গোপাল হালদার, পটুয়াখালী: ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় পটুয়াখালীতে সূর্যমুখী চাষের কদর বেড়েছে। কম সময়ে অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় সূর্যমুখীর চাষে ঝুঁকছেন এখানকার কৃষকরা।
সরজমিন দেখা যায়, পটুয়াখালীর মাঠজুড়ে হলুদ ফুলের সমাহার। বাতাসের সঙ্গে মিতালি করে দুলছে সূর্যমুখী ফুল। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে কৃষকের মাঠ। তবে এটা কোনও ফুলের বাগান নয়, সূর্যমুখীর বাগান।
আমন মৌসুমে জেলার শতভাগ জমিতে ধানের আবাদ হলেও শুষ্ক মৌসুমে অনেক এলাকার জমি থাকছে অনাবাদী। সেসব অনাবাদী জমিতে এবার দেখা মিলছে আকর্ষণীয় তেল ফসল সূর্যমুখীর চাষাবাদ। সবুজ গাছের মাথায় হলুদ ফুল যেমন সবাইকে আকর্ষণ করে, তেমনি গুণগত মানের দিক থেকে অন্যসব ভোজ্যতেলের মধ্যে সূর্যমুখী তেলের রয়েছে বাড়তি কিছু বৈশিষ্ট্য। তাই দিন দিন এই ফসলের আবাদ এলাকা বাড়ছে।
পটুয়াখালীতে খণ্ড খণ্ড জমিতে সূর্যমুখী চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। সূর্যমুখীর ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন এর চাষাবাদ বাড়ছে। অন্যদিকে অল্প খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় সূর্যমুখী চাষ করে নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করতে পারবেন বলে দাবি করছেন কৃষকরা। তারা এখন মনের আনন্দে সূর্যমুখী বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা সূর্যমুখী চাষ করে নিজেদের তেলের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা তাদের।
বালিয়াতলী ইউনিয়নের বোদ্ধপাড়া গ্রামের কৃষক জুলহাস ব্যাপারীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বর্তমানে তার ক্ষেতের ফলন খুব ভালো হয়েছে। শুরুতে ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলেও কৃষি অফিসের পরামর্শে তা সেরে উঠেছে। এবছর তিনি ১০ একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। ফসল উঠলে পাঁচ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে এ চাষি জানান।
কোহারজোড় এলাকার কৃষক জলিল খান বলেন, তিনি এবছর ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আমন ধান পরবর্তী পতিত ৩ একর জমিতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ ক্রমে হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখন পর্যন্ত গাছ বেশ ভালো হয়েছে।
শ্রীরামপুর গ্রামের কৃষক ইউছুফ খান বলেন, এক একর জমিতে তিনি সূর্যমুখী চাষ করেছেন, গাছে বেশ ভালো ফুল ফুটেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে নিজের চাহিদা পূরণ করে বিক্রি করা যাবে এবং এর শুকনো গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারব।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, পরিবারের তেলের জোগান মিটিয়েও এ তৈলবীজ বিক্রি করতে পারায় খুশি কৃষকরা। সুস্বাস্থ্যের জন্য সূর্যমুখীর তেলের ব্যবহার প্রসার লাভ করছে এবং সূর্যমুখী চাষ করে চাষিরাও লাভবান হচ্ছেন। সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের সার্বিকভাবে আমরা সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’
পটুয়াখালীতে গত বছর সাড়ে ৬০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হলেও এ বছর ১২০০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ।
বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য থেকে জানা যায়, সূর্যমুখী বীজে লিনোলিক এসিড বিদ্যমান এবং উন্নতমানের তৈল থাকে। হৃদরোগীদের জন্য এ তেল খুবই উপকারী। সূর্যমুখী সাধারণত সব মাটিতেই জন্মে। তবে দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে বেশি উপযোগী। সূর্যমুখী সারা বছর চাষ করা যায়, তবে অগ্রহায়ণ মাসের মধ্য থেকে চাষ করলে এর ভালো ফলন পাওয়া যায়। খরিপ-১ মৌসুমে অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠে, মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য মে মাসেও এর চাষ করা যায়। সূর্যমুখী বীজ সারিতে বুনতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সে.মি. এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ সে.মি. হলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সূর্যমুখী থেকে তেলের পাশাপাশি সূর্যমুখীর খৈল গবাদিপশুর উৎকৃষ্টমানের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর বীজ ছাড়ানোর পর মাথাগুলো গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। গাছ ও পুষ্পস্তবক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।