জুমবাংলা ডেস্ক : বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হলেও জ্বালানিচালিত গাড়ির চাহিদা দিন দিন কেবল বৃদ্ধিই পাচ্ছে। তাই অটোমোবাইল শিল্প কি বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে স্বপ্ন দেখা চালিয়ে যাবে না কি জ্বালানিনির্ভর গাড়ির উন্নতি সাধনে সচেষ্ট হবে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। খবর রয়টার্সের।
গাড়ি নির্মাতা ও সরবরাহকারীরা বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়ে এত দিন বড় আশা পোষণ করলেও বিশ্বব্যাপী এ ধরনের গাড়ির চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় অটোমোবাইল শিল্পকে দেউলিয়াত্ব এবং উৎপাদন হ্রাসের মতো পরিণতি বরণ করতে হচ্ছে।
জেনারেল মোটরসের (জিএম) প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা পল জ্যাকবসনের মতে, বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যৎ পরিষ্কার নয়। তাই তারা বৈদ্যুতিক গাড়ি ও জ্বালানিনির্ভর গাড়ির মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করার কথা ভাবছে।
বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদার তুলনায় সক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধির পেছনে বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়ায় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন খরচ কমানোর দিকে জোর দিতে শুরু করেছে। জিএমের প্রধান নির্বাহী ম্যারি বারা বলেন, ‘এটা সত্যি যে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি কমে গেছে এবং এর ফলে কিছু অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমরা আবারও চাহিদা সৃষ্টি করতে সক্ষম হব।’
চাহিদা কমে যাওয়ায় বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন কমিয়ে দিলেও জিএম আশা করছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোর্ডও আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কও বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
একই সঙ্গে বিক্রি ও গাড়ির মূল্য কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা টেসলার স্টক থেকে ৮০ বিলিয়ন ডলার সরিয়ে নিয়েছেন।
জিএমের শেয়ারহোল্ডার আলপাইন ক্যাপিটাল রিসার্চের পোর্টফোলিও ম্যানেজার টিম পিচোস্কির মতে, বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ দেওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এবং নিম্ন তাপমাত্রায় ব্যাটারির আয়ু কমে যাওয়ায় এ ধরনের গাড়ির প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এর ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির সঙ্গে মানিয়ে নিতে মানুষের আরো বেশি সময় লাগবে এবং জ্বালানিনির্ভর গাড়ির প্রতি মানুষের নির্ভরতা অপরিবর্তিত থাকবে।
শুধু বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতারাই নয়, বরং গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাতারাও চাহিদা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। চীনের ব্যাটারি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিএটিএল চাহিদা হ্রাস এবং প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার জন্য ২০২৪ সালে তাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে কমিয়ে দিয়েছে।
সিএটিএলকে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার চীনে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পাশাপাশি চীনে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রিও অনেকাংশে কমে গেছে। চীনের আরেকটি ব্যাটারি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডির প্রবৃদ্ধিও ২০২২ সালে যা হয়েছিল ২০২৩ সালে তার চেয়ে অনেক হ্রাস পেয়েছে।
মর্গান স্ট্যানলির বিশ্লেষক অ্যাডাম জোনাসের মতে, বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক বেশি। তাই এই শিল্পে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে শুরু করেছে।
বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির প্রধান উপাদান লিথিয়ামের সর্ববৃহৎ উৎপাদনকারী আলবিমার্লে তাদের ৪ শতাংশ শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করেছে এবং লিথিয়াম উৎপাদনে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে।
এ ছাড়া জার্মান গাড়ি নির্মাতাদের সংগঠন ভিডিএর মতে, দেশটিতে ২০২৩ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি ১৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং ২০২৪ সালে আরো ৯ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুরো ইউরোপেই বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা হ্রাস পেয়েছে এবং এই অঞ্চলের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতারা চীনা গাড়ি নির্মাতাদের কাছ থেকে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যারাইভালকে স্টক বিক্রি বন্ধ করতে নোটিশ দিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম শেয়ারবাজার নাসদাক। চাহিদা কমে যাওয়ায় এবং বিনিয়োগ হ্রাস পাওয়ায় লর্ডসটাউন মোটরস, প্রোটেরা ও ভোল্টা মোটর কম্পানি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।