বিনোদন ডেস্ক : ১৯৯৩ সালে চলচ্চিত্রে আসা। জনপ্রিয়তার পথ ধরে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া। একসময় ক্লান্ত মন আর শরীরকে বিশ্রাম দেওয়া, সংসার করা। সবই হয়েছে জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূরের জীবনে। তিনি অস্ট্রেলিয়ারও নাগরিক। সেখানে অনেক আগেই থিতু হয়েছেন। সর্বশেষ দেশে এসেছিলেন ২০১৯ সালের শেষদিকে, ফিরে গেলেন ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। এরপর করোনাকালসহ নানা প্রতিকূলতায় আর দেশে ফিরতে পারেননি। এবার গত সপ্তাহে আবার এলেন তিনি। ১৭ ডিসেম্বর পালন করলেন নিজের জন্মদিন। পাশাপাশি নতুন ছবির কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন। এসব নিয়ে ও তাঁর জীবনের সাত সতেরোর গল্প নিজেই তুলে ধরলেন- আর তা বিন্যস্ত করলেন – আলাউদ্দীন মাজিদ
কথা যদি শুরু করি…‘কথা যদি শুরু করি শেষতো হবে না, আগুন যদি জ্বালি নেভানো যাবে না…’ হ্যাঁ, দীর্ঘসময় পর আবারও বড় পর্দায় নিজের মনকাড়া অভিনয় দিয়ে দর্শক হৃদয়ে আগুন জ্বালাতে আসছেন দেশি চলচ্চিত্রের আকাশছোঁয়া জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর। সাল ১৯৯৩। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশামের হাত ধরে নূপুর নামের একটি মেয়ে সেলুলয়েডের ক্যামেরার সামনে দাঁড়াল। ছবির নাম ‘চাঁদনী রাতে’। সেই ছবিতে শাবনূর গেয়ে উঠলেন ‘কথা যদি শুরু করি শেষতো হবে না…’। সত্যি তার কথা প্রায় ৩ দশকেও শেষ হয়নি। তার সুরেলা কণ্ঠের আওয়াজ শোনার জন্য দর্শক সবসময়ই অধীর হয়ে থাকে। আর তাইতো দীর্ঘ বিরতির পর আবার বড় পর্দায় ফিরতে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে ছুটে এসেছেন সেই চাঁদনী রাতের কন্যা শাবনূর। এবার তিনি অভিনয় করবেন চয়নিকা চৌধুরীর ‘মাতাল হাওয়া’ ছবিতে। এতে তার নায়ক হয়ে আসছেন দক্ষ অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ। এই অভিনেতার সঙ্গে এর আগে শাবনূর প্রয়াত শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘বাঙলা’ ছবিতে জুটি বেঁধেছিলেন।
গল্পটা আমারই জীবনের মনে হলো
দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর আবার বড় পর্দায় কেন ফিরলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে উচ্ছ্বাস নিয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবনূর বললেন, গল্পটা শুনেই মনে হলো ‘আরে এত দেখছি আমারই জীবনের গল্প’, এক কথায় অনবদ্য ও চমৎকার। আর না করতে পারলাম না। একেবারে মাতাল হাওয়ায় ডুবে গেলাম। গল্পটা পারিবারিক বটে। একটু করে বলি…‘ছেলেরা মেয়ে দেখতে যাবে প্রেমের জন্য, আর মেয়েরা ছেলে দেখতে যাবে…’ থাক আর নাই বলি, বাকিটার জন্য দর্শকদের মনে সাসপেন্স তৈরি করে দিলাম…হা..হা..হা..।
আগে ফিগারটা আরেকটু ঠিক করে নেই
কখন দাঁড়াচ্ছেন মাতাল হাওয়ার ক্যামেরার সামনে, এই প্রশ্নের জবাবে শাবনূর বলেন, না, এত তাড়াহুড়ার কিছু নেই। আগে ফিগারটা একটু ঠিক করে নেই, একটু মুটিয়ে গেছি না, ফিটনেস ফিরিয়ে একেবারে নায়িকা হয়ে তবেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়াব। তাতে তো ২/১ মাস লেগেই যাবে।
শিল্পীদের ব্যাক করার কিছু নেই
দীর্ঘসময় পর প্রিয় চলচ্চিত্রে ব্যাক করার অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে শাবনূরের সাফ কথা, ‘শিল্পীদের ব্যাক করার কিছু নেই। একজন শিল্পী সব সময় তীর্থের কাকের মতো মুখিয়ে থাকেন একটি ভালো গল্পের জন্য। আর মনের মতো গল্প পেলেই কাজ শুরু করে দেন। আমিও এই অপেক্ষায় ছিলাম এতদিন। অবশেষে মনের সঙ্গে গল্প মিলে গেল, ব্যাস শুরু করে দিচ্ছি মাতাল হাওয়া।
শিল্পীদের বয়স বলেও কিছু নেই
