অপমান করেছে। আফসোস হয়, কেন তখন রেজাল্ট খারাপের ভয়টাকে পাত্তা দিছিলাম!’
ফেসবুকে এই পোস্টের কমেন্টে অনেকেই তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন।
ইংরেজি ডিসিপ্লিনের সাবেক আরেক শিক্ষার্থী একজন লেখেন, ‘তুই নিশ্চয়ই জানিস যে, তোর একার সঙ্গে সে এমন ব্যবহার করেনি। বিভাগের আরো কয়েকজনের সঙ্গেও এটা করেছে, তোকে আগেই বলেছি। একবার তো নিরালা ২নং এর গলিতে অন্যভাবেও দেখেছি একে। যাইহোক, তুই যে সাহস করে এই পাবলিক প্লাটফর্মে সব বললি, এজন্য তোকে সম্মান জানাই। সবার এই সাহসটা থাকে না, যেটা থাকা উচিত। ভালবাসা নিস, সবসময়।’
আরেকজন লেখেন, ‘আপু, এই লোক আমাদের (ইউআরপি-১৫) ক্লাস নিতো। উনি খুব হাসিমুখে ওনার নিজের মেয়েকে নিয়ে আপত্তিকর কথা বলত। বাকিটা বুঝে নিতে কারো অসুবিধা হত না।’
এসব বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোল্লা আজিজুর রহমান বলেন, এটি একটি ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ এবং উদ্দেশ্যমূলক। ১১ বছর আগের ঘটনা এখন কেন এভাবে আসবে?
তার দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাকে সম্পৃক্ত করতে না পেরে একটি মহল তাকে ফাঁসাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, কয়েক বছর আগে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের ফরম পূরণ করে আমাকে সদস্য হতে বলে একটি মহল। কিন্তু আমি নিরপেক্ষ থেকে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চেয়েছি। কখনো রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে চাইনি। তখন থেকেই ওই মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। আমাকে চাকরিচ্যুত করারও হুমকি দেয়া হয়েছিল। এটিও ওই ষড়যন্ত্রের অংশ।
এ বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের পরিচালক মোসা. হোসনেয়ারাকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।