ছোট ছোট কিস্তিতে বড় সঞ্চয়ের পথে হাঁটতে চাইলে ডিপোজিট পেনশন স্কিম বা ডিপিএস হতে পারে আপনার জন্য সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। তবে প্রশ্ন আসে—কোন ব্যাংকে ডিপিএস করলে সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে শুধু ইন্টারেস্ট রেট নয়, ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং, নিরাপত্তা এবং মেয়াদ বিবেচনা করাও জরুরি।
কোন ব্যাংকে ডিপিএস করলে বেশি লাভ পাবেন
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩-২৪ সালের সর্বশেষ ক্রেডিট রেটিং অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন গ্রেডে ভাগ করা হয়েছে, যার মধ্যে Triple A (AAA), Double A (AA), A+ শ্রেণির ব্যাংকগুলোর স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা সবচেয়ে ভালো। এসব ব্যাংকে ডিপিএস করলে আপনি কেবল বেশি সুদই পাবেন না, নিরাপত্তাও পাবেন।
Table of Contents
নিচে বিভিন্ন ব্যাংকের ডিপিএস পরিকল্পনা ও মুনাফার একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো:
- ইস্টার্ন ব্যাংক (AAA রেটিং): ১-৬ বছর: ৯.২৫%, ৭-২০ বছর: ৯%, ১০ বছরে লাভ: প্রায় ৳১,৯৪,৯৬০
- ব্র্যাক ব্যাংক (AAA): ৩-১০ বছর: ৯%, ১০ বছরে লাভ: প্রায় ৳১,৯৪,৯৬৬
- ডাচ-বাংলা ব্যাংক (AAA): সুদের হার: ৭%, ১০ বছরে লাভ: ৳১,৬৪,১২৮
- প্রিমিয়ার ব্যাংক (AAA): ১০ বছর: ৯.৭৫%, ১০ বছরে লাভ: ৳২,০০,৫৭৮
- প্রাইম ব্যাংক (AA): সব মেয়াদে ৯%, ১০ বছরে লাভ: প্রায় ৳১,৯৪,০০০
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (A+): ১০ বছরে লাভ: ৳১,৮৭,৯২১
- ওয়ান ব্যাংক (A+): ১০ বছর: ১১%, লাভ: প্রায় ৳২,১৪,০০৪
- IFIC ব্যাংক (A+): সব মেয়াদে ১০%, লাভ: প্রায় ৳১,৯৯,১০৯
- মার্কেন্টাইল ব্যাংক (A+): ১০ বছর: ১২%, লাভ: প্রায় ৳২,৩২৩৯
ডিপিএস বাছাইয়ের সময় যে বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন
কোন ব্যাংকে ডিপিএস করবেন তা নির্ধারণের আগে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আপনার বিবেচনায় রাখা উচিত:
- ক্রেডিট রেটিং: AAA ব্যাংকগুলো সবচেয়ে নিরাপদ।
- সুদের হার: সুদের হারের ভিত্তিতে প্রতি মাসে কত টাকা জমা করলে কত লাভ হবে তা বুঝতে হবে।
- মেয়াদ: মেয়াদ বেশি হলে লাভও বেশি। তবে দীর্ঘমেয়াদী স্কিমের জন্য ব্যাংকের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
- কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট ও কর: সব ব্যাংক একইভাবে সুদ গণনা করে না। ট্যাক্স কাটা হয় কি না সেটাও জানুন।
বেশি লাভ বনাম নিরাপত্তা—কোনটা বেছে নেবেন?
আপনি যদি কেবল লাভ দেখতে চান, তাহলে মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ও IFIC ব্যাংক এগিয়ে। তবে নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব চাইলেই ইস্টার্ন ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক অন্যতম সেরা। অর্থাৎ আপনার লক্ষ্য যদি দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিমুক্ত সঞ্চয় হয়, তবে Triple A ব্যাংকই সেরা।
২০২৫ সালের ডিপিএস পরিকল্পনার প্রেক্ষাপট
বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে অনেকেই সঞ্চয়ের নিরাপদ মাধ্যম খুঁজছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদিত এবং সরকারি নীতিমালার আওতায় পরিচালিত ডিপিএস স্কিমগুলো তাই ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই স্কিমগুলোতে নিয়মিতভাবে সঞ্চয় করে শুধু ভবিষ্যতের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়, বরং বড় অঙ্কের অর্থ গঠনের সুযোগও তৈরি হয়।
নির্বাচনের পূর্বে আরও যেসব তথ্য জেনে রাখা দরকার
- কিছু ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের জন্য বোনাস ইন্টারেস্ট বা উৎসবকালীন অফারও দিয়ে থাকে।
- বিভিন্ন ব্যাংকের ওয়েবসাইট বা বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে নির্ভরযোগ্য ডেটা সংগ্রহ করুন।
- অর্থনীতি সংক্রান্ত আরও খবর বা ব্যবসা-বাণিজ্য বিভাগ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে আপডেট থাকুন।
আপনার মাসিক সঞ্চয় পরিকল্পনা নির্ভর করছে আপনার লক্ষ্য, নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্বের উপর। কোন ব্যাংকে ডিপিএস করলে সবচেয়ে বেশি লাভ হবে, তা এই বিষয়গুলো বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিন।
নতুন করোনা ভাইরাসের লক্ষণ: কী জানা দরকার এবং কীভাবে নিরাপদ থাকবেন
❓ প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
ডিপিএস কী?
ডিপিএস অর্থ ডিপোজিট পেনশন স্কিম, যেখানে আপনি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দিয়ে নির্দিষ্ট সময় পরে একটি বড় অঙ্কের অর্থ তুলতে পারেন।
সবচেয়ে বেশি লাভ কোথায় পাওয়া যায়?
মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক এবং IFIC ব্যাংক ২০২৫ সালের হিসাবে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন দিচ্ছে। তবে স্থায়িত্বের জন্য AAA ব্যাংকগুলো ভালো।
ডিপিএস করার আগে কী বিবেচনা করবো?
ব্যাংকের রেটিং, সুদের হার, মেয়াদ, কম্পাউন্ড ইন্টারেস্টের পদ্ধতি এবং কর কর্তনের নিয়ম বিবেচনায় রাখা উচিত।
ডিপিএস কি নিরাপদ?
বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ব্যাংকগুলোর ডিপিএস স্কিম নিরাপদ, তবে ব্যাংকের রেটিং অনুযায়ী ঝুঁকি কম-বেশি হতে পারে।
ডিপিএসে লাভ কিভাবে গণনা হয়?
মাসিক কিস্তির উপর ভিত্তি করে কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট পদ্ধতিতে লাভ গণনা হয়। কিছু ব্যাংকে কর কাটা হতে পারে, যা লাভের পরিমাণে প্রভাব ফেলে।
ডিপিএসে কর কাটা হয় কি?
হ্যাঁ, অনেক ব্যাংকে নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি হলে ১০-১৫% হারে কর কাটা হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।