বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার একটি অত্যাধুনিক, দীর্ঘপাল্লার, জ্বালানী-সাশ্রয়ী বাণিজ্যিক জেট বিমান যা বোয়িং কম্পানি দ্বারা নির্মিত হয়েছে। এটি মূলত যাত্রী পরিবহনের জন্য ডিজাইন করা একটি ওয়াইড-বডি (wide-body) বিমান। এর প্রযুক্তি এবং কার্যকারিতা বিমানের জগতকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানোর সুযোগ দিয়েছে।
Table of Contents
প্রাথমিক বৈশিষ্ট্যসমূহ
বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি বিমান শিল্পে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। এটি যাত্রীবাহী জেট হিসেবে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিমানগুলির মধ্যে একটি।
ধরন: যাত্রীবাহী জেট (wide-body airliner)
প্রথম উড়ান: ১৫ ডিসেম্বর ২০০৯
পরিবহন ক্ষমতা: ২৪২ থেকে ৩৩০ জন যাত্রী (মডেল অনুযায়ী)
পরিসীমা (Range): প্রায় ১৩,৬২০ কিমি (৮,৫০০ মাইল)
ইঞ্জিন: দুটি উন্নত টার্বোফ্যান ইঞ্জিন (Rolls-Royce Trent 1000 বা General Electric GEnx)
মডেলসমূহ:
৭৮৭-৮: প্রাথমিক ও ছোট সংস্করণ
৭৮৭-৯: দীর্ঘতর সংস্করণ
৭৮৭-১০: বৃহত্তম সংস্করণ (সবচেয়ে বেশি যাত্রী বহনের ক্ষমতা)
বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার এর বিশেষত্ব
✈️ ১. উন্নত জ্বালানি দক্ষতা
বোয়িং ৭৮৭ তার পূর্বসূরি বিমানগুলোর তুলনায় ২০% কম জ্বালানি খরচ করে।
এটি কার্বন কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হওয়ায় ওজন অনেক হালকা, ফলে জ্বালানি খরচ কম হয়।
উন্নত ইঞ্জিন প্রযুক্তি (General Electric GEnx বা Rolls-Royce Trent 1000) জ্বালানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে।
🌬️ ২. আরামদায়ক কেবিন অভিজ্ঞতা
উচ্চতর কেবিন প্রেসার (Cabin Pressure) এবং উন্নত আর্দ্রতা (Humidity) যাত্রীদের কম ক্লান্তি ও ডিহাইড্রেশন দেয়।
কেবিন প্রেসারকে ৬,০০০ ফুটের সমতুল্য রাখা হয়েছে, যা সাধারণ বিমানে থাকে প্রায় ৮,০০০ ফুটের মতো।
🪟 ৩. বড় জানালা ও উন্নত আলো নিয়ন্ত্রণ
এটি বিশ্বের বৃহত্তম জানালাবিশিষ্ট বিমান। জানালাগুলিতে ইলেকট্রনিক ডিমিং সিস্টেম থাকে, যা বোতাম টিপে আলো নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে (শেডের পরিবর্তে)।
যাত্রীরা বাহিরের দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন অনেক বড় পরিসরে।
🔇 ৪. উন্নত শব্দ নিয়ন্ত্রণ
বোয়িং ৭৮৭ তে নতুন ধরনের নয়েজ-রিডাকশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, বিশেষত ইঞ্জিনে এবং কেবিন ইনসুলেশনে।
এটি বিমানযাত্রাকে অনেক শান্তিপূর্ণ ও আরামদায়ক করে তোলে।
📡 ৫. উন্নত প্রযুক্তি ও ডিজাইন
Boeing 787-এ রয়েছে fly-by-wire system, যা বিমান নিয়ন্ত্রণে অধিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা দেয়।
উন্নত অ্যারোডাইনামিক ডিজাইন ও উইংটিপ কাঁটা (raked wingtips) বিমানটিকে দীর্ঘপথ অতিক্রমে সহায়তা করে।
এতে রয়েছে রিয়েল টাইম হেলথ মনিটরিং সিস্টেম, যা যান্ত্রিক ত্রুটি আগে থেকেই শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
🌍 ৬. দূরপাল্লার ক্ষমতা
বোয়িং ৭৮৭ বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যায় (787-8, 787-9, 787-10), যাদের রেঞ্জ প্রায় ১৩,৬২০ কিমি পর্যন্ত, ফলে দীর্ঘ দূরত্বে স্টপ ছাড়াই ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব।
