Close Menu
Bangla news
  • Home
  • Bangladesh
  • Business
  • International
  • Entertainment
  • Sports
  • বাংলা
Facebook X (Twitter) Instagram
Bangla news
  • Home
  • Bangladesh
  • Business
  • International
  • Entertainment
  • Sports
  • বাংলা
Bangla news
Home বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দিন স্মরণে
মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দিন স্মরণে

জুমবাংলা নিউজ ডেস্কAugust 8, 2021Updated:August 8, 202111 Mins Read
Advertisement

ড. আলা উদ্দিন: বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দিন – যিনি অনেকের কাছে ‘গাজী স্যার’ বলে পরিচিত, আজ তাঁর দেহ চট্টগ্রাম ছেড়ে নোয়াখালীর সোলাইমুড়িতে। গতকাল রাত ৮টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত গাজী স্যার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর সাথে আমার সর্বশেষ কথা হয় ২৬ জুলাই ২০২১। দুই দিন পর জানা যায় তিনি করোনাক্রান্ত। তার সপ্তাহ খানেক আগে তিনি চট্টগ্রামের সিআরবি’র সবুজ প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলনে সিআরবিতে সমাবেশ করেছিলেন, বক্তৃতা দিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে সেই সমাবেশ থেকেই তিনি করোনাক্রান্ত হন।

করোনাক্রান্ত হলেও তাঁর ধারণা ছিল যেহেতু টিকার দুটি ডোজ নেওয়া আছে, অসুবিধা হবে না। কিন্তু তাঁর ছেলে-মেয়ের জোরাজুরিতে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়, যেহেতু তারা দুই জনই ঢাকায় থাকে। তাছাড়া তিনি এক থাকেন, তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন ৭ বছর কয়েক আগে। আর চট্টগ্রামের চিকিৎসার মান নিন্মমানের। তাঁর মনোবল ও ফেসবুকে সাহসী কথায় এবং জীবনভর তাঁর সংগ্রামের কারণে সবার আশা ছিল গাজীকে কাবু করার মতো করোনা অতটা শক্তিশালী না। উনি আবার ৭১-এর মতো গাজী হয়ে সবার মাঝে ফিরে আসবেন। তিনিও আশাবাদী ছিলেন, যা তার ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে জানা যায়। আমৃত্যু দৃঢ় মনোবল নিয়ে বেঁচে ছিলেন সদা সাদা মনের অধিকারী গাজী সালেহ উদ্দিন। কিন্তু, না, তিনি আর গাজী হয়ে ফিরে আসতে পারলেন না, শহীদ হয়ে ফিরে গেলেন নোয়াখালীর বুকে।

গতকাল (৭/৮/২০২১, সকাল ১১টা) তাঁর জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী সালেহ উদ্দিনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শোকবার্তা পাঠিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসিসহ অসংখ গুণগ্রাহী তাঁকে হারানোর ব্যাথায় কাতর, হতাশ। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও তিনি অনেক সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে (যেমন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, খেলাঘর, ইত্যাদি) সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। সবকিছু ছেড়ে তিনি চিরতরে নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলেন, যেখানে তাঁর পিত-মাতা ও তাঁর সহধর্মিনীর কবর। তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। আর কোনও দিন কারও কোন বিপদে, আন্দোলনে তাঁকে সশরীরে পাওয়া যাবে না। তিনি আর নেই! He is no more!

