জুমবাংলা ডেস্ক : বাগেরহাটে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে একাধিক বিয়ে এবং অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার মামলায় মারুফ শেখ (৪০) নামে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
প্রতারণার শিকার শরণখোলা উপজেলার জেসমিন আক্তার নামে এক নারীর মামলায় বৃহস্পতিবার (০৮ জুলাই) রাতে খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার দামুদার এলাকা থেকে মারুফকে গ্রেপ্তার করে শরণখোলা থানা পুলিশ।
প্রতারণার মাধ্যমে সে অন্তত পাঁচটি বিয়ে করেছে। শুক্রবার (০৯ জুলাই) দুপুরে বাগেরহাটের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সহকারী পুলিশ সুপার সোনিয়া পারভীন এসব তথ্য জানান।
গ্রেফতার মারুফ বাগেরহাট সদর উপজেলার শ্রী-ঘাট এলাকার রমজান আরী শেখের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) এ সৈনিক পদে কর্মরত ছিল। ২০১৪ সালে তিনি চাকরিচ্যুত হন।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোনিয়া পারভীন বলেন, শরণখোলা উপজেলার তাফালবাড়ি এলাকার সুলতান জোয়াদ্দারের মেয়ে জেসমিন আক্তার ১৫ জুন মারুফ শেখের বিরুদ্ধে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে বিয়ে এবং পরবর্তীতে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়ায় আমরা মারুফকে গ্রেপ্তার করেছি।
তিনি আরও বলেন, মামলার তদন্ত ও বিভিন্ন লোকের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা মারুফের পাঁচটি বিয়ের সত্যতা পেয়েছি। সে ২০০৪ সালে খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার দামুদার এলাকার সালাম সরদারের মেয়ে নূপুরকে বিয়ে করেন। ২০১৮ সালে শরণখোলা উপজেলার তাফালবাড়ি এলাকার সোবহানের মেয়ে সালমা বেগমকে, ২০১৯ সালে একই উপজেলার সোনাতলা এলাকার মনা মল্লিকের মেয়ে বৃষ্টি আক্তারকে এবং ২০২০ সালে শরণখোলা এলাকার কবির হাওলাদারের মেয়ে কারিমা বেগমকে বিয়ে করেন। সর্বশেষ মামলার বাদী জেসমিনকে বিয়ে করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে।
প্রত্যেক শ্বশুর বাড়ি থেকে মারুফ ক্রমান্বয়ে ৫, ৮, ৯, ১৩ ও ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আমাদের কাছে এসব অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা মারুফ শেখকে আদালতে সোপর্দ করেছি। মারুফের প্রতারণার সাথে জড়িত অন্যদেরও আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে প্রতারক মারুফ শেখের গ্রেফতারের খবর পেয়ে শুক্রবার (০৯ জুলাই) সকালে প্রতারণার শিকার অন্তত পাঁচটি পরিবারের ২০ থেকে ২৫ জন নারী-পুরুষ থানার সামনে উপস্থিত হন।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমানকে মারুফের প্রতারণার বিষয়টি অবহিত করেন। প্রতারণার মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি জানান।
শরণখোলা উপজেলার বকুলতলা গ্রামের নাসির উদ্দিন বলেন, কখনও সেনা বাহিনীর মেজর, কখনও গোয়েন্দা কর্মকর্তা, কখনও র্যাবের কর্মকর্তা অথবা নিজেকে ক্ষমতাশীল ব্যক্তি হিসেবে প্রকাশ করে বিয়ে করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ছিল মারুফ শেখের কাজ। শুধু জেসমিন নয়, অনেক মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট করেছে মারুফ শেখ।
মামলার বাদী প্রতারণার শিকার জেসমিন বেগম বলেন, স্থানীয় ঘটক আইয়ুব আলী হাওলাদারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে বাবার সম্মতিতে বাগেরহাটের একটি কাজী অফিসে বসে তিন লাখ টাকা কাবিনে মারুফ শেখ আমাকে বিয়ে করেন। পরবর্তী নানা অজুহাতে আমাদের কাছ থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেয়।
এক পর্যায়ে আমি জানতে পারি সে আরও অনেক নারীর সাথে এ ধরনের প্রতারণা করেছেন। অনেক চেষ্টা করে তার মূল ঠিকানা বের করে শরণখোলা থানায় মামলা দায়ের করি। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করায় আমি খুবই খুশি। মারুফের কঠোর বিচারের সাথে সাথে প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া টাকা ফেরত চান এই নারী।
জেসমিনের বাবা সুলতান জোয়াদ্দার বলেন, ঘটক আইয়ুব আলী হাওলাদারের মিষ্টি কথা এবং মারুফের দেওয়া মৌখিক পরিচয়ে খুশি হয়ে মেয়ে বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে যে এত বড় প্রতারক তা আমরা বুঝতে পারিনি। এলাকায় আরও যে বিয়ে গুলো মারুফ করেছেন তাও ঘটক আবুলের সহায়তায় করেছেন বলেও দাবি করেন সুলতান জোয়াদ্দার। প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া টাকার ভাগ পেতেন ঘটক আইয়ুব আলী হাওলাদার এমন অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।