এটি বিমান সংস্থাগুলোর জন্য নতুন রুট খোলার সুযোগ তৈরি করেছে, যেমন নিউ ইয়র্ক থেকে মুম্বাই বা লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে সিডনি।
🚀 ৭. পরিবেশবান্ধব
কার্বন-কম্পোজিট উপাদান ও জ্বালানি দক্ষতার কারণে এটি কম কার্বন নিঃসরণকারী।
উচ্চ আকাশে কম শব্দ দূষণ সৃষ্টি করে।
🔧 ৮. প্রযুক্তিনির্ভর রক্ষণাবেক্ষণ
বিমানটিতে ডিজিটাল মনিটরিং ও রিমোট মেইনটেন্যান্স প্রযুক্তি রয়েছে, যা রক্ষণাবেক্ষণের সময় ও খরচ কমায়।
প্রযুক্তিগত সুবিধাসমূহ
বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের প্রযুক্তি অত্যন্ত উন্নত এবং এটির পরিবেশবান্ধব দিকটি বিশেষভাবে প্রশংসনীয়।
জ্বালানী সাশ্রয়: ২০%-৩০% কম জ্বালানী খরচ
কম শব্দদূষণ: অন্যান্য বিমানের তুলনায় কম শব্দ উৎপাদন
কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল: হালকা কিন্তু শক্তিশালী
উন্নত কেবিন প্রযুক্তি: বড় উইন্ডো, উন্নত কেবিন প্রেসার এবং উচ্চ আর্দ্রতা
বাংলাদেশে ব্যবহার
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তথা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বর্তমানে বোয়িং ৭৮৭-৮ ও ৭৮৭-৯ মডেলের ড্রিমলাইনার ব্যবহার করছে। এই বিমানের নামগুলির মধ্যে রয়েছে:
আকাশবীণা
হংসবলাকা
গাঙচিল
রাজহংস
এসব বিমান দেশের আন্তর্জাতিক রুটে, বিশেষত লন্ডন, দোহা, জেদ্দা, টরন্টো ইত্যাদি গন্তব্যে ব্যবহার হচ্ছে।
বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার একটি অত্যাধুনিক বিমান যা কম জ্বালানী খরচ এবং উন্নত প্রযুক্তির কারণে বাণিজ্যিক বিমান শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছে। বাংলাদেশেও এটি ব্যবহৃত হচ্ছে এবং দেশের আন্তর্জাতিক রুটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
iQOO Neo 10 Pro: বাংলাদেশে ও ভারতে দাম বিস্তারিত স্পেসিফিকেশনসহ
FAQ
1. বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার কী ধরনের বিমান?
বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার একটি যাত্রীবাহী, ওয়াইড-বডি বিমান যা দীর্ঘপাল্লার এবং জ্বালানী-সাশ্রয়ী। এটি বোয়িং কম্পানি দ্বারা নির্মিত।
2. বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের প্রথম উড়ান কবে হয়েছিল?
বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের প্রথম উড়ান ১৫ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখে হয়।
3. বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের সবচেয়ে বড় সংস্করণ কোনটি?
বোয়িং ৭৮৭-১০ হচ্ছে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের সবচেয়ে বড় সংস্করণ, যা সবচেয়ে বেশি যাত্রী বহন করতে সক্ষম।
4. বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের প্রধান সুবিধা কী কী?
এটির প্রধান সুবিধা হল কম জ্বালানী খরচ, কম শব্দদূষণ, উন্নত কেবিন প্রযুক্তি, এবং শক্তিশালী কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার।
5. বাংলাদেশে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার কোথায় ব্যবহার হচ্ছে?
বাংলাদেশের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আন্তর্জাতিক রুটে, যেমন লন্ডন, দোহা, জেদ্দা, টরন্টো ইত্যাদিতে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার ব্যবহার করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।