তাঁর সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ ১৯৯৭ সালে। আমি নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১ম ব্যাচের ছাত্র। তখন আমাদের বিভাগের (নতুন বিধায়) কোনও জায়গা ছিল না। প্রশাসন থেকে আমাদের জন্য স্থান বরাদ্দ করা হয়েছিল ল’ ফ্যাকাল্টির পরিত্যাক্ত ক্যান্টিন। নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রয়াত প্রফেসর আহমেদ ফজলে হাসান চৌধুরী জায়গাটা পছন্দ করলেন না। গাজী স্যার তখন তৎকালীন ভিসি আব্দুল মান্নান স্যারের সাথে আলোচনা করে জাদুঘরের ২য় তলায় নৃবিজ্ঞান বিভাগের জন্য জায়গা ঠিক করলেন। সেখানেই আমাদের প্রথম ক্লাস নেওয়া শুরু, সেটাও গাজী স্যারের মাধ্যমে। গাজী স্যার আমাদের Introduction to Sociology (১০৩ নং কোর্স) কোর্সটি পড়াতেন। এভাবে আরো ২/৩ বছর তিনি এই কোর্সটি পড়িয়েছিলেন। শুরু থেকে নৃবিজ্ঞান বিভাগের যে কোনও বিপদে-আপদে বা সঙ্কটে তিনি নৃবিজ্ঞান বিভাগের পাশে থাকতেন। সেজন্য তাকে অনেক বেগ/কষ্ট পেতে হয়েছিল। তিনি প্রক্টর থাকাকালীন সময়ে আমরা তৎকালীন শিক্ষার্থীরা একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনও করেছিলাম। তবু তিনি সব সময় আমাদের মাঝে ছিলেন, আমাদের সাথে ছিলেন, শিক্ষক হিসেবে, বন্ধু হিসেবে এবং অভিভাবক হিসেবে।

তিনি শিক্ষক ছিলেন। শ্রেণিকক্ষের বাইরে তাঁর পরিচয় ছিল আরও অনেক ব্যাপক। নিজ বিভাগের বাইরেও অন্যান্য অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছেও তিনি অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ছিলেন, তাঁর পরোপকারী ও বন্ধুবৎসল বৈশিষ্ট্যের জন্য। সবার বিপদে যেমনি তাঁকে পাওয়া যেত, জাতির যে কোনও সঙ্কটময় মুহূর্তে মানবতাবাদী প্রগতিশীল প্রাণ গাজী স্যার সদা প্রস্তুত ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন, যে যুদ্ধে তাঁর পিত শহীদ হন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি সোচ্চার ছিলেন। তিনি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির চট্টগ্রামের সভাপতি ছিলেন; খেলাঘরের কর্ণধার ছিলেন।

২০০১ থেকে ২০০৭ সময়কালে আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে, তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়সহ চট্টগ্রাম নগরের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনেন সবসময় সোচ্চার ছিলেন। সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ-বাম প্যানেলের (হলুদ দল) অবস্থা শোচনীয় ছিল (সংখ্যার বিবেচনায়)। তাঁকে হলুদ দল থেকে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী করা হলো, তিনি ভালোভাবে পাশ করে আসলেন। ২০০৬-এর দিকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন নির্বাচনের জন্য হলুদ দলের উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছিলো না। নিশ্চিত পরাজয় জেনে তাঁকে প্রার্থী করা হলে। তিনিও তা মেনে নিলেন। (আমি তখন গ্রুপের স্ট্যান্ডিং কমিটির মেম্বার। উনাকে যখন মনোনয়ন দেয়া হয়, ভাবা হয়েছিল নিশ্চিত হারের জন্য গাজীকে প্রার্থী করা হলো। যেহেতু আর উপযুক্ত প্রার্থী তখন ছিলেন না, বা পরাজয়ের কারণে আগ্রহী ছিলেন না।) কিন্তু সবাইকে তাকে লাগিয়ে গাজী স্যার প্রায় দ্বিগুণ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হলেন। পুরস্কারস্বরূপ পরের বারো তাঁকে আবার মনোনয়ন দেয়া হলো, তিনি আবারো বিজয়ী হলেন। তিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পছন্দ করতেন, এবং তাঁর নীতি, সততা ও স্পষ্টবাদিতার গুণে সকল চ্যালেঞ্জে জয়ী হতেন।

শুধু বাহিরের অঙ্গনে নয়, পরিবারের অঙ্গনেও তিনি সমান জনপ্রিয়। তিনি সফল পিতা। তার দুই সন্তান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করা। তাঁর ছেলে উপসচিব বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। মেয়েও বেসরকারি সংস্থার সাথে জড়িত। তার স্ত্রী নাসিরাবাদ মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ অবস্থায় অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের অল্প কয়েকদিন আগেই ২০১৪ সালে হৃদরোগে মারা যান। পরিবারের সকলের কাছে তিনি অত্যন্ত বন্ধু বৎসল ছিলেন। তাঁর গাড়ির ড্রাইভার, কাজের মানুষ সবাই তার কাছে খুব প্রিয় ছিল। তাঁর কাজের মানুষ আব্দুল ছিলেন তাঁর ফেইসবুক স্টেটাস ব্যাকগ্রাউন্ড ক্যারেক্টার, যা তাঁর নিজস্ব সৃষ্ট। তাঁর মনের কথা আব্দুলকে দিয়ে বলতেন। আমরা সেই উপভোগ্য ও শিক্ষণীয় সমাজ বাস্তবতার চিত্র থেকে বঞ্চিত হয়ে গেলাম।

