দেশজুড়ে শুরু হয়েছে এক দীর্ঘমেয়াদি বৃষ্টিবলয়ের প্রভাব, যার ফলে আগামী ১৩ দিন ধরে বাংলাদেশজুড়ে বৃষ্টি ঝড়, বজ্রপাত এবং কালবৈশাখী হাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই প্রাকৃতিক বৈরী পরিস্থিতি দেশের কৃষি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, এবং জনজীবনের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। আবহাওয়া গবেষক এবং বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই সময়কালে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এলাকাগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।
বৃষ্টি ঝড়ের পূর্বাভাস: সারাদেশে সম্ভাব্য প্রভাব
বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় ক্রান্তীয় বৃষ্টিবলয়ে প্রবেশ করেছে দেশ। এই বৃষ্টিবলয়টি আজ ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত সক্রিয় থাকবে বলে জানানো হয়েছে। এই সময়ে দেশের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এলাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং একই সঙ্গে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতের তীব্রতা দেখা দিতে পারে।
Table of Contents
সিলেট, ময়মনসিংহ, ও চট্টগ্রাম বিভাগের ওপর দিয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে বৃষ্টিপাত হতে পারে। রাজধানী ঢাকাও শক্তিশালী বজ্রঝড়ের আওতায় পড়বে বলে জানানো হয়েছে। বিশেষ করে সন্ধ্যা বা গভীর রাতের দিকে হঠাৎ কালো মেঘে আকাশ ঢেকে যেতে পারে, যার সঙ্গে থাকবে প্রবল দমকা হাওয়া এবং বজ্রসহ বৃষ্টি। এরপর হঠাৎ করেই আবহাওয়া পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এই সময়কালে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকবে সিলেট অঞ্চল, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ। এছাড়া রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় মাঝারি মাত্রায় এবং খুলনা ও বরিশালে অপেক্ষাকৃত কম সক্রিয় থাকবে এই বৃষ্টিবলয়।
আবহাওয়া বিশ্লেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, এই বৃষ্টিবলয়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রবল কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। কৃষি নির্ভর এই দেশে এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। তিনি জানান, রংপুর বিভাগ এবং কক্সবাজার হয়ে প্রবেশ করা এই বৃষ্টিবলয়টি সিলেট হয়ে দেশ ত্যাগ করতে পারে।
এই সময়ে দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ এলাকায় পানি সেচের চাহিদা পূরণ হতে পারে। বৃষ্টিপাতের মাত্রা অঞ্চলভেদে ভিন্ন হতে পারে, যেমন:
- সিলেট: ৯০–১৩০ মিলিমিটার
- ময়মনসিংহ: ৫০–৭০ মিলিমিটার
- রংপুর: ৬০–৯০ মিলিমিটার
- রাজশাহী: ৩০–৪৫ মিলিমিটার
- ঢাকা: ৫০–৭০ মিলিমিটার
- চট্টগ্রাম: ১৫–৫০ মিলিমিটার
- খুলনা: ২০–৩০ মিলিমিটার
- বরিশাল: ২০–৩৫ মিলিমিটার
এই স্বল্পস্থায়ী এবং আকস্মিক বৃষ্টিপাত অনেক সময় শস্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে আম, লিচু, কাঁঠালের মত মৌসুমি ফলের উৎপাদন বিঘ্নিত হতে পারে।
ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাত: জনসাধারণের জন্য করণীয়
আবহাওয়ার পরিবর্তনে সচেতনতা জরুরি
আবহাওয়াবিদরা বারবার বলে আসছেন, এই ধরনের ক্রান্তীয় বৃষ্টিবলয়ের সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। হঠাৎ বজ্রপাত বা প্রবল দমকা হাওয়ার সময়ে গাছপালা বা খোলা মাঠে অবস্থান করা বিপজ্জনক। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল চলাকালে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
বৃষ্টির সময় শহরের অনেক সড়কে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে, যা যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে যেতে পারে। তাই এই সময়ের মধ্যে যাত্রা করার ক্ষেত্রে আবহাওয়ার আপডেট দেখে চলা উচিত।
এই বৃষ্টিবলয়ের সময় কৃষকদের উচিত আগাম প্রস্তুতি নেওয়া, যেমন শস্য ঢেকে রাখা, পাকা ফসল তাড়াতাড়ি ঘরে তোলা এবং জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে হাওয়ার গতি ও বজ্রপাত পর্যবেক্ষণ করে মাঠের কাজ পরিচালনা করা নিরাপদ হবে।
বাংলাদেশে আবহাওয়া ও জলবায়ুর ভবিষ্যত ঝুঁকি
বাংলাদেশ একটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। প্রতি বছরই বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের বৈরী আবহাওয়া বাড়ছে। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP) জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো আগামী দশকে আরও বেশি ক্রান্তীয় ঝড়, বন্যা এবং খরার সম্মুখীন হতে পারে (UNEP)।
এই বাস্তবতায় দেশের প্রতিটি নাগরিককে আবহাওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি। আবহাওয়া সংক্রান্ত সরকারি অ্যাপ ও ওয়েবসাইট ব্যবহার করে নিয়মিত আপডেট নেওয়া, সতর্কবার্তা অনুসরণ করা ও নিজ নিজ এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মানা একান্ত প্রয়োজন।
এই সময়ে সারাদেশে বৃষ্টি ঝড়ের কারণে প্রতিটি নাগরিকের উচিত সচেতন থাকা, নিজ পরিবার ও সম্পদ রক্ষার জন্য আগাম প্রস্তুতি নেওয়া।
FAQs
এই বৃষ্টিবলয় কতদিন স্থায়ী হতে পারে?
বর্তমানে যে বৃষ্টিবলয়টি প্রবেশ করেছে তা ২২ এপ্রিল পর্যন্ত, অর্থাৎ মোট ১৩ দিন সক্রিয় থাকবে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
বৃষ্টি ঝড়ের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো কোনগুলো?
সিলেট, রংপুর, ও ময়মনসিংহ বিভাগ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন।
বজ্রপাতের সময় কী করণীয়?
বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠ, গাছপালা বা জলাশয় থেকে দূরে থাকা উচিত এবং নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া উচিত।
বৃষ্টিবলয়ের সময় ফসল রক্ষা করতে কৃষকরা কী করতে পারেন?
আগাম প্রস্তুতি যেমন পাকা ফসল দ্রুত সংগ্রহ, জমির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং শস্য ঢেকে রাখা জরুরি।
ঢাকায় কেমন বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে?
ঢাকায় এই সময়ে ৫০ থেকে ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, সঙ্গে থাকতে পারে বজ্রঝড়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।