বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : সম্প্রতি চীনের এক নারী তার ১৮ বছর আগের সংরক্ষিত ডিম্বাণু থেকে সুস্থ সন্তান জন্মদান করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। আর এ সফলতার পর আরও বেশি করে নারীরা ভাবতে শুরু করেছেন, তাদের ডিম্বাণু সংরক্ষণ করা উচিত কি না। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
বর্তমানে নারীদের মাঝে ক্যারিয়ার সচেতনতা আগের তুলনায় অনেক বেশি।
কিন্তু সন্তান ধারণ ও ক্যারিয়ার একত্রে চালাতে অনেকেই পারেন না। এ কারণে নারীরা ক্যারিয়ারকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আগে ক্যারিয়ার ও পরে সন্তান নেওয়ার বিষয়টি চিন্তা করছেন। কিন্তু দেরিতে সন্তান নিতে গেলে ডিম্বাণুর কার্যকারিতা নষ্টসহ বেশ কিছু সমস্যা হতে পারে। সে সমস্যার সমাধান হিসেবে এসেছে ডিম্বাণু সংরক্ষণ।
কোনো নারী ইচ্ছে করলেই তার ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন বিশেষ ব্যবস্থায়। তবে এজন্য প্রচুর খরচ করতে হয়। অবশ্য এ কাজে বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
চীনে হুয়াং কুইয়ং নামে ৪৫ বছর বয়সী এক নারী সম্প্রতি ৩.৩ কেজি ওজনের এক মেয়ে শিশু জন্ম দিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর আগে তার ডিম্বাণু সংরক্ষণ করেছিলেন। এটি ১৯৯৮ সাল থেকে মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তরল নাইট্রোজেনে সংরক্ষিত ছিল। গত বছরের নভেম্বরে ডিম্বাণু সে নারীর গর্ভে স্থাপন করা হয়।
অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিম্বাণু সংরক্ষণ করলেও তাতে যে আপনার গর্ভধারণ হবে, এ বিষয়টি নিশ্চিত নয়। গর্ভধারণের জন্য একটি নির্দিষ্ট বয়স রয়েছে। এ বয়স পার হয়ে গেলে গর্ভধারণে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। এ জটিলতার কারণে গর্ভধারণ সম্ভব না হলে ডিম্বাণু ব্যবহার করেও তা সম্ভব হবে না। ইউরোপে এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ বছর বয়সের নিচে ডিম্বাণু ফ্রিজ করে রাখার বেশ কয়েক বছর পর নারীদের সে ডিম্বাণু ব্যবহার করে সফল গর্ভধারণের হার ৩৬ থেকে ৬১ শতাংশ। তবে কোনো কারণে যদি পরবর্তীতে ডিম্বাণু উৎপাদন করা না যায় (যেমন বিভিন্ন রোগে) তাহলে সংরক্ষিত ডিম্বাণু থেকে সহজেই গর্ভধারণ করা যায়।
এ বছরের জানুয়ারি মাসে সাবেক মিস ওয়ার্ল্ড ডিয়ানা হ্যায়ডেন একটি শিশুর জন্ম দেন সংরক্ষিত ডিম্বাণু থেকে। দীর্ঘ আট বছর তার ডিম্বাণু সংরক্ষিত ছিল। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তিনি তার ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি কলিন ডিককে বিয়ে করেন এবং তার সেই সংরক্ষিত ডিম্বাণু ব্যবহার করে গর্ভধারণ করেন।
সম্প্রতি ডিম্বাণু সংরক্ষণের এ ধারণা ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বহু নারীই গর্ভধারণ করতে চান। কিন্তু সেজন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে চান। আর পরবর্তীতে গর্ভধারণ করার ক্ষমতা থাকবে কি না, সেজন্যও তারা চিন্তিত। এছাড়া দেরিতে সন্তান ধারণে সুস্থ শিশু জন্ম নেবে কি না, সেজন্যও আশঙ্কা রয়েছে। এ আশঙ্কা দূর করার জন্যই বহু নারী ডিম্বাণু সংরক্ষণে মনোযোগী হচ্ছেন।
তবে এ পদক্ষেপ সঠিক কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বহু মানুষই বলছেন ক্যারিয়ারকে প্রাধান্য দেওয়া ও গর্ভধারণকে দ্বিতীয় বিষয় হিসেবে দেখা মোটেই ঠিক নয়। অন্যদিকে এ ধারার পক্ষেও রয়েছেন বহু মানুষ। প্রাকৃতিক নিয়মকে ভঙ্গ করা সঠিক বিষয় কি না, তা নিয়ে ভিন্নমতও প্রকাশ করছেন অনেকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।