এখানে একটি ঘটনার উল্লেখ না করলেই নয়: তাঁর স্ত্রী যখন মারা যান তখন তিনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফিরছিলেন। ট্রেনের মধ্যে থাকাকালীন সময়ে স্ত্রীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে দিগ্বিদিক হয়ে উঠেছিলেন। কিছুই করার ছিল না। ট্রেন চট্টগ্রাম পৌঁছার পর তিনি বাসায় ফিরলেন। আমি স্বচক্ষে দেখলাম, পর্বতসম গাজী স্যার তাঁর মৃত স্ত্রীর পাশে বসে শিশুর মতো প্রায় ১ ঘন্টা ধরে কাঁদলেন। আজ তিনি তাঁর প্রিয়তম স্ত্রীর কাছে চলে গেলেন। আমার সাথে তাঁর বয়সের ব্যবধান অন্তত ৩০ বছর, তবু তিনি বন্ধুর মতোই ছিলেন। কোথাও পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় বলতেন, আমার ছেলের বন্ধু, আমারও বন্ধু (উনার ছেলে তানভীর আমার ব্যাচমেট বন্ধু)।

পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণের বিশেষ ক্ষমতা ছিল তাঁর। নিজে খুব সাহসী ছিলেন, অন্যদেরও সাহস জোগাতে পারতেন। ২০০৪ সালে আমার এক সহকর্মীসহ আমাকে অস্থায়ী রেখে স্থায়ী পদে নতুন শিক্ষক নিয়ে তৎকালীন বিএনপি-জামাত প্রশাসন আমাদের জুনিয়র করে দিয়েছিলো, অস্থায়ী করে রেখেছিলো। সেই সময়ে গাজী স্যার শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারি ছিলেন। প্রসাশনের সাথে অনেক চেষ্টা করেছিলেন বিষয়টি সুরাহা করার জন্য। আমাকে সব সময় সাহস দিতেন এবং বলতেন, `একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে । কাজ করে যাও , কেউ ঠেকাতে পারবে না।’

এর মধ্যে ২০০৫ সালে একটি নির্বাচনে আমাদের গ্রুপের (হলুদ দলের) প্রার্থীর সঙ্কট দেখা দেয়, প্রভাষক পদে একাডেমিক কাউন্সিলে একজন প্রার্থী কম হয়ে যায়। গাজী স্যারসহ গ্রুপ থেকে আমাকে নির্বাচন করার জন্য বলা হলো। কিন্তু জোর দিয়ে কিছু বলতেও পারছে না, কারণ আমি অস্থায়ী ছিলাম, এবং আমার সমস্যাটির সমাধান হয় নি, দলও তেমন কিছু করতে পারেনি। তখন গ্রুপের আহ্বায়ক ছিলেন প্রফেসর হামিদ বানু। মইনুল স্যারের কাছ থেকে প্রস্তাব শুনে পরদিন সকালে প্রফেসর হামিদ বানু ম্যাডামের সাথে তাঁর বাসায় দেখা করলাম। উনি বললেন, ভয় পাচ্ছ?' এটা শুনে সাথে সাথে বললাম ম্যাডাম নির্বাচন করবো। ভয় শব্দটা শুনে মনে হলো এবার জয় করতেই হবে। তারপর উনার গাড়িতে করে মইনুল স্যারের (তিনি তখন সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন) অফিসে গিয়ে ফর্ম পূরণ করে জমা দেই। নির্বাচনে দাঁড়ানোতে খুশি হয়ে গাজী স্যার বলেছিলেন, এবার তোমাকে ভয় পাবে’। আমাকে কেউ ভয় না পেলেও, তারপর থেকে আমি আর কাউকে ভয় পাই না।

