আন্তর্জাতিক ডেস্ক: থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে থেকে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা থেকে এটি কার্যকর হয়েছে। রাজতন্ত্রে বিরুদ্ধে চলমান শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি থামানোর লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বড় ধরনের যে কোনও সমাবেশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বুধবার রাতভর বিক্ষোভের পর বৃহস্পতিবার সকালে আন্দোলনকারীদের শীর্ষস্থানীয় তিন নেতাসহ বেশকিছু আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে অন্তত ২০ জনকে গ্রেফতারের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত বিক্ষোভকারীদের শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা হচ্ছেন মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী অ্যানন নামপা, পেঙ্গুইন নামে সুপরিচিত অ্যাক্টিভিস্ট পারিত চিওয়ারাক এবং পানুসায়া সিথিজিরাওয়াত্তানকুল।
টেলিভিশনে প্রচারিত এক ঘোষণায় পুলিশ জানিয়েছে, ‘শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে’ জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন’।
মূলত শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীদের দাবি, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং রাজার ক্ষমতা কমিয়ে আনা।
গত আগস্টে থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনসমক্ষে প্রথমবার সমালোচনা করে এবং প্রথাগত ধারার সংস্কারের দাবি তুলে আলোচনায় আসেন বিক্ষোভকারীদের নেতা অ্যানন। ওই মাসের শেষদিকে রাজতন্ত্রের নিয়ম সংস্কারের ১০ দফা দাবি পেশ করে আলোচনায় আসেন পানুসায়া সিথিজিরাওয়াত্তানকুল। তাদের তাদের মুখ বন্ধ করে আন্দোলন দমন করতে চাইছে কর্তৃপক্ষ।
নতুন আদেশে কী বলা হচ্ছে?
প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা’র জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত আদেশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। এতে বলা বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা ‘বিশৃঙ্খলা ও সংঘাতকে উস্কে দেয়’ এমন একটি পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে এবং ‘রাজকীয় গাড়িবহরে’ বাধা দিয়েছে।
আদেশটি কার্যকর হওয়ার কিছুক্ষণ পর দাঙ্গা পুলিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিসের বাইরে থাকা বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। সে সময় কেউ কেউ প্রতিরোধ তৈরির চেষ্টা করলেও বলপূর্বক তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়ার পরও রাস্তায় শত শত পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে।
আদেশে একসঙ্গে চারজনের বেশি মানুষের জড়ো হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি মিডিয়ার ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
সরকারি আদেশে ‘আতঙ্ক উদ্রেককারী বা ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য বিকৃত করে ভুল বোঝাবুঝি তৈরির মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা অথবা শান্তি-শৃঙ্খলার ওপর প্রভাব ফেলে’, এ রকম কোনও খবর প্রচার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই আদেশ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ‘নিজেদের বাছাইকৃত যে কোনও এলাকায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারবে।
কেন বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা?
গণতন্ত্রের সমর্থনে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে চলতে থাকা আন্দোলন থাইল্যান্ডের ক্ষমতাসীনদের জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা সাবেক সেনাপ্রধান ও ২০১৪ সালে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল করা জেনারেল প্রায়ুথের পদত্যাগ দাবি করছে। গত বছর বিতর্কিত এক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হন জেনারেল প্রায়ুথ।
অগাস্টে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর রাজতন্ত্র সংস্কারের দাবি জোরালো হতে থাকে। বর্তমানে থাই আইন অনুযায়ী, রাজতন্ত্রের সমালোচনা করা বেআইনি। এই ধারা দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছে।
২০১৪ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে জেনারেল প্রায়ুথের বিরুদ্ধে বহু বিক্ষোভ হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারিতে আদালত নতুন করে গণতান্ত্রিক একটি দল বিলুপ্ত করার আদেশ দেওয়ার পর এই আন্দোলন নতুন গতি পায়।
ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টি ২০১৯ সালের নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। দলটি পার্লামেন্টের তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। তবে ওই নির্বাচনে জয়ী হয় সেনা সমর্থিতরা। তাদের ওই বিজয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
২০২০ সালের জুলাই থেকে নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়ে আসছে। গত সপ্তাহে ব্যাংককে হওয়া বিক্ষোভে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়।
থাইল্যান্ডের বাস্তবতায় রাজতন্ত্রের সংস্কারের দাবি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কেননা, দেশটিতে রাজতন্ত্রের সমালোচনার সাজা হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সূত্র: বিবিসি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।