গোপাল হালদার, পটুয়াখালী: পটুয়াখালী সদর উপজেলার কালিকাপুর এলাকায় ব্যাটারি পুনর্ব্যবহার দোকানের কর্মরত ও এর আশপাশ থেকে স্থানীয় শিশুদের রক্তের নমুনা এবং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পঁচা কোরালিয়া এলাকার মোট ২৪৮ শিশুদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে আন্তজাতিক দাতা সংস্থা ইউনিসেফের সদস্যরা।
রক্তগুলো গবেষণার জন্য বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়। এতে ৪৬ শতাংশ শিশুর শরীরে মাত্রাতিরিক্ত বিষাক্ত সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
এর মধ্যে ২৪ মাস থেকে ৪৮ মাস বয়সী শিশুদের শরীরে শতভাগ সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
গবেষকরা জানান, সীসার নীরব বিষক্রিয়া শিশুদের স্বাস্থ্য ও বিকাশের ওপর মারাত্মক ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে এবং এর কারণে তাদের জীবনের সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহারের সক্ষমতা প্রভাবিত হয়। এই শক্তিশালী নিউরোটক্সিন বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি বয়ে আনে, কারণ এটি তাদের মস্তিষ্ক পুরোপুরি বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাওয়ার আগেই এর ক্ষতি করে, যার ফলস্বরূপ তাদেরকে সারা জীবনের জন্য স্নায়ুবিক, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়।
তারা আরও জানান, সীসা একটি নীরব ঘাতক। বিষাক্ত ধাতু সীসা বেশ সহজলভ্য এবং হাজার বছর ধরে বিভিন্নভাবে ব্যবহারের ফলে এটি পরিবেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন উপায়ে মানুষ সীসার সংস্পর্শে আসে। ধনী ব্যক্তিরা চিকিৎসা করাতে পারলেও অনেক সময় গরীবরা করাতে পারে না। এতে অনেকের আর্থিক সামর্থ্যের কথাও মাথায় রাখতে হয়।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক গাইনিকোলজিস্ট ডাক্তার জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘সীসার নীরব বিষক্রিয়া শিশুদের স্বাস্থ্য ও বিকাশের ওপর মারাত্মক ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। সীসা গর্ভাবস্থার জন্য নিরাপদ নয়। এটি গর্ভের ভ্রূণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গর্ভাবস্থায় সীসার উচ্চ মাত্রা গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভপাত এবং মৃত শিশুর জন্মদানের মতো ব্যাপার ঘটাতে পারে।’
বরিশাল ইউনিসেফ অফিসের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আহসানুল ইসলাম জানান, ‘পটুয়াখালীর ৪৬ শতাংশ শিশুদের শরীরে মাত্রাতিরিক্ত সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। দেশের চার জেলায় শিশুদের রক্তে সীসার সক্রিয় উপস্থিতি মিলছে। রক্তে সীসার উপস্থিতি থাকা শিশুদের মধ্যে ৬৫ শতাংশের রক্তে এর পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত, যারা উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে।’
পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. এস এম কবির হাসান জানান, ‘পটুয়াখালীতে মানবদেহে সীসা দূষণের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। সীসা দূষণের উৎস যেমন হলুদ, পেট্রোল, রং, সীসা, ব্যাটারির অ্যাসিড ইত্যাদির ওপর নিয়ন্ত্রণ করে সিসা দূষণ কমাতে হবে। পৃথক গবেষণার মাধ্যমে সীসা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
সম্প্রতি ‘শিশুদের জন্য সুস্থ জীবন বিনির্মাণে সিসা দূষণমুক্ত পরিবেশ আমাদের অঙ্গীকার’ স্লোগানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের সহযোগিতায় কর্মশালার আয়োজন করে সিভিল সার্জন। এতে এই তথ্য উঠে আসে।
#
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।