জুমবাংলা ডেস্ক : মাঝেমধ্যে বৃষ্টির সঙ্গে বরফের টুকরা পড়তে দেখা যায়। একে বলে শিলাবৃষ্টি। কিন্তু কেন হয় এই শিলাবৃষ্টি? এটা বুঝতে হলে কালবৈশাখি ও বাতাসের উর্ধ্বমুখী চাপ সম্পর্কে একটু ধারণা থাকা চাই। সে সম্পর্কে আগে জেনে নিই। খবর নোয়া ন্যাশনাল সার্ভার স্ট্রোম ল্যাবরেটরি, নাসা
সাধারণত মার্চ ও এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে প্রচণ্ড গরম পড়ে। সূর্যের তাপে বাতাস অতিরিক্ত গরম হয়ে ওঠে। এই গরম বাতাস ঠান্ডা বাতাসের তুলনায় হালকা হয়। ফলে গরম হওয়া হালকা বাতাস ওপরে উঠে যায় এবং ঠান্ডা বাতাস নেমে যায় নিচে। অনেকটা ভাত রান্নার মতো ব্যাপার। ভাত রান্নার সময় হাড়ির নিচে তাপ দিতে হয়, মানে আগুন জ্বালাতে হয়। তাপের কারণে প্রথমে হাড়ি গরম হয়। এরপর ধীরে ধীরে হাড়ির পানি গরম হয়। গরম পানি ওপরে উঠে আসে আর ঠান্ডা পানি নিচে নামে। এভাবে গরম ও ঠান্ডা পানি ওপরে নিচে ওঠা-নামা করতে করতে সব পানি গরম হয়। বাতাসের ক্ষেত্রেও ঘটে একই ঘটনা।
যা-ই হোক, এই গরম হালকা বাতাস দ্রুত ওপরে ওঠে। একে বলে বাতাসের ঊর্ধ্বমুখী চাপ। বাতাস যত দ্রুত ওপরে ওঠে, চাপ তত বাড়ে। গরম বাতাস ওপরে উঠে আবহাওয়ার সংস্পর্শে এসে আবার ঠান্ডা হয়। কারণ ওপরের মেঘ ভূপৃষ্ঠের তুলনায় অনেক ঠান্ডা। এই গরম বাতাস ও ঠান্ডা বাতাস মিলে পরিণত হয় ঝড়ো বাতাসে। ঝড় শুরু হয়। এই ঝড়কে বলে কালবৈশাখি।
গরম বাতাস আবহাওয়ার সঙ্গে মিলে যে ঠান্ডা হয়, এতে জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে প্রথমে হালকা বরফ কণা তৈরি করে। এই বরফ কণা ধীরে ধীরে অন্য বরফ কণার সঙ্গে মিলে ঘন পানির বিন্দুতে পরিণত হয়। সেই পানির বিন্দু নেমে আসে বৃষ্টি আকারে। তাহলে শিলা সৃষ্টি হয় কোথায় এবং কীভাবে?
