আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বৃদ্ধ মা-বাবার ভরণপোষণের ভার না নিলে তিন মাস পর্যন্ত জেলও হতে পারে। শহরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের যাতে কষ্টে না থাকতে হয়, তার জন্য নতুন পদক্ষেপ কলকাতা পুলিশের। ২০০৭ সালের পিতা-মাতা ও বয়স্ক নাগরিকগণের ভরণপোষণ এবং কল্যাণমূলক আইনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বৃদ্ধ মা-বাবাকে না দেখলে ছেলেমেয়েদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেবে ট্রাইবুনাল। তার জন্য আবেদনকারীর কোনও কোর্ট ফি বা আইনজীবীর খরচ লাগবে না।
বুধবার এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশের প্রত্যেকটি ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (প্রশাসন)-এর সঙ্গে বৈঠক করেন কমিউনিটি পুলিশ বিভাগের কর্তারা। এসিদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বিশেষ ফর্ম। অসহায় বৃদ্ধ বা বৃদ্ধারা এই ফর্ম ভরতি করলেই নেওয়া হবে পরবর্তী পদক্ষেপ।
পুলিশের কর্তারা জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রেই শহরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা অসহায়। তাঁদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আগেই বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সচেতন করে তোলা হয়েছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। কিন্তু তার পরও দেখা গিয়েছে, শহরের বহু বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকেই দেখে না তাঁদের ছেলেমেয়েরা। বৃদ্ধ বয়সে অত্যন্ত কষ্টে তাঁদের দিন কাটে। অনেক সময়ই প্রায় অভুক্ত অবস্থায় অথবা কখনও চিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে তাঁরা মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়েন। অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পুলিশের কাছে সাহায্য চান। পুলিশ তাঁদের ছেলেমেয়েদের ডেকে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করে।
কিন্তু বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বড় একটি অংশ জানেন না যে, ছেলে বা মেয়েরা তাঁদের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। তারা এই দায়িত্ব না পালন করলে ভাগ্যে জুটতে পারে শাস্তি। ভরণপোষণের আইন অনুযায়ী, বৃদ্ধ মা-বাবাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ত্যাগ করে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখার অপরাধে ছেলেমেয়েদের তিন মাস পর্যন্ত জেল অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় সাজা দিতে পারে ট্রাইবুনাল।
কলকাতার কমিউনিটি পুলিশের দায়িত্বে থাকা অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সুবিধার্থেই তৈরি করা হয়েছে ফর্ম, যা আসলে ভরণ পোষণের আবেদন। সেখানে যেমন থাকছে আবেদনকারীর পরিচয়, তেমনই যাঁরা তাঁদের ভরণ পোষণের ভার নেবেন, অর্থাৎ তাঁর ছেলে ও মেয়েদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে বলা হয়েছে।
সঙ্গে জানাতে হবে আবেদনকারীর আয় ও তাঁর সম্পত্তির বিস্তারিত তথ্য। তিনি অন্য কোনও আদালতে আবেদন করেছেন কি না, এই ধরনের তথ্যও দিতে হবে আবেদনে। এই বিষয়ে একটি এনজিও-ও উদ্যোগ নিয়েছে। ফর্মগুলি প্রত্যোকটি থানায় রাখা থাকবে। অসহায় বৃদ্ধ বা বৃদ্ধারা ফর্ম ভরতি করার পর তা খতিয়ে দেখবেন সংশ্লিষ্ট ডিভিশনের এসি তথা নোডাল অফিসাররা।
তাঁরাই সেই আবেদন পাঠিয়ে দেবেন ট্রাইবুনালে। ট্রাইবুনাল আবেদনকারী ও তাঁর ছেলে মেয়েদের ডেকে পাঠিয়ে তাঁদের বক্তব্য শুনবে। সৎ ছেলে বা মেয়ে এবং অনাবাসী ভারতীয়দের ক্ষেত্রেও এই আইন প্রযোজ্য। প্রথমে ছেলে মেয়েদের সতর্ক করে দেওয়া হবে। সেই ক্ষেত্রে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসোহারা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। বাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হলে তাঁদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে ভরণপোষণের ভার নিতে বলা হতে পারে। সেই নির্দেশ পালন করা না হলে সাজা ঘোষণা করতে পারে ট্রাইবুনাল। বৃদ্ধাশ্রম কতটা ভাল হবে, তার কী কী সুবিধা থাকবে ও এনজিও কীভাবে সরকারকে সাহায্য করবে, সেই সম্পর্কেও আইনে বিস্তারিতভাবে বলা রয়েছে।
মূল কলকাতার ২৪টি থানার ক্ষেত্রে ভবঘুরে নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কন্ট্রোলার, বাকি ২৪টির ক্ষেত্রে সমাজকল্যাণ ডিরেক্টরেটের স্পেশাল অফিসার ও কলকাতা পুলিশে যুক্ত নতুন থানা এলাকার জন্য মহকুমা শাসকরাই ট্রাইবুনালের বিচারক হবেন। তবে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের উপর অত্যাচার বা আক্রমণ হলে ফৌজদারি মামলাও রুজু করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।