বলাবাহুল্য, সেবার ৫টি পদে নির্বাচন হয়েছিল, আমাদের গ্রুপ থেকে কেবল আমি-ই জয়ী হয়েছিলাম। তারপর ২০০৬/৭ পর্যন্ত আরো ৩/৪টি নির্বাচন করতে হয়েছিল আমাকে। আমার ক্যাটেগরিতে প্রার্থী না পেলে গ্রুপ থেকে আমাকে নির্বাচন করতে হতো, কারণ তখন আমি দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির কনিষ্টতম সদস্য ছিলাম; আহ্বায়ক ছিলেন প্রফেসর ড. অনুপম সেন।

গাজী স্যার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারি নির্বাচিত পর সারা দেশের বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের সেক্রেটারিও হন। সেই সময় সারা দেশ সংগ্রামে উত্তাল। ২০০৪ সালের ২১ আগষ্টে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা এবং ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকান্ড ইত্যাদি ঘটনার তীব্র প্রদিবাদে তিনি সর্বদা শিরোভাগে ছিলেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যেতে হয়েছিল বেশ কয়েকবার। উঠতি প্রতিবাদী হিসেবে আমিও ২/১ বার উনার বহরে ছিলাম।

প্রয়াত অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যার প্রতিবাদ সমাবেশে, ঢাকা শহীদ মিনারে অংশগ্রহণ করেছিলাম আমরা। সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত ভিসি ড. আবু ইউসুফ স্যার, সমাজতত্ত্বের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক হাসানুজ্জামান স্যার, ইসলামের ইতিহাসের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. কিবরিয়া স্যার, মাইক্রোবায়োলোজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক নুরুল আনোয়ার স্যার (বর্তমানে পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের ভিসি), সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন আরিফ (বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যাপনারত), হিসাববিজ্ঞানের রেজাউল করিম (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক), লোকপ্রশাসনের শিক্ষক হোসাইন কবির স্যার (তিনি সমাবেশে থাকতে পারেন নি, সিন্ডিকেট সভায় যোগ দেয়ার জন্য ইউসুফ স্যারের পরামর্শে তাকে দ্রুত চট্টগ্রামে ফিরে আসতে হয়েছিল), বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি আ.আ.ম.স. আরেফিন সিদ্দিক স্যার, বর্তমান ভিসি প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামান স্যার, প্রমুখ।

শহীদ মিনাদের সমাবেশের পর গাজী স্যারের নেতৃত্বে আমরা প্রয়াত অর্থমন্ত্রী কিবরিয়ার বাসায় গিয়ে পরিবারের সাথে দেখা করেছিলাম (তখন কিবরিয়ার আত্মীয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন প্রফেসর সালাহ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন (পরবর্তীতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি)। তারপর আমরা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম তাঁর ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে। শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের বিষয়ে গাজী স্যার যোগাযোগ করেছিলেন বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদের সাথে। আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কথা হয়েছিল তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে, দেখা হয়েছিল তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিলের সাথে।

কিছু জানা এবং তা পত্রিকায় কলাম বা বই আকারে প্রকাশ করা প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে `প্রামাণ্য দলিল: মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম’। এটি তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন। বইটি লিখতে তাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। অনেক পুরনো নথি, মামলার কাগজ ইত্যাদি জোগাড় করতে হয়েছে। অনেক কষ্ট করে কাজটি করেছিলেন বলে ১৯৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিচার কার্যক্রমে তাঁর বইটিকে বিশেষ স্বীকৃতি দিয়েছে।

‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: আমার আমি’ বইয়ে তিনি তাঁর কর্মস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ঘটনাচক্র সহজ-সরল ভাষায় বর্ণনা করেছেন। তাঁর সর্বশেষ বই ‘শমসের গাজী’ (২০২১) লেখার জন্য সদা উৎসুক ছিলেন। এই বইটি লেখার জন্য/ বিভিন্ন উপাত্ত ও নথি, পুরাতন দলিল ইত্যাদি সংগ্রহ করার জন্য নানা জায়গায় গেছেন, নানা মানুষের সাথে কথা বলেছেন। তিনি কুমিল্লা, ফেনী, সোনাগাজী, এমনকি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় গিয়েও প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করেছেন।

