বাবা পুলিশের হেড কনস্টেবল। ছেলে তো পুলিশের আরো বড় কোনো কর্মকর্তাই হবেন। হয়তো এমনটাই আশা করেছিলেন তার পরিবার। কিন্তু শেষতক সেই ছেলে হলো সন্ত্রাসী। এখন সে বিশ্বের এক নম্বর ডন। বলছিলাম ভরতের মোস্ট ওয়ান্টেড দাউদ ইব্রাহিমের কথা। তার রোমাঞ্চকর জীবনী হার মানাবে হলিউডের ব্যবসাসফল থ্রিলারকেও।
তার জন্ম মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি জেলায়, ১৯৫৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর। বাবা ইব্রাহিম কাসকর পুলিশকর্মী। মা আমিনা ঘরসংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। মুম্বইয়ের ডোংরি এলাকার অলিগলিতে বেড়ে উঠেছিলেন দাউদ। আহমেদ সেলর হাই স্কুল থেকে মাঝপথে বিদায় নেওয়া দাউদের অন্ধকার জগতের পথ চেনা শুরু বড় ভাইয়ের হাত ধরে। তার সহোদর সাবির ইব্রাহিম কাসকরই শুরু করেছিলেন সংগঠিত ভাবে অপরাধমূলক কাজ। যেটা পরে পরিচিতি পায় ‘ডি কোম্পানি’ নামে।
‘ডি কোম্পানি’ নামটা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেরই দেওয়া। দাউদের নামের আদ্যক্ষর থেকেই এই নামকরণ। হাওয়ালা থেকে মাদক পাচার, গোয়েন্দাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী অপরাধের সব শাখায় পারদর্শী দাউদ।
১৯৯৩ সালের মুম্বাই বিস্ফোরণের মূল চক্রী দাউদ ইব্রাহিমকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র দু’টি দেশই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করে। দাউদের সঙ্গে ওসামা বিন লাদেনেরও যোগাযোগ ছিল বলে দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের।
২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার সঙ্গেও দাউদের ডি কোম্পানি জড়িত ছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি। এফবিআই-এর মোস্ট ওয়ান্টেড পলাতক বন্দির তালিকায় তিন নম্বরেই আছে দাউদের নাম। ভারতীয় গোয়েন্দারা বরাবর দাবি করে এসেছেন, পাকিস্তানেই রয়েছেন দাউদ। কিন্তু প্রতিবারই পাকিস্তান এই দাবি অস্বীকার করেছে।
গুন্ডা জীবনের প্রথম দিকে দাউদের মূল সহকারী ছিলেন ছোটা শাকিল। কিন্তু তাদের সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। ছোটা শাকিল পরে নতুন গ্যাং শুরু করেন। দাউদের সঙ্গে পুরনো বন্ধুত্ব পাল্টে যায় চরম শত্রুতায়। বর্তমানে মুম্বাইয়ের জেলে যাবজ্জীবন বন্দি ছোটা শাকিল।
দাউদ-সাম্রাজ্যের আর এক মূল স্তম্ভ ছিলেন তার বোন হাসিনা পার্কার। ১৯৯১ সালে এক সংঘর্ষে মারা যান তার স্বামী ইসমাইল পার্কার। এই ঘটনার জেরেই হাসিনা ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন গডমাদার। গোয়েন্দাদের দাবি, দাউদের অবর্তমানে হাসিনার আয়ত্বে থাকত মুম্বাইয়ের আন্ডারওয়র্ল্ড। ২০১৪ সালে মারা যান হাসিনা।
মুম্বাইয়ের ক্রিকেট ও বিনোদনের সঙ্গে-ও জড়িয়ে দাউদ ইব্রাহিমের নাম। বলিউডের তারকাদের পাশে শারজায় ক্রিকেট গ্যালারিতেও তাকে দেখা গিয়েছে।
২০১৩ সালে প্রাক্তন ক্রিকেটার দিলীপ বেঙ্গসরকর দাবি করেন, ১৯৮৬ সালে শারজায় ভারতীয় ক্রিকেটারদের সাজঘরে ঢুকে পড়েছিলেন দাউদ। সরাসরি অফার দিয়েছিলেন ক্রিকেটারদের। যদি শারজা কাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে হারানো যায়, তা হলে প্রত্যেককে একটি করে গাড়ি উপহার দেবেন, এমনটাও নাকি বলেছিলেন দাউদ।
বিনোদন জগতে তো দাউদের নাম বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে। এই অভিযোগ বহু দিনের যে, আরব সাগরের তীরে টিনসেল টাউনে অন্ধকার দুনিয়ার টাকা ওড়ে। বেনামে হিন্দি ছবি প্রযোজনা থেকে শুরু করে অভিনেতা, প্রযোজকদের হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, দাউদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক।
মডেল অনিতা আয়ুব এবং আটের দশকের নায়িকা মন্দাকিনী দাউদের সঙ্গিনী ছিলেন বলেও গুঞ্জন। তার জন্যই মন্দাকিনীর বলিউডের কেরিয়ার আচমকাই গুটিয়ে যায় বলে শোনা যায়। মন্দাকিনী নাকি তার সঙ্গে দুবাইয়ে থাকতনেও। যদিও এই সংক্রান্ত দাবি বরাবর উড়িয়ে দিয়েছেন ‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’র নায়িকা।
দাউদের স্ত্রীর নাম মেহজবীন শেখ ওরফে জুবিনা জারিন। ২০০৬ সালে দাউদের মেয়ে মাহরুখ ইব্রাহিমের সঙ্গে বিয়ে হয় পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াদাদের ছেলের। তার পাঁচ বছর পরে দাউদের আর এক মেয়ে মেহরিন বিয়ে করেন পাকিস্তানি ও মার্কিন নাগরিক আয়ুবকে। দাউদের ছেলে মইনও বিয়ে করেন ২০১১ সালেই। লন্ডনের এক ব্যবসায়ীর মেয়ে, সানিয়াকে।
দাউদ ইব্রাহিমের আত্মীয়দের একাংশ মুম্বইয়ের বাসিন্দা। ভারত-সহ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে তার অপরাধের জাল। তাকে ধরতে চেষ্টার কসুর হয়নি। কিন্তু ডন এখনও নাগালের বাইরে।
সূত্র: আনন্দবাজার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।