সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য ভ্রমণ সবচেয়ে সহায়ক পথ্য হিসেবে কাজ করে। ভ্রমণ তাই যাপনের এক অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যতম রোমাঞ্চের স্বাদ নিতে চলে যেতে পারেন এই পাঁচ গন্তব্যের যেকোনোটিতে।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের আসাম ও ত্রিপুরাঘেঁষা এক জনপদ বোবারথল। প্রাকৃতির অনিন্দ্য রূপলাবণ্যে ভরা। ঐতিহাসিক গুরুত্ব সত্ত্বেও এখনো লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে গেছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় ‘বোবারথল’। দুর্গম যোগাযোগ আর বাংলাদেশের সবচেয়ে পূর্বের সীমান্তবর্তী এই ভ্রমণ গন্তব্য। প্রচারের অভাবে এখনো সেভাবে পা পড়েনি ভ্রমণপ্রেমীদের।
সুউচ্চ পাহাড়ি ট্রেইল, অগণিত প্রাকৃতিক ঝরনা, বিশাল লেক, গিরিখাত, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক স্থানীয় জীবনধারা নিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ভ্রমণ গন্তব্য বোবারথল। ঢাকা থেকে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার দূরে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নে এর অবস্থান।
বোবারথল যাত্রার শুরুতে আপনি পাবেন পাহাড় ও চা-বাগানের বুক চিরে ছুটে চলা ট্রেনভ্রমণ। ঢাকা থেকে এসে নামতে হয় কুলাউড়া জংশনে। তারপর লোকাল বাস কিংবা অটোতে পৌঁছাতে হয় বড়লেখা উপজেলা সদরে। সেখান থেকে মাত্র ১০ মিনিটে অটোযোগে পৌঁছাতে হবে বোবারথলের প্রবেশদ্বার ছোটলেখা বাজারে।
এরপর শুরু হবে চাঁদের গাড়ি কিংবা জিপগাড়িতে পাহাড়-টিলা আর চা–বাগানের মধ্য দিয়ে এক রোমাঞ্চকর যাত্রা। ক্রমাগত পাহাড়ের চূড়া আর ঢালু পথ পাড়ি দিতে হবে আপনাকে। যত সামনে এগোবেন, ততই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ওপরে উঠবেন আর হারিয়ে যাবেন সবুজে আবৃত এক পাহাড়ি জনপদে।
শীত কিংবা বর্ষা—যে মৌসুমেই আপনি যাত্রা করেন না কেন, দিনের যেকোনো সময়ে সেখানে পৌঁছালে পথিমধ্যে আপনি উপভোগ করবেন সাজেক ও বান্দরবানের আদলের পাহাড় আর সবুজের সারি। প্রাকৃতিক এই লীলাভূমিতে প্রবেশ করার দুটি রাস্তা আছে।
আপনি যদি গগনটিলা (হরতকি টিলা) দিয়ে প্রবেশ করেন, তবে এই এলাকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ (পাথারিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অংশ) গগনটিলার বিশালতা উপভোগ করবেন। গগনটিলা থেকেই দুটি প্রাকৃতিক ঝরনায় আপনি গা ভিজিয়ে নিতে পারবেন। তার পাশেই আছে খাসিয়া সম্প্রদায়ের গ্রাম গান্ধাইপুঞ্জি। সেখানে উঁকি মেরে দেখে আসতে পারেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সমৃদ্ধ জীবন; াপন; বিশেষভাবে পান ও সুপারির চাষ।
আপনি যদি ছোটলেখা চা–বাগানের ভেতর দিয়ে বোবারথল নয়াবাজার রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করেন, তবে জিপে যাত্রাপথের অর্ধেকটা সময় পার করবেন ছবির মতো সুন্দর চা–বাগানের মধ্যে। উঁচু পাহাড় চড়তে শুরু করার আগেই আপনার যাত্রায় যোগ হবে ছোটলেখা লেকের জলরাশির আচ্ছাদন।
প্রায় দেড় কিলোমিটার বিস্তৃত এই পাহাড়ি লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে আপনি চারপাশের সুউচ্চ পাহাড়ে আবৃত হিমশীতল আবহে গা ছমছমে অনুভূতি পাবেন। তার পাশেই আছে আরেকটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী পল্লি ‘আগারপুঞ্জি’। খাসিয়া ও গারোদের এই পুঞ্জিতে আপনি ঢুঁ মেরে দেখে আসতে পারেন তাদের বৈচিত্র্যময় জীবনধারা। জিপ জার্নি শেষ করে এসে পৌঁছাতে পারেন বোবারথলের মূল জনপদে।
বোবারথলে পৌঁছে আপনি ছোট ছোট আটটি গ্রাম নিয়ে গঠিত পাহাড়ি–বাঙালি জনপদে অনেকটা সেকেলে সভ্যতার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন। স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্গানিক কৃষিপণ্য, ঐতিহ্যবাহী খাবার, বিভিন্ন অচেনা ফল আর গ্রামীণ আতিথেয়তা মুগ্ধ করবে আপনাকে।
বোবারথলে আপনি ঘুরে দেখতে পারবেন পেকুছড়া ঝরনা, করইছড়া ঝরনা, পরিরঢর ঝরনা (মুরাগঞ্জ ছড়া), গগনটিলা ঝরনা, ষাটঘরি সীমান্ত ছড়াসহ ছোট–বড় আটটি ঝরনা। এখানকার প্রতিটি পাহাড়ি ঝিরির উপরিভাগে গহিন পাহাড়ে একটি করে ঝরনা আছে, যেগুলোর কোনো নাম ও স্বীকৃতি নেই।
স্থানীয় লোকজনের কাছে এসব ঝরনা বিশুদ্ধ পানির উৎস ছাড়া বিশেষ কোনো গুরুত্ব নেই। এ ছাড়া আছে গান্ধাই কয়লাটিলা, হরতকি চুনাপাহাড়, সাততলা টিলা (প্রাকৃতিক ব্রিজ), ছোটলেখা লেক, গগনটিলা, ছোটলেখা চা–বাগান, জিংগাআলা শাহবাজপুর চা–বাগান, গান্ধাইপুঞ্জি, আগারপুঞ্জি, ডিমাইপুঞ্জি ও বাংলাদেশের একমাত্র মুসলিম খাসিয়াপল্লি ‘মাঝ গান্ধাইপুঞ্জি’।
বোবারথলকে যেতে হলে করতে আপনাকে দুই দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে হবে। বোবারথল ভ্রমণের সঙ্গে আপনি দেখে আসতে পারেন সিলেটের সর্বোচ্চ জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড ও এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি। বড়লেখা উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে আপনি পৌঁছাতে পারেন মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও হাকালুকি হাওরে; একই সঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন ঐতিহাসিক খোঁজার মসজিদ ও পাথারিয়া পাহাড়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।