জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের পাবনা জেলায় রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের একটি শাখায় দশ কোটি টাকা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে ওই শাখার ব্যবস্থাপকসহ তিন কর্মকর্তাকে আটকের পর গতকাল আদালতে উপস্থাপন করেছে পুলিশ।
সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেছেন ব্যাংকের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তারা বৃহস্পতিবার রাতে ওই তিনজনকে আটকের পর গতকাল শুক্রবার আদালতে পাঠিয়েছেন। খবর বিবিসি বাংলা
ওদিকে ওই ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্যাংকটির রাজশাহী কার্যালয় থেকে একটি অডিট দল সম্প্রতি সাঁথিয়ার কাশিনাথপুর শাখায় গিয়ে ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকার হিসেবের গরমিল পান এবং এ বিষয়ে ওই কর্মকর্তারা কোন গ্রহণযোগ্য জবাব দিতে পারেননি বলে তাদের পুলিশে দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকের রাজশাহী সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার আফজাল হোসেন বলেছেন, ঘটনাটি নিয়ে আজ শুক্রবার থেকেই আরও বিস্তারিত তদন্ত শুরু হয়েছে যাতে করে এর পেছনে আরও কেউ আছে কি-না তা বের করা যায়।
তিনি বলেন, হেড অফিস থেকে টিম এসে ইনকোয়ারি শুরু করে দিয়েছে। পাশাপাশি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
যদিও বাংলাদেশে ব্যাংকের শাখাগুলোতে এ ধরণের অনিয়মের খবর নতুন কিছু নয়। এ ধরণের অনিয়ম ঠেকাতে সাধারণত কি ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয় জানতে চাইলে কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিরীক্ষা কার্যক্রম শক্তিশালী হচ্ছে বলেই এখন এগুলো বেশি ধরা পড়ছে।
সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকের (এসআইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম বলেন, “প্রতিদিনের ভল্ট ও কাউন্টারের টাকার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব ও নিরাপত্তার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের অডিট করা হয়। তারপরেও কেউ কেউ অসাধুতার চেষ্টা হয়তো করে। সব ব্যাংকই এগুলো প্রতিরোধে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।”
শাখা পর্যায়ে অনিয়ম কেমন?
বাংলাদেশে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ব্যাংকের যেসব শাখা আছে সেগুলোর প্রায় সবই এখন অনলাইন ভিত্তিক। অর্থাৎ হেড অফিস, জোনাল অফিস এবং শাখাগুলো একটি আরেকটির সাথে অনলাইনে সম্পৃক্ত। ফলে প্রতিটি ব্যাংকের ‘নিজস্ব সিস্টেমে’ প্রতিটি কার্যক্রম মনিটর কিংবা দেখার সুযোগ আছে ঊর্ধ্বতনদের।
এসআইবিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম বলছেন, গ্রাম ও শহরের মধ্যে এখন আর আলাদা কিছু নেই। প্রতিটি লেনদেনই মনিটরিংয়ের আওতায় রাখার চেষ্টা করা হয়।
তিনি আরো বলেন, “এর মধ্যেও হয়তো অসাধুরা কোন উপায় বের করার চেষ্টা করে। সেগুলো প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি ব্যাংকই কাজ করছে।”
ব্যাংকাররা বলছেন, প্রতিদিনের ব্যাংকিং কার্যক্রমের একটি ‘অফসাইড সুপারভিশন’ হয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থার মাধ্যমে। এছাড়া প্রতিটি শাখায় ইন্টারনাল ইন্সপেকশন অনেকটা নিয়মিত ও বাধ্যতামূলক কাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি একটি ব্যাংকের একজন শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, সাধারণত হেড অফিস থেকে টিম যায়। কাদের ঋণ দেয়া হয়েছে সেগুলো যাচাই বাছাই করে। হিসেব পত্র দেখে।
তবে ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জে শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন এমন একজন ব্যাংকার বলেছেন, বিচিত্র ধরনের অনিয়ম দেখা যায় ব্যাংকগুলোতে এবং কখনো কখনো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের উঁচু পর্যায়ের লোকজনের চাপও থাকে এসব অনিয়মের পেছনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকায় কর্মরত একটি বেসরকারি ব্যাংকের একজন শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, “বিচিত্র টাইপের জিনিস হয়। যেমন ধরেন একজন গ্রাহকের হিসেবে অনেক দিন লেনদেন হয় না। বা ওই গ্রাহক দেশের বাইরে থাকেন। ব্যাংকের একজন সেটা জেনে গোপনে চেক ইস্যু করে স্বাক্ষর মিলিয়ে টাকা তুলে নিলো। ওই গ্রাহক হয়তো টের পাবেন কয়েক বছর পর দেশে এলে।”
তিনি জানান, ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেয়া, জমি নেই অথচ জমির বিপরীতে ঋণ দেয়া, ভুয়া চেকে টাকা তোলার সুযোগ করে দেয়া কিংবা কেউ লোনের টাকা জমা দিলেও সেটি কৌশলে হিসেবে না আনা- এ ধরনের কাজগুলো শাখা পর্যায়ে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা করে থাকেন।
তিনি আরো বলেন, “তবে ব্যাংকে কোন একজন একা কিছু করতে পারে না। একটা চক্র কাজ করে। অনেক সময় ব্যাংকের ওপর মহলের কারও চাপেও ভুয়া ঋণ দিতে বাধ্য হন কর্মকর্তারা। চাকরি বাঁচাতে কিংবা সুযোগের আশায় তারা তাতে জড়িয়ে পড়েন।”
যদিও শাখাগুলোতে প্রতিদিনের প্রতিটি কাজের চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের একটি সিস্টেম চালু আছে। সিস্টেমে একজন একজন লেনদেন করবে, আরেকজন কর্মকর্তা সেটা দেখে ইনপুট দিয়ে থাকেন। ফলে একাধিক ব্যক্তি জড়িত না থাকলে দুর্নীতি কিছুটা কঠিন বলেই দাবি করছেন ব্যাংকাররা।
জাফর আলম বলছেন, দুর্নীতি বা অনিয়ম ঠেকাতে দু ধরণের কাজ হয়- একটি হলো নগদ অর্থের নিরাপত্তা, আরেকটি হলো বিভিন্ন ধরণের অডিট।
তিনি জানান ব্যাংকের ভল্ট ও শাখার অভ্যন্তরে কাউন্টারের নগদ অর্থের প্রতিদিন হিসাব মেলানো হয়। শাখার ক্যাপাসিটির অতিরিক্ত অর্থ হলে সেটি যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক আছে সেখানে রাখা হয়, অন্যথায় সোনালী ব্যাংকের সহায়তা নেয় অন্য বেসরকারি ব্যাংকগুলো।
তিনি আরো জানান, “এছাড়া ম্যানেজারস সেলফ অডিট, জোনাল অডিট এবং ব্যাংকের অডিট ডিভিশনের অর্ধ বার্ষিক ও বার্ষিক অডিট হয়ে থাকে। ফলে দুর্নীতি বা অনিয়ম করে পার পাওয়া সহজ বিষয় নয়। তবে এরপরেও হয়তো অনেকে অসাধুতার চেষ্টা করে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, টিআইবির উদ্বেগ প্রকাশ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।