আসলে শিলাবৃষ্টি হবে কি না, তা নির্ভর করে গরমের ওপর। আগেই বলেছি, প্রচণ্ড গরমে বাতাস দ্রুত হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। এতে বাতাসের ঊর্ধ্বমুখী চাপ বাড়ে। তখন সব বৃষ্টির ফোটা আর পানির আকারে নিচে পড়তে পারে না। কিছু কিছু বাতাসের ঊর্ধ্বমুখী চাপে আবার ওপরে উঠে যায়। মানে আবার চলে যায় মেঘের মধ্যে। অনেক সময় এই বাতাসের বেগ থাকে ঘণ্টায় প্রায় ৬০ কিলোমিটার। এত বেগের বাতাসের পক্ষে পানির ফোটাকে ওপরে ওঠানো কোনো ব্যাপারই না।
মেঘে তাপমাত্রা থাকে অনেক কম। ধরো, তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছ, সেখানকার তাপমাত্রা যদি হয় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তাহলে তখন মেঘের ভেতরের তাপমাত্রা হবে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই কম তাপমাত্রার মেঘের মধ্যে যখন পানির ফোটা চলে যায়, তখন তা বরফে পরিণত হয়। তারপর সেই বরফের ছোট টুকরা আবার পৃথিবীর মহাকর্ষ টানের প্রভাবে নিচে নামতে থাকে। কিন্তু এবারেও সবগুলো বরফের টুকরা মাটিতে পড়তে পারে না। তীব্র বাতাসের ঊর্ধ্বমুখী চাপে আবার ওপরে মেঘের মধ্যে চলে যায়। তবে কিছু বরফের টুকরা কিন্তু বাতাসকে ফাঁকি দিয়ে নিচে পড়ে। সেগুলো হয় ছোট শিলা।
আর যে বরফের টুকরা বাতাসের চাপে আবার ওপরে চলে গেছে, সেটা একই প্রক্রিয়ায় আবার কিছু পানির সঙ্গে মেলে। এতে সেই পানিও বরফ হয়ে বরফের টুকরা আরও বড় হয়। এভাবে ধীরে ধীরে বরফের টুকরা এত বড় হয় যে বাতাসের চাপ আর ওগুলোকে মেঘের মধ্যে ঠেলে দিতে পারে না। তখন সেগুলো শিলাবৃষ্টি আকারে পৃথিবীতে পড়ে।
তাহলে মোট কথা হলো, মেঘের মধ্যে জলীয়বাষ্প জমে বৃষ্টি আকারে পড়ে। বৃষ্টির সময় বাতাসের ঊর্ধ্বমুখী চাপ বেড়ে গেলে কিছু বৃষ্টির ফোটা আবার মেঘের মধ্যে চলে যায়। এভাবে বারবার মেঘের মধ্যে যাওয়ার কারণে বৃষ্টির ফোটা বরফের টুকরায় পরিণত হয়। বাতাসের বেগ যত বেশি হবে, বরফের টুকরো তত বেশিবার ওপরে উঠে মেঘের সংস্পর্শে আরও বড় বরফের টুকরায় পরিণত হবে। তারপর এক সময় বরফের টুকরা বড় হতে হতে তা শিলাবৃষ্টি আকারে পৃথিবীতে নেমে আসে।
শিলার আকার কত বড় হবে, তা বাতাসের চাপের ওপর নির্ভর করে। চাপ যত বেশি হবে, বরফের টুকরা ততো বেশিবার মেঘের মধ্যে যাবে, আর তত বড় হবে। এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় শিলাটির ব্যাস ৮ ইঞ্চি, পরিধি ১৮.৬২ ইঞ্চি। একটা চায়ের কাপের ব্যাস হয় ৩ ইঞ্চি। এবার অনুমান করে নাও, সবচেয়ে বড় শিলাটা কত বড়! ওটার ওজন ছিল প্রায় ৪২৫ গ্রাম। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ডাকোটায় পাওয়া যায় শিলাটি।
সম্প্রতি বাংলাদেশের সিলেটে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। সেখানকার শিলাগুলোর ওজন ছিল প্রায় ২০০ গ্রাম। এগুলো তুলনামূলক বড় আকারের শিলা। বাংলাদেশে সাধারণত ১০০ গ্রামের বেশি ওজনের শিলা দেখা যায় না। তবে এ বছরের প্রচণ্ড গরমে বড় আকারের শিলা পড়েছে।
নিম্নচাপে ফেনীতে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৯ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড, শনিবার পর্যন্ত থাকতে পারে বর্ষণ
শিলাবৃষ্টি হলে বাইরে থাকা উচিত নয়। শিলা মাথায় লাগলে আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ২০১৫ সালের সাতক্ষীরার শিলাবৃষ্টিতে প্রায় ৫ হাজারের বেশি পাখি মারা গিয়েছিল। তাছাড়া শিলা পড়ায় কৃষকদের অনেক ক্ষতি হয়। নষ্ট হয় ফসল ও ঘরবাড়ি। অনেক সময় গাড়ির কাচ ভেদ করেও শিলা ঢুকে যায়। তাই শিলাবৃষ্টি হলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে যাওয়া জরুরি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।