বিনোদন ডেস্ক : গত কয়েকদিন ধরে টক অব দ্য টাউন শাকিব-অপু-বুবলীর প্রসঙ্গ। আজ শুক্রবার তার কিছুটা সমাধান মিলল। বুবলীর সন্তানের বাবা শাকিব খান বলে দুজনেই ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে স্বীকার করেছেন। তবে তাদের বিয়ে কোথায় হয়েছে, কীভাবে হয়েছে? সে বিষয়টি এখনও পরিস্কার করেননি তারা। এ নিয়েও চলছে নানান সমলোচনা। শুধু শাকিব-অপু কিংবা বুবলী নয় চলচিত্র পাড়ায় বিয়ে নিয়ে লুকোচুরির ঘটনা এটাই প্রথম নয়।
কেন বিয়ে নিয়ে তারকাদের এমন গোপনীয়তা! অনেক তারকার বেলায় দেখা যায়, তাঁরা প্রাণপণে চেষ্টা করেন বিয়ের খবর লুকাতে। বিয়ে করে চুপিচুপি সংসার করছেন, অথচ জিজ্ঞেস করলেই বলে দেন, ‘আমরা তো এখনো বিয়ে করিনি!’ কেউ কেউ চুটিয়ে প্রেম করলেও বলেন, ‘আমরা দুজন শুধুই বন্ধু।’ এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটে।
জেনে নেয়া যাক …
ওমর সানী-মৌসুমী: মাদ্রাজ থেকে খবর এল মৌসুমী অন্তঃসত্ত্বা। গোটা চলচ্চিত্রশিল্পের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। কারণ তখন তিনি অসংখ্য সিনেমার নায়িকা। মৌসুমীর বাবা সাংবাদিকদের ডেকে অকপটে স্বীকার করলেন, ওমর সানীর সঙ্গে তাঁর মেয়ের অনেক আগেই বিয়ে হয়েছে। প্রযোজকদের আর্থিক ক্ষতির কথা চিন্তা করে কথাটি গোপন রেখেছিলেন। ১৯৯৫ সালে গোপনে বিয়ে করলেও ১৯৯৬ সালের আগস্টে তাঁরা বিয়ের অনুষ্ঠান করেন শেরাটনে।
শাকিল খান-পপি: ২০০০ সালে শাকিল খান প্রথম দাবি করেন পপিকে বিয়ে করেছেন। পপির মায়ের কারণে সেই সংসার টেকেনি বলেও দাবি করেন এই নায়ক। ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। যদিও এই বিয়ের কথা কখনো স্বীকার করেননি পপি। পপিকে ঘিরে গুঞ্জন এখনো থেমে নেই। শোনা যাচ্ছে, এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে সন্তানের জননীও হয়েছেন।
অপু বিশ্বাস-শাকিব খান: বিয়ের ৯ বছর পর ২০১৭ সালের এপ্রিলে নিজের বিয়ের খবরটি টেলিভিশন লাইভে এসে জানান অপু বিশ্বাস। শাকিব খানের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে অকপটে বলেন। এও জানান, তাঁদের ছয় মাস বয়সী এক পুত্রসন্তান রয়েছে।
ইমন: ২০০৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি চিত্রনায়ক ইমন বিয়ে করেন আয়েশাকে। সাত বছর পর স্ত্রী-সন্তানের কথা প্রকাশ করেন ইমন। তত দিনে তাঁর দুই সন্তান সামিন ও শায়ান স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে।
সাইমন: বিয়ের ছয় বছর পার করে স্ত্রী ও সন্তানদের কথা জানান চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক। ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর একেবারে ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ে করেছেন সাইমন।
পরীমণি: ছোট পর্দার নির্মাতা কামরুজ্জামান রনিকে গোপনে বিয়ে করেছিলেন পরীমণি। বিয়ের ৮ দিন পর সেই খবর জানিয়েছিলেন তাঁরা। সম্পর্ক অবশ্য বেশি দিন টেকেনি। পরী ও শরীফুল রাজ গত বছর ১৭ অক্টোবর চুপিচুপি বিয়ে করেছেন। ঘোষণা দিয়েছেন এ বছরের ১০ জানুয়ারি।
গোপনে বিয়ে করেছেন এমন তালিকায় আরও আছেন মম, এস আই টুটুল, শবনম ফারিয়া, তানিয়া বৃষ্টি প্রমুখ। আজকের পত্রিকা, মীর রাকিব হাসান
