বিনোদন ডেস্ক : বোরকায় ঢাকা পুরো শরীর, মুখও ঢাকা নেকাবে। শুধু চোখে পড়ে স্পষ্ট, দৃঢ়, সাহসী দুই চোখ। আর শোনা যায় সোচ্চার কণ্ঠস্বর। নিজের কথা, নিজের মতো আরও মেয়েদের কথা জোর গলায় সুরে সুরে জানিয়ে দেন তিনি। কোনো আবরণ যাকে চেপে রাখতে পারেনি। হাজারও বাধা বিপত্তির মধ্যে এই হাতিয়ার সম্বল করেই লড়ে যাচ্ছেন ইভা বি, পাকিস্তানের সংখ্যালঘু বালোচ উপজাতির প্রথম র্যাপ গায়িকা।
কথিত আছে, এই দুনিয়ায় প্রথম ঈশ্বরের আদেশের বিরোধিতা করেছিল যে, সে দুনিয়ার প্রথম মেয়ে, ইভ। জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাওয়ার নিষেধ সে মানেনি। সেই ইভের নামেই তার নাম, বলেন ইভা। আর ‘বি’ কথাটি বোঝায় তার জাতি বালোচকে।
সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে এমনিতেই তাদের জীবনের প্রতি পদে নানা প্রতিকূলতা। পিতৃতান্ত্রিকতার কঠোর শাসনেই কাছে পাকিস্তানের উপজাতি মেয়েদের জীবন। ইভা নিজেও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না।
ইভা যে সমাজ থেকে উঠে এসেছেন, সেখানে খুব কম সংখ্যক মেয়েই চাকরি করেন। র্যা প গাওয়া মেয়েকে নিয়ে সেখানে নিন্দার ঝড় উঠবে, জানতেন তিনি।
ইভার প্রথম বাধাও এসেছিল বাড়ি থেকেই। ভাইয়ের প্রবল আপত্তির কারণে নিজের গান গাওয়ার কথা লুকিয়ে রাখতেন ইভা। রেকর্ডিংয়ে যাওয়ার সময় বাড়িতে জানাতেন, ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছেন তিনি। তার ইউটিউব চ্যানেলে নতুন গান আপলোড করলেও বাড়িতে মনোমালিন্য হতো ।
এমনকি যে গানটি তাকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে, রিলিজ করার তিনদিনের মধ্যে যার ভিউ পৌঁছয় ৩.২ মিলিয়নে, সেই ‘কানা ইয়ারি’ (Kana Yaari) গানটি নিয়েও ঝামেলায় পড়েছিলেন ইভা। কোক স্টুডিওতে গানটি রেকর্ড করার আগে কীভাবে রিহার্সাল করবেন বুঝতে পারছিলেন না তিনি। শেষমেশ বন্ধুর বিয়ে আছে এই মিথ্যে অজুহাত দিয়ে রিহার্সাল চালিয়ে যান ইভা।
আমেরিকান র্যাইপার এমিনেমের কিছু গান শুনেই র্যানপ গাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ইভা বি। ২০১৪ সালে গান লেখা এবং গান গাওয়া শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু ভাইয়ের কটূক্তি শুনতে শুনতে পরের বছরেই গান গাওয়া থামিয়ে দেন ইভা। চার বছর গান গাওয়া থেকে দূরে ছিলেন তিনি।
চাঙ্কি পাণ্ডের কারণেই দীপিকাকে বাড়িতে নিতে চান না মেয়ে অনন্যা
কিন্তু তার উপজাতির মেয়েরা, তার দেশের মেয়েরা কীভাবে আছে, তা নিয়ে ক্রমশ কথা জমে উঠছিল তার ভিতরে। আর তাই গান লেখা চলছিলই। গানেই তিনি লেখেন ‘কলম বোলেগা’ অর্থাৎ ‘কলম কথা বলবে’। সুর থামলেও, কলমকেই হাতিয়ার করে মেয়েদের কথা বলে চলেছিলেন তিনি। আর এই লড়াইতে তাকে সমর্থন দিয়ে আসছিলেন তার মা। হয়তো সেইজন্যেই ডান হাতের উল্কিতে ‘মা’ কথাটি লিখে রেখেছেন পাকিস্তানের এই জনপ্রিয় শিল্পী।
ভাইয়ের থেকে গান গাওয়ার অনুমতি পাওয়া গিয়েছিল এক শর্তে। শর্তটি ছিল তাবে বোরকা পরতে হবে। সেই শর্ত মেনে নিয়েই গান গাইতে শুরু করেছিলেন ইভা বি। তিনি বলেন, তার প্রতিভাকে তো বোরকা কেড়ে নিতে পারবে না। বোরকা পরেই র্যা প গান গেয়ে প্রতিকূলতার শৃঙ্খল ভাঙছেন তিনি। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।