জুমবাংলা ডেস্ক : বিশ্বের ১০ বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ মন্দায় কিংবা মন্দার ঝুঁকিতে রয়েছে, যা ২০০৯ সালের পর বিশ্ব অর্থনীতিতে আরেকটি মন্দার হাতছানি দিচ্ছে। এ দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ব্রিটেন, ইতালি, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও সিঙ্গাপুর। সাধারণত টানা দুই প্রান্তিকে কোনো দেশের অর্থনীতি সংকুচিত হলে তাকে মন্দা বিবেচনা করা হয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানায়, এ বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৩.২ শতাংশ। যা ২০০৯ সালের পর সর্বনিম্ন। সংস্থা জানায়, ২০২০ সালেও প্রবৃদ্ধি থাকবে ৩.৫ শতাংশ। ব্যাংক অব আমেরিকা আগামী ১২ মাসের মধ্যে একটি বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধসহ বেশ কিছু কারণে বিশ্বজুড়ে শিল্পোৎপাদন কমেছে, করপোরেট আস্থা কমেছে, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিও কয়েক বছরে সর্বনিম্ন। দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ চীনের প্রবৃদ্ধিও প্রায় এক দশকে সর্বনিম্নে নেমেছে। এর মধ্যে চীনের ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা বিশ্ব অর্থনীতিতে নিম্নমুখী ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে জানিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান মরগান স্ট্যানলে, যা পুরো রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। বিনিয়োগ ব্যাংক মরগান স্ট্যানলে জানায়, যদি যুক্তরাষ্ট্র চীনের সব আমদানি পণ্যে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে এবং চীন পাল্টা ব্যবস্থা নেয় তবে আগামী তিন প্রান্তিকের মধ্যেই মন্দায় পড়বে যুক্তরাষ্ট্র। গোল্ডম্যান স্যাকস গ্রুপ জানায়, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ একটি মন্দার আশঙ্কা তৈরি করছে। তা ছাড়া আগামী ২০২০ সালের আগে দুই দেশের বাণিজ্য বিরোধ নিরসনে কোনো চুক্তি হবে বলে আশা করা যায় না। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি এসেছে লক্ষ্যমাত্রার নিচে ২.১ শতাংশ। যেখানে প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩.১ শতাংশ।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর বিজনেস ইকোনমিস্ট (এনএবিই) এক জরিপে আগামী দুই বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র মন্দায় পড়তে যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদ। এনএবিই প্রেসিডেন্ট কনস্ট্যান্স হান্টার বলেন, বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদ মনে করছেন মন্দা ২০২০ সালে বা ২০২১ সালে শুরু হবে। এর মধ্যে ৩৮ শতাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, আগামী বছর আমেরিকান প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হবে, যদিও ৩৪ শতাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করছেন ২০২১ সালের আগে নয়।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ জার্মানিকে বলা হয় ইউরোজোনের প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বান্ডেজ ব্যাংক গত সোমবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে জার্মানি মন্দায় পড়তে পারে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হয়েছে ০.১ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির মতে, তৃতীয় প্রান্তিকেও প্রবৃদ্ধি কিছুটা সংকুচিত হতে পারে। বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধে রপ্তানি কমেছে জার্মানির। এতে করে পুরো ইউরোপের অর্থনীতিই কৌশলগতভাবে মন্দায় পড়তে যাচ্ছে। এ অবস্থায় মন্দা এড়াতে বার্লিনকে নগদ প্রণোদনা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের প্রধান ইউরোপীয় অর্থনীতিবিদ অ্যান্দ্রো কেনিংহাম বলেন, জার্মানির অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে মন্দার দিকে যাচ্ছে।
ব্রেক্সিট সংকটে ধুঁকছে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি। এপ্রিল থেকে জুন প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি ০.২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, যা ২০১২ সালের পর এই প্রথম। দেশটির অর্থনীতি তৃতীয় প্রান্তিকে ঘুরে দাঁড়াবে এমন আশা করা হলেও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যদি একটি চুক্তি ছাড়া ইইউ থেকে বেরিয়ে আসেন তবে আসন্ন মন্দা এড়ানো সম্ভব হবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।