বিয়ে লুকানোর কারণ কী
অভিনয়শিল্পী আবুল হায়াত, লায়লা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, মনোচিকিৎসক হেলাল উদ্দিন আহমেদের মতামতে খোঁজার চেষ্টা হয়েছে বিয়ে লুকানোর কারণ।
বেশির ভাগ মনে করছেন, দর্শক-ভক্তরা প্রিয় তারকাকে নিজের আপনজন বলে মনে করে আনন্দ পান। বিয়ের মাধ্যমে যেহেতু প্রিয় তারকা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন, সে ক্ষেত্রে ভক্তের মনে হতে পারে যে তিনি প্রিয় তারকার মালিকানা হারিয়েছেন। অন্যদিকে তারকারাও মনে করেন, বিয়ের খবর প্রকাশের মাধ্যমে তিনি ভক্তদের কাছে তাঁর আগের যে আবেদন, সেটি হারিয়ে ফেলবেন। বেশির ভাগ তারকা নার্সিসিজমে (আত্মপ্রেমে) ভোগেন। সুচিত্রা সেন শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর চেহারা পরিবার ছাড়া কাউকে দেখাতে চাননি।
তারকারা এমন ভাবমূর্তি ধরে রাখতে চান, যার মাধ্যমে তিনি ভক্তদের মনে আজীবন স্বপ্নের নায়ক বা নায়িকা হয়ে থাকবেন। অনেক তারকার ধারণা, শুধু বিয়ের কারণে তাঁদের প্রতি ভক্ত কিংবা সাধারণ দর্শকের আকর্ষণ ও আগ্রহ কমে যাবে।বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখার কারণ প্রসঙ্গে সাইমন বলেন, ‘আমাদের দেশে সবার ধারণা, বিয়ের খবর ভক্ত ও দর্শকেরা জানতে পারলে জনপ্রিয়তা কমে যাবে। এটা ভেবে পরিবার থেকে আমার স্ত্রীসহ অন্যরা বিয়ের বিষয়টি সামনে আনতে চাইছিলেন না। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতায় বলতে হচ্ছে, এটা ভুল ধারণা। দর্শক ভালো গল্প আর অভিনয়ের সিনেমা দেখতে পারলে নায়ক-নায়িকা বিবাহিত নাকি অবিবাহিত, সেটা তাঁদের কাছে ম্যাটার করে না। আমি মনে করি, বিয়ে অনেক বড় একটা আশীর্বাদ।’
ইমন বলেন, ‘ওই সময়টায় আমি সবে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেছি। চলচ্চিত্রের কিছু মানুষ আমাকে বিয়ের খবর প্রকাশ না করার পরামর্শ দেন। ক্যারিয়ারের ক্ষতি হতে পারে, এমন আশঙ্কায় আমিও বিয়ের খবর প্রকাশ করিনি।’
বিয়ে লুকানো জরুরি কি না
নায়করাজ রাজ্জাক থেকে শুরু করে সালমান শাহসহ একটা সময় বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনেক তারকাই ছিলেন বিবাহিত এবং এতে তাঁদের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। হলিউড-বলিউডের দিকে তাকালেও একই দৃশ্যপট চোখে পড়ে। জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপ সেই ১৯৭৮ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসার পরও জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকেছেন। ভক্তদের ভালোবাসাসহ তিনি তাঁর ঝোলায় পুরেছেন একাডেমি, এমি, গোল্ডেন গ্লোব, কানসহ নানা চলচ্চিত্র পুরস্কার। দেশের ছোট পর্দা থেকে উঠে আসা তারকাদের ক্ষেত্রেও বিয়ে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এই তালিকায় আছেন তিশা, চঞ্চল, জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিমের মতো তারকা অভিনেতারা। এই উদাহরণগুলোই বলে দেয় বৈবাহিক অবস্থাই জনপ্রিয়তার একমাত্র মাপকাঠি নয়, বরং নিজেকে শিল্পী হিসেবে তৈরি ও উপস্থাপন করাটাই সবচেয়ে জরুরি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।