১৯২৪ সাল ছিল বিজ্ঞানের ইতিহাসে বাঙালি জাতির এক গৌরবের বছর। শতবর্ষ আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের রিডার (সহযোগী অধ্যাপক) সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কালজয়ী প্রবন্ধ, বোস–আইনস্টাইন সংখ্যাতত্ত্ব (অনেকে এটিকে বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন বা পরিসংখ্যানও বলে থাকেন) প্রকাশিত হয়।
কার্জন হলে বসে সত্যেন বসু পদার্থবিদ্যার অস্বস্তিকর বন্ধ্যত্বের ওপর কাজ করছিলেন। সাধারণ পরিসংখ্যান তাঁর ভালোভাবেই জানা ছিল। চিরায়ত বলবিদ্যার সাহায্যে চিরায়ত বস্তুর গতিধর্ম শ্রেণিকক্ষে পড়াতেন আর চিন্তা করতেন, সম্পূর্ণ কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সাহায্যে কীভাবে পারমাণবিক ও উপপারমাণবিক বস্তুকণার গতিবিদ্যা ও তার ধর্মাবলির একটি কাঠামো দাঁড় করাবেন।
তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যায় (যা পরীক্ষালব্ধ জগতেও স্বীকৃত) পারমাণবিক ও উপপারমাণবিক বস্তুকণাকে মোটা দাগে তিন ভাগে ভাগ করা যায়: যেসব বস্তুকণার ঘূর্ণন (স্পিন) নেই, যেগুলোর ঘূর্ণন আছে এবং যেগুলোর আপেক্ষিক মান ১/২, ২/৩, ২/৫ (অর্থাৎ ভগ্নাংশ)। বসু তাঁর তত্ত্বে নতুন এক বস্তুকণার কথা চিন্তা করলেন। তা হলো, কণাটির ঘূর্ণন থাকবে, কিন্তু তার আপেক্ষিক মান হবে ০, ১, ২, ৩ এবং যথারীতি পূর্ণসংখ্যা। ফোটন (আলোক কণা) ছিল বসুর চিন্তাচেতনার মূল জায়গা। এমনই একধরনের নতুন বস্তুকণাকে তিনি তাঁর তত্ত্বে ব্যবহার করলেন। অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে সম্পূর্ণ কোয়ান্টাম চিন্তাচেতনা দিয়ে প্ল্যাঙ্কের নতুন ফর্মুলা (সূত্র) আবিষ্কার করলেন।
আইনস্টাইন জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে সাইটশ্রিফট ফুয়র ফিজিক জার্নালে প্রবন্ধটি পাঠালেন ১৯২৪ সালে। এর নাম দিলেন, ‘প্ল্যাঙ্কের সূত্র ও আলোক কণিকার সঠিক অনুমান’। প্রবন্ধটি কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন না করে প্রকাশ করার ব্যবস্থা করলেন তিনি। উল্লেখ্য, প্রবন্ধটির একমাত্র লেখক ছিলেন সত্যেন বোস, তবে আইনস্টাইনের সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে প্রবন্ধটি প্রকাশের পর সারা জগতে তার পরিচিতি হলো বোস–আইনস্টাইন কোয়ান্টাম সংখ্যাতত্ত্ব হিসেবে।
শুধু কোয়ান্টাম তত্ত্ব ও ধারণা থেকে প্ল্যাঙ্কের সূত্রের এক নতুন উদ্ভাবন ঘটালেন ঢাকার সত্যেন বোস। প্রায় দুই যুগ ধরে যে অস্বস্তি ও বন্ধ্যত্ব চলে আসছিল পদার্থবিদ্যার সংখ্যাতত্ত্ব ও তার প্রয়োগের মধ্যে, সেটা থেকে তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যা এক অবিস্মরীয় অধ্যায়ে প্রবেশ করল। আইনস্টাইনসহ জগতের পদার্থবিদ্যার রথি-মহারথীরা বোসের কোয়ান্টাম সংখ্যাতত্ত্বের ফলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।