প্রকৃতির অফুরন্ত বিস্ময় আমাদের মুগ্ধ করে। এরকম এক অভূতপূর্ব বিস্ময় হলো কিছু প্রাণীর অসাধারণ শক্তি ও ক্ষমতা। অনেক প্রাণীর শক্তি, সাহস এবং ক্ষমতা আমাদের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। শারীরিক গঠন, অসাধারণ দক্ষতা এবং প্রকৃতিতে টিকে থাকার অদম্য ইচ্ছা এদের কোনো কোনোটিকে অনন্য করে তুলেছে। এরকম উল্লেখযোগ্য শক্তিশালী ৫ প্রাণীর জানা-অজানা বিভিন্ন দিক নিয়ে এ আয়োজন।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার
বাংলার বাঘ—রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সিংহের চেয়ে বেশি চটপটে এবং দ্রুতগামী এ প্রাণী নিজের আকারের দ্বিগুণ ওজনের শিকার ধরতে সক্ষম। পেশীবহুল পায়ের জন্য ঘণ্টায় ৬৫ কিমি বেগে দৌড়াতে পারে। ওজন হতে পারে ৩০৬ কেজি বা ৬৭৫ পাউন্ড পর্যন্ত। বাঘের থাবা এত শক্তিশালী যে একজন মানুষ বা কোনো প্রাণীকে তাৎক্ষণিকভাবে মেরে ফেলতে পারবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কামড়ের শক্তি প্রায় ১ হাজার ৫০ পিএসআই।
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বৈজ্ঞানিক নাম প্যান্থেরা টাইগ্রিস (Panthera tigris)। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাঘের উপপ্রজাতি।
মাস্ক অক্স
মাস্ক অক্স বা ষাঁড় আর্কটিক অঞ্চলের স্তন্যপায়ী প্রাণী। শক্তিশালী পেশী এবং মোটা, লম্বা পা এদের ভারী বস্তু বহন করতে এবং উঁচু, খাড়া এলাকায় চলাফেরা করতে সাহায্য করে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মাস্ক অক্স ১৮০ থেকে ৪১০ কেজি ওজনের হতে পারে। শিকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় এরা মাথা নিচু করে আক্রমণাত্মক অবস্থানে দাঁড়াতে পছন্দ করে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মাস্ক অক্স নিজ দেহের ওজনের প্রায় ১.৫ গুণ, অর্থাৎ ৯০০ কেজি পর্যন্ত তুলতে পারে।
নর্দান হোয়াইট রাইনো
নর্দান হোয়াইট রাইনো বা উত্তুরে সাদা গণ্ডার তৃণভোজী প্রাণী হিসেবে পরিচিত হলেও, এদের শান্ত চেহারার আড়ালে লুকিয়ে আছে বিপুল শক্তি। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ গণ্ডারের ওজন ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে, যা একটি গড়পড়তা গাড়ির চেয়েও বেশি। একটি সাদা গণ্ডার কত শক্তিশালী, তা পরিমাপ করা কঠিন।
তবে অনুমান করা হয়, এরা ৮০০ থেকে ১ হাজার ১০০ কেজি পর্যন্ত ওজন টেনে নিতে পারে। গণ্ডার অবশ্য এ শক্তি ব্যবহার করে আত্মরক্ষার্থে, নিজ এলাকা রক্ষা এবং জঙ্গলে পথ তৈরি করার জন্য। বর্তমানে পৃথিবীতে মাত্র দুটি নর্দান হোয়াইট রাইনো টিকে আছে। এরা প্রজাতির শেষ দুই নারী সদস্য—নাজিন ও ফাতু। এরা কেনিয়ার একটি সংরক্ষিত এলাকায় বাস করে।
গরিলা
গরিলা অত্যন্ত শক্তিশালী প্রাণী। ক্রমাগত শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে এরা নিজেদের শক্তি বজায় রাখে। এদের বিশাল পেশী গাছ থেকে গাছে ঝুলতে ও নিজেদের এলাকা রক্ষা করতে সাহায্য করে। এভাবে নিজেদের শারীরিক গঠন যথাযথভাবে ধরে রাখে গরিলা। পুরুষ গরিলা স্ত্রী গরিলার তুলনায় আকারে বড় হয় এবং পূর্ণ বয়স্ক হলে ২০০ কেজি পর্যন্ত ওজন তুলতে পারে। গরিলা মূলত উদ্ভিদভোজী প্রাণী। তবে এদের কামড়ের শক্তি অনেক বেশি—১ হাজার ৩০০ পিএসআই পর্যন্ত হতে পারে। এত প্রচণ্ড শক্তির কারণ এদের বিশাল চোয়ালের পেশী এবং শক্তিশালী দাঁত।
আফ্রিকান বুশ হাতি
বিশ্বের বৃহত্তম স্থলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী আফ্রিকান বুশ হাতি প্রোবোসিডিয়ান বর্গের সদস্য। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়। একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ আফ্রিকান হাতির উচ্চতা ৩.২ থেকে ৪.০ মিটার বা ১০.৫ থেকে ১৩ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত আফ্রিকান হাতির ওজন ৪ হাজার ৭০০ থেকে ৬ হাজার ৪৮ কেজির মতো হয়। এ হাতির শুঁড়ে থাকে ৪০ হাজারেরও বেশি পেশী। এই শুঁড় দিয়ে আফ্রিকান বুশ হাতি ২০০ কেজি পর্যন্ত তুলতে পারে। আফ্রিকান বুশ হাতির এ শক্তি বনের অন্যান্য প্রাণীরা ভয় পায়, আশপাশে ঘেঁষতে চায় না।
![](https://inews.zoombangla.com/wp-content/uploads/2024/03/34-5.jpg)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।