বৃদ্ধাশ্রম, শিক্ষকের কান্না ও ভাইরাল ভিডিও
জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকার একটি বৃদ্ধাশ্রমে কাঁদছেন অসুস্থ এক বৃদ্ধ শিক্ষক। এমন একটি ভিডিও সমপ্রতি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভিডিওতে বৃদ্ধকে বলতে শোনা যায়, চাকুরি থেকে অবসর নেওয়ার পর পেনশনের ৪২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজের দুই মেয়ে তাঁকে সড়কে ফেলে রেখে গেছে।
এরপর দীর্ঘ ৬ বছর ধরে রয়েছেন ওই বৃদ্ধাশ্রমে। তিনি নিজেকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা বলে উল্লেখ করেন। ভিডিওটি দেখে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে রাঙ্গুনিয়ায়। নিজেদের টাইমলাইনে অনেকেই এটি শেয়ার করেছেন। তাকে নিজ ঘরে ফিরিয়ে আনার কথাও বলছেন অনেকে। তবে অন্য একটি ভিডিওতে তিনি আর বাড়িতে ফিরতে চান না বলে জানান।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, ঢাকার একটি বৃদ্ধাশ্রমে থাকা ওই বৃদ্ধ নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন মো. সেলিম মাস্টার নামে। কাঁদছেন আর বলছেন তার বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। ১৯৮০ সালে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেয়া শিক্ষক সেলিম মাস্টার দীর্ঘ ৩৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন। বয়স ৭৩ বছর। তাঁর দুই মেয়ে। চাকুরি করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে। তাদের স্বামীরাও সরকারি চাকুরিজীবী। ২০১৪ সালে তার স্ত্রী মারা গেছেন।
২০১৭ সালে চিকিৎসার কথা বলে সেলিম মাস্টারের পেনশনের টাকাসহ প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন তার দুই মেয়ে। এরপর চিকিৎসার কথা বলে ঘর থেকে বের করে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী মাজার গেটের পাশে সড়কে ফেলে রেখে যান তারা। সেখানে অনাহারে পড়ে ছিলেন রুগ্ন শিক্ষক সেলিম মিয়া।
সেখান থেকে অসুস্থ সেলিম মাস্টারকে ২০১৭ সালের ৭ মার্চ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার ‘চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি বৃদ্ধাশ্রমে। এরপর দীর্ঘ ৬ বছর ধরে থাকছেন ওই বৃদ্ধাশ্রমে। শিক্ষকতা জীবনে অনেককেই পড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু কেউই তার খবর নেননি। তাকে নিয়ে অনেক প্রতিবেদন হলো, অনেক ভিডিও ছড়িয়েছে ফেসবুকে। কিন্তু বাবার এই করুণ অবস্থায় একবারের জন্যও দেখতে গেলেন না মেয়েরা। এমনকি সামান্য খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি।
ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেলিম মাস্টারের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ার কোথায় এবং তিনি কোন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন তা জানার কৌতূহল জাগে সকলের মাঝে। এই ব্যাপারে জানতে চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার নামক বৃদ্ধাশ্রমে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, বৃদ্ধের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ইউনিয়নের পারুয়া গ্রামে। পুরো নাম মো. সেলিম মিয়া। বাবার নাম আবু তাহের, মায়ের নাম শান্তি আরা।
বৃদ্ধাশ্রমটির প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দার জানান, অসুস্থতার কারণে তার কথাবার্তা অস্পষ্ট। তাই সঠিকভাবে তার ঠিকানা বলতে পারছেন না। একেক সময় একেক ধরনের ইনফরমেশন দিচ্ছেন। তিনি একবার লিখে জানান, তিনি পারুয়া সাহাব্দিনগর স্কুলের শিক্ষক। আসলে অসুস্থতার কারণে তার এমনটা হচ্ছে বলে ধারণা করছেন মিল্টন। তবে সবাই বার বার জানতে চাওয়ার কারণে তিনি এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন উল্লেখ করে তাকে বিরক্ত না করার অনুরোধ জানান মিল্টন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান একতেহার হোসেন বলেন, ‘প্রাপ্ত ঠিকানা অনুসারে আমি এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি। স্কুলটির পুরাতন খাতাপত্র চেক করেও তার ব্যাপারে জানা যায়নি। তথ্যমন্ত্রী মহোদয়ও তার ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন। কিন্তু কোথাও কেউই তাকে চিনতে পারছেন না।’
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী জানান, সেলিম মাস্টারের বিষয়ে রাঙ্গুনিয়ার মাধ্যমিক কিংবা প্রাথমিক দপ্তরে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। শিক্ষকদের অবসরের পর সার্ভিস বুকসহ সব তথ্য উপজেলা হিসাবরক্ষণ শাখায় থাকে। সেখানেও এই নামে কোনও তথ্য নেই। হয়ত উনার বাড়ি রাঙ্গুনিয়া হলেও উনি সম্ভবত নগরের কোনো বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারেন। তবে এই ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে বৃদ্ধ সেলিম মাস্টারকে নিয়ে ওই বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক মিল্টন সমাদ্দারের করা অন্য একটা ভিডিওতে বৃদ্ধ সেলিম মাস্টার মেয়েদের কাছে যাবেন না বলে জানান। এমনকি তাদের শাস্তি হোক সেটাও চান না তিনি। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত ওখানেই থাকবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।