শাবনূর বলে চললেন, ‘ও হ্যাঁ আরেকটা কথা কিন্তু চির সত্য, আর তা হলো শিল্পীদের বয়স বলেও কিন্তু কিছু নেই, যে কোনো বয়সে মনের মতো চরিত্র পেলে কাজে নেমে পড়তে পারে। শিল্পীরা কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে চির সবুজ, এ কথা মানতেই হবে। তাই আমার বয়স যতই হোক না কেন আমি অভিনয় করে যাব। আসলে আমাদের লাইফটাই এমন, মানে আমৃত্যু কাজে ডুবে থাকা’।
আবারও চলচ্চিত্রে ডুবে যাব
শাবনূর এবার আরেকটি সুখবর দিলেন। আর তা হলো তিনি আবারও চলচ্চিত্রের অভিনয়ে ডুবে যাবেন। দর্শক নন্দিত এই অভিনেত্রী বলেন, ‘প্রচুর নির্মাতা আমার কাছে গল্প নিয়ে আসছে। প্রতিটা গল্পই মনকে মাতাল করে দেওয়ার মতো। আমি কোনটা ছেড়ে কোনটা রাখব বুঝতে পারছি না। তাই আমার মন বলছে আবারও অভিনয়ে ডুবে যাই। এখন তাই করব বলে মনস্থির করেছি।’
নির্মাণের কথাও ভাবছি
শাবনূর চলচ্চিত্র নির্মাণে তার অতীত সিদ্ধান্তের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমি যখন চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলাম তখন চলচ্চিত্র জগতের অবস্থা কোনো দিক দিয়েই সুখকর ছিল না। এখন দেখে শুনে মনে হচ্ছে চলচ্চিত্রের সুদিন আবার ফিরতে শুরু করেছে। তাই স্থির করেছি এবার হয়তো নির্মাণের ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারি। তবে ভালো কিছু করার জন্য একটু সময় নিতেই পারি।’
আমি অভিতূত
প্রায় তিন বছর পর দেশে ফিরে কেমন লাগছে? এমন প্রশ্নের জন্যই যেন শাবনূর এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে বলে উঠলেন, কী বলব সবার সাড়ায় আমি মুগ্ধ, অভিভূত। আমার দর্শক ভক্ত, নির্মাতা, সহশিল্পী, সাংবাদিক, ছোটখাটো চরিত্রের অভিনয় শিল্পী, কণ্ঠশিল্পী সবাই যেভাবে আমার খোঁজখবর নিচ্ছেন, জন্মদিনে উইশ করছেন তাতে বলতে পারেন আমি এককথায় নির্বাক হয়ে গেছি। সবার এই ভালোবাসা নতুন করে পথ চলতে আমাকে বারে বারে উৎসাহ জোগাচ্ছে।
আইজেন বড় অভিমানী
নিজের একমাত্র পুত্র আইজেনকে নিয়ে খুবই আবেগী শাবনূর। তাকে নিয়ে আবেগ ছড়িয়ে বলেন, ও বড় অভিমানী এবং খুব মেধাবী। ইংরেজি-বাংলা মিলিয়ে ওর আধো আধো কথা শুনতে খুব ভালো লাগে। ওর মেধার কথাই বলি শুনুন, ওর বয়স এখন মাত্র নয় বছর। আর এ বয়সে দেখুন এয়ারপোর্টে এসে এবার যখন নামলাম ও আমাকে খুব টেককেয়ার করে নিয়ে এলো। ইমেগ্রেশনের ফরম ফিলাপ থেকে শুরু করে সবকিছুই করেছে আমার এতটুকু বয়সের আদরের আইজেন। আমার মনে হয়েছে আমি নই, ও-ই আমার গার্ডিয়ান। ওকে নিয়ে আমি খুব সুখী।
আমার জীবনের গল্পটা অন্যরকম
নিজের জীবনটাকে নিজের কাছে কেমন মনে হয়? এমন কথার জবাবে শাবনূরের তড়িৎ উত্তর হলো এমন, ‘একেকজন মানুষের জীবনের গল্প একেক রকমের। আমার জীবনের গল্পটা কিন্তু অন্যরকম। সবাই ছোটবেলায় খেলাধুলা করে, ঘুরে বেড়ায়, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ঝাল মুড়ি, বাদাম, আইসক্রিমসহ কত কী খায়, মেয়েরা ছোট বয়সে ছেলেদের সঙ্গে টাংকি মারে, প্রেম করে; আমি এসবের কিছুই পাইনি। যখন বুঝে ওঠার বয়স হলো তখনই ফিল্মে চলে এলাম। তাই এখন ছোট বেলাটাকে খুব মিস করি। শুধু তাই নয় ছোটবেলার দিনগুলোতে ফিরে যাওয়ারও চেষ্টা করি। গতবার যখন দেশে এসেছিলাম তখন ইচ্ছে হলো খোলা রাস্তায় রিকশায় চড়ে ঘুরে বেড়াই। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। বোরকা পরে রিকশায় চড়ে বাজার করলাম, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ঝাল মুড়ি কিনে খেলাম। কেউ কিন্তু আমাকে একটুও চিনতে পারেনি। আরেকদিন ইচ্ছা হলো মুড়ির টিন মার্কা বাসে চড়ে মায়ের বাসায় যাব। বাসে চড়তে কেমন লাগে দেখতে চাই। তাই আমার এক বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে চড়লাম শ্যামলী বাসে…মজা করে ঘুরে বেড়ালাম ঢাকা শহরের রাজপথে…উফ সে কী আনন্দ। মনের অজান্তে গেয়ে ওঠলাম- ‘ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো…।’ সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।