গত ২৬ জুলাই ফেইসবুক স্ট্যাটাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল আন্দোলন নিয়ে তিনি আরেকটি বই প্রকাশ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।  তিনি ফেইসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে এ বিষয়ে তথ্যাদি দিয়ে তাঁকে সহায়তা করার জন্য আহ্বান করেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছিলেন ২০০৭ সালে যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ১/১১ সরকার গ্রেপ্তার করেছিল, গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সচেতন শিক্ষক সমাজের ব্যানারে স্টেটমেন্ট তৈরি করা হয়েছিল। যে স্টেটমেন্টে চারজন স্বাক্ষরকারীর কথা তাঁর স্মরণে ছিল: ইসলামের ইতিহাসের প্রফেসর আবু ইউসুফ, প্রফেসর গোলাম কিবরিয়া ভূঁইয়া, তিনি (গাজী সালেহ উদ্দিন) এবং আমি (নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর আলা উদ্দিন)। এই স্টেটমেন্টের কারণে তাঁকে এবং আবু ইউসুফ স্যারকে RAB অফিস ডেকে পাঠিয়েছিল।

ঘটনাটি আমার মনে আছে। গাজী স্যার তখন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ছিলেন। কোনও কারণে তাঁর অফিসে গেলে তিনি একটা কাগজ এগিয়ে দিয়েছিলেন। পড়লাম এবং দেখলাম ইউসুফ স্যার, কিবরিয়া স্যার ও গাজী স্যারের স্বাক্ষর। সাথে সাথে আমিও স্বাক্ষর করে দিয়েছিলাম। তিনি ২৬ জুলাই ফেইসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন: `আমি বিশ্ববিদ্যালয় স্মৃতিচারণ লিখছি। ইতিপূর্বে ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : আমার আমি’ বইটি লিখেছিলাম সেটা শেষ হয়ে গেছে। তাই দ্বিতীয় সংস্করণ বের হবে। আমি চাই প্রকৃত অর্থে সেই ওয়ান ইলেভেন, জামাতের বিরুদ্ধে যে আন্দোলনগুলি হয়েছিল তাতে যারা জড়িত জড়িত ছিল, নাজেহাল হয়েছে, মৃত্যুবরণ করেছে, সেসব ঘটনা তুলে আনতে চাই।’ সেই বইটি আর কোনদিন প্রকাশ হবে না।

মানুষকে সহায়তা করতে পারলে নিজেও ভীষণ আনন্দ পেতেন। অঞ্চল, দল-মত নির্বিশেষে পরিচিত, অপরিচিত অসংখ্য মানুষ উনার সহযোগিতা পেয়েছেন। উনিও তাদের কাছ থেকে যথাযথ সম্মান পেয়েছেন। আমি ২/৩ বার উনার কাছ থেকে রেকমেণ্ডেশন লেটার নিয়েছিলাম। আমিই লিখে নিয়ে যেতাম, উনি স্বাক্ষর করার আগে হেসে হেসে বলতেন, `খারাপ কিছু লেখনি তো!’ এমন প্রাণচঞ্চল, প্রফুল্য, হাসিখুশি, সদালাপি, সত্যবাদী, নির্লোভ এবং সৎ মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। তাঁর দোষের মধ্যে একটা বড় দোষ ছিল তিনি কোনো অনিয়ম, অন্যায়ের কথা জানতে পারলে তার প্রতিবাদ করতেন, কিংবা সংবাদ মাধ্যম উনার কাছে কিছু জানতে চাইলে মিথ্যা বলতে পারতেন না, বা বিষয়টা লুকাতেন না। এ জন্য অনেক ক্ষমতাবান উনার উপর নারাজ ছিলেন, কিছু কিছু বন্ধু শত্রুতে পরিণত হয়েছিল।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন বছর পূর্বে তিনি অবসর নিয়েছেন। অবসর নেয়ার পর থেকে তিনি তাঁর বাড়ির ছাদে গাছ, মাছ ও পাখির জগৎ তৈরি করেছিলেন। পাশাপাশি স্থানীয় ঝরে পড়া অনাথ শিশুদের জন্য (যারা ফর্মাল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত) প্রতিষ্টা করেছিলেন নৈতিক স্কুল। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি যে ভাতা পেতেন সেটা তিনি এই স্কুলের জন্য ব্যয় করতেন। এই স্কুলের বাচ্চাদের মাঝে তাঁর যে হাসিমাখা মুখচ্ছবি দেখা যেত, তাতেই বুঝা যেত তিনি কত বড় সাদা মনের মানুষ। তাঁর উদ্যোগে অভিভূত হয়ে হানিফ সংকেত সম্প্রতি তার জনপ্রিয় ইত্যাদি অনুষ্ঠানে গাজী স্যারের নৈতিক স্কুলের উপর একটি অনুষ্ঠান করেছিলেন। নৈতিক স্কুল হয়তো অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে, শিক্ষার্থীরা আবার নানা পথে/বিপথে চলে যাবে। তারা যে গাজী হারা !

