বুধের পরিবেশ জীবনের উপযোগী নয়। তাপমাত্রা ও সৌরবিকিরণের কারণে এ গ্রহে টিকে থাকা অসম্ভব। এর ব্যাসার্ধ ২ হাজার ৪৪০ কিলোমিটার। পৃথিবীর প্রস্থের তিন ভাগের এক ভাগ থেকে একটু বেশি। সূর্য থেকে বুধের গড় দূরত্ব ৫ কোটি ৭ লাখ কিলোমিটার। এই দূরত্ব পাড়ি দিতে আলোর সময় লাগে মাত্র ৩ মিনিট ২ সেকেন্ড।
পৃথিবী নিজ অক্ষের ওপর ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে হেলে আছে। আর বুধ সূর্যের চারপাশে নিজের কক্ষপথের সমতলের সাপেক্ষে হেলে রয়েছে মাত্র ২ ডিগ্রি কোণে। ফলে এটি প্রায় পুরো সোজা হয়ে ঘোরে। তাই অন্য অনেক গ্রহে যেমন ঋতু আছে, তেমন ঋতু দেখা যায় না বুধে।
বুধের কোনো চাঁদ নেই। নেই চারপাশে কোনো রিং বা বলয়। হয়তো সূর্যের অনেক কাছে থাকায় বুধের বলয় তৈরি হতে পারেনি। প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি বছর আগে গঠিত হয়েছিল বুধ। মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে ঘূর্ণমান গ্যাস ও ধূলিকণা একত্র হয়ে সূর্যের কাছাকাছি এই ছোট্ট গ্রহটি তৈরি হয়েছিল। গ্রহটির একটি কেন্দ্র বা কোর রয়েছে। আছে পাথুরে আবরণ আর শক্ত ভূত্বক।
ঘনত্বের দিক দিয়ে পৃথিবীর পরেই আছে বুধ। এটি সৌরজগতের দ্বিতীয় ঘন গ্রহ। কেন্দ্রে আছে একটি ধাতব কোর। এর ব্যাসার্ধ প্রায় ২ হাজার ৭৪ কিলোমিটার, যা গ্রহটির ব্যাসার্ধের প্রায় ৮৫ শতাংশ। প্রমাণ পাওয়া গেছে, এই কোর কঠিন নয়, বরং আংশিক তরল। বুধের বাইরের ত্বককে পৃথিবীর বাইরের ত্বকের (ম্যান্টল ও ক্রাস্ট) সঙ্গে তুলনা করে বলা যায়, পৃথিবীর তুলনায় বুধের ম্যান্টল ও ক্রাস্ট প্রায় ৪০০ কিলোমিটার পুরু।
বুধের পৃষ্ঠ প্রায় পৃথিবীর চাঁদের পৃষ্ঠের মতোই। উল্কা ও ধূমকেতুর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে ক্ষতবিক্ষত। আছে প্রচুর গর্ত। বুধের পৃষ্ঠের বেশির ভাগ আমাদের চোখে ধূসর-বাদামী রঙের দেখায়। গ্রহটির গায়ে উজ্জ্বল রেখাগুলো মূলত ‘ক্রেটার রশ্মি’। গ্রহাণু বা ধূমকেতু বুধের পৃষ্ঠে আঘাত করলে এ রশ্মি তৈরি হয়। এর প্রভাবে নির্গত হয় বিপুল শক্তি। পৃষ্ঠে তৈরি হয় বড় আকারের গর্ত।
বুধের উত্তর মেরুতে বরফ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণ মেরুতে আছে বিশাল গর্ত। স্থায়ীভাবে সেখানে ছায়া থাকে। এই ছায়া অংশে বরফ জমে থাকতে পারে। বুধে বায়ুমণ্ডল নেই। তার আছে একটি পাতলা এক্সোস্ফিয়ার বা বহিঃমণ্ডল। সৌরবায়ু এবং উল্কা পতনের ফলে পৃষ্ঠ থেকে বিস্ফোরিত পরমাণু দিয়ে গঠিত এই বহিঃমণ্ডল। যার বেশিরভাগই অক্সিজেন, সোডিয়াম, হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও পটাসিয়াম দিয়ে গঠিত।
এবার একটা মজার তথ্য দিই। ২০১২ সালে মরোক্কোর এক বাজারে একটি সবুজ উল্কাপিণ্ড বিক্রি হয়। গবেষকরা এর গঠন বিশ্লেষণ করে মনে করেন, এটি বুধ গ্রহ থেকে পৃথিবীতে ছিটকে এসেছে। বুধের উদ্দেশ্যে নাসার পাঠানো দ্বিতীয় মহাকাশযান মেসেঞ্জারের পাঠানো তথ্যের সঙ্গে এ উল্কাপিণ্ডের তথ্য মিলে যায়। ২০০৪ সালের এ নভোযান বুধের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।