জুমবাংলা ডেস্ক : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য সুখবর নিয়ে আসছে নতুন বছর। সরকারি কর্মকর্তাদের মতো তারাও মাত্র ৫ শতাংশ হারে সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ পাচ্ছেন। ১ জানুয়ারি থেকেই এটি কার্যকর হবে।
সরকারি কর্মচারীদের মতো তাদেরও ঋণ দেয়া হবে ২০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। সর্বোচ্চ ২০ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়, গৃহনির্মাণ ঋণের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সরল সুদ। অর্থাৎ সুদের উপর কোনো সুদ আদায় করা যাবে না। ঋণগ্রহীতা ব্যাংক রেটের সমহারে সুদ পরিশোধ করবে। সুদের অবশিষ্ট অর্থ সরকার ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে। সরকার সময়ে সময়ে ৯ শতাংশ সুদ হার পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে।
তবে পুনঃনির্ধারিত অনুরুপ সুদের হার কেবলমাত্র নতুন ঋণগ্রহীতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এই পরিপত্রের কারণে এখন শিক্ষক-কর্মচারীরা ঋণের ৯ শতাংশ সুদের ওপর ৪ শতাংশ বা এর কম-বেশি ভর্তুকি পাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, বর্তমানে সুদের ব্যাংক রেট সাড়ে ৪ শতাংশ আছে। অবশ্য এই রেট ৫ বা সাড়ে ৫ শতাংশেও উন্নীত হয়েছে অতীতে। তবে ভবিষ্যতে এটি ৪ শতাংশে নামতে পারে। ব্যাংক রেট যেটা হবে সেটাই শিক্ষকরা পরিশোধ করবেন। বাকি ৫ শতাংশ বা এর কম-বেশি যেটা আসবে সেটা সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে।
তবে একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, বর্তমানে ব্যাংক সুদ হার ৫ শতাংশ। এটি আরও কমতে পারে। এই হার সময়ে সময়ে কম-বেশি হয়ে থাকে।
ওই শিক্ষক নেতা এএসএম মাকসুদ কামাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) শিক্ষকদের সম্মান জানিয়ে নিজ হাতে ৯ শতাংশ সুদ লিখে দিয়েছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের এটা আছে ১০ শতাংশ। সেই হিসাবে এটা নতুন বছরে শিক্ষকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই কাজে নিবিড়ভাবে সহায়তার জন্য শিক্ষা ও অর্থমন্ত্রী, উভয় মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
পরিপত্র প্রসেসিং ফি সংক্রান্ত বিষয়ে নীতিমালা বিষয়ে বলা হয়েছে, ঋণগ্রহীতাকে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রাপ্তির জন্য প্রসেসিং ফি অথবা আগাম ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অতিরিক্ত ফি প্রদান করতে হবে না। তবে স্বত্ব রিপোর্টের জন্য সরকারি প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ হাজার এবং বেসরকারি প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতা বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে প্রদান করবে।
ঋণ পেতে আবেদনকারীকের অবশ্যই শিক্ষক ও কর্মচারী হতে হবে। গৃহ নির্মাণ ঋণের জন্য আবেদনের সর্বশেষ বয়সসীমা হবে অবসরোত্তর ছুটিতে গমেনের এক বছর পূর্ব পর্যন্ত এবং সরকার প্রদত্ত সুদ ভর্তুকি অবসরোত্তর ছুটি ভোগের সর্বশেষ দিন পর্ষন্ত প্রাপ্য হবে।
পরিপত্রে বলা যায়, আবেদনের বয়সসীমার দিক থেকে সরকারি কর্মচারীদের তুলনায় একটু বেশি সুবিধা ভোগ করবেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এটা তারা ভোগ করবেন চাকরির বয়সসীমার কারণেই। যেমন সরকারি কর্মচারীদের চাকরির বয়সসীমা ৫৯ বছর পর্যন্ত। তাই তারা ঋণ আবেদন করতে পারেন ৫৮ বছর বয়স পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর। তাই তাদের সুযোগ দেয়া হবে ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত।
ঋণের সর্বোচ্চ সিলিং নির্ধারণ ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ সিলিং ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা কর্তৃক যথাযথ পদ্বতির মাধ্যমে নিরুপিত পরিমাণ এর দুয়ের মধ্যে যেটি কম, যে পরিমাণ ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণ করা যাবে। তবে সিলিং নির্ধারনের ক্ষেত্রে জমিসহ তৈরি বাড়ি ক্রয় এবং ফ্ল্যাটের ক্রয় মূল্যেও সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন ফি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানের জন্য ডেট ইক্যুইটি অনুপাত হবে ৯০ অনুপাত ১০।
পরিপত্রে বলা হয়েছে ,সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বোচ্চ সিলিং অনুসারে ৫ম গ্রেড তদুর্ধ্ব ঢাকা শহর বা সব সিটি কর্পোরেশন বা বিভাগীয় সদর ঋণের সিলিং হচ্ছে ৭৫ লাখ টাকা, জেলা সদর ৬০ লাখ এবং অন্যান্য এলাকা ৫০ লাখ টাকা । অন্যদিকে সর্বনিম্ন ২০ তম গ্রেড হতে ১৮ তম গ্রেড ঢাকা শহর বা সব সিটি কর্পোরেশন বা বিভাগীয় সদর সিলিং হচ্ছে ৩৫ লাখ টাকা , জেলা সদর ২৫ লাখ টাকা , এবং অন্যান্য এলাকায় ২০ লাখ টাকা।
শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন জানিয়েছে, দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৪৫টির মতো। এগুলোতে শিক্ষক রয়েছে ১৩ থেকে ১৪ হাজার, আর কর্মচারী রয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার। এর বাইরে ইউজিসিতেও কর্মচারীও রয়েছে। সব মিলিয়ে শিক্ষক-কর্মচারী হবে ২০ হাজার।
অর্থ বিভাগ ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহঋণ প্রদান নীতিমালা’ জারি করে গত ৩০ জুলাই। নীতিমালায় এ ঋণ পাওয়ার জন্য ‘সরকারি কর্মচারী’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তাও উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, গৃহঋণ তারাই পাবেন, যারা সরকারের আওতাধীন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, পরিদফতর ও কার্যালয়গুলোতে শুধু স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগ পাওয়া সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারী। সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