সারাজীবন গাজী সালেহ উদ্দিন আন্দোলন-সংগ্রাম করে গেছেন। আমি তার কতইবা জানি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বধ্যভূমি রক্ষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন অকুতোভয় বীর। প্রাণের হুমকিকে তোয়াক্কা না করে তিনি আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। পুরোপুরি সাফল্য এখনো আসেনি। তবে আশা করা যায় তাঁর একক উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে এবং তাঁর সমমনাদের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বধ্যভূমি প্রাণে বেঁচে যাবে। তাঁর কথায় : `এই বধ্যভূমি রক্ষার জন্য লড়াই করায় আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। টাকার প্রস্তাব দেয়া হয়, জমির প্রস্তাবও দেয়া হয়। আমরা কোনো স্মৃতিই সংরক্ষণ করতে পারিনি বলে মানুষ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানে না।’

গাজী স্যারের জীবন মানে আন্দোলন ও সংগ্রাম। আমৃত্যু তাই ছিল। তাঁর সর্বশেষ আন্দোলন ছিল সিআরবিকে রক্ষা করা। যে সিআরবিকে রক্ষা করতে গিয়ে গাজী স্যার করোনায় আক্রান্ত হয়ে শহীদ হয়েছেন, সে সিআরবিকে রক্ষা আমাদের সকলের একান্ত কর্তব্য। এই আন্দোলনের সফলতাই হবে তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ সন্মান প্রদর্শন।

ড. আলা উদ্দিন: অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
উদ্দিন গাজী ড. প্রফেসর বীর মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার মুক্তিযোদ্ধা সালেহ স্মরণে
Related Posts
Zahid

জনদুর্ভোগের রাজনীতি: বৃত্ত ভাঙার দায় কার?

December 24, 2025
ক্ষমতাধর আসলে কে

ক্ষমতাধর আসলে কে: কারওয়ান বাজার না সোশ্যাল মিডিয়া?

December 20, 2025

পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড

December 6, 2025
Latest News
Zahid

জনদুর্ভোগের রাজনীতি: বৃত্ত ভাঙার দায় কার?

ক্ষমতাধর আসলে কে

ক্ষমতাধর আসলে কে: কারওয়ান বাজার না সোশ্যাল মিডিয়া?

পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড

রাজনীতি

‘বিএনপি আশ্বাসের রাজনীতিতে নয়, কাজ ও বাস্তবায়নের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে’

সালাহউদ্দিন

শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন: সালাহউদ্দিন আহমদ

বুলু

সমন্বয়ের রাজনীতির ধারক খালেদা জিয়া : বরকত উল্লাহ বুলু

ক্ষমতা

‘জামায়াতের সমর্থন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়া অসম্ভব ছিল আওয়ামী লীগের’

The Digital Revolution

ডিজিটাল বিপ্লব: অনলাইন সাংবাদিকতা ও গণতন্ত্রের লড়াই

ফিনল্যান্ড : সুখকর ছিল না সবচেয়ে সুখী দেশটির স্বাধীনতার ইতিহাস

এ্যানী

‘আমরা সবাই বাংলাদেশি—এটাই বিএনপির রাজনীতি’: এ্যানী

  • About Us
  • Contact Us
  • Career
  • Advertise
  • DMCA
  • Privacy Policy
  • Feed
  • Editorial Team Info
  • Funding Information
  • Ethics Policy
  • Fact-Checking Policy
  • Correction Policy
© 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.