জুমবাংলা ডেস্ক : ব্যাংক একীভূতকরণে আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে মনে করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড না মানায় প্রস্তাবিত একীভূতকরণ প্রক্রিয়াগুলো স্থগিত করতে বলেছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এই মন্তব্য করেছে।
এতে সংস্থাটি বলে, ব্যাংকিং খাতের দুর্বল ব্যাংকগুলো রক্ষার নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একীভূতকরণের পথে হাঁটতে শুরু করেছে, যা আর্থিক খাতে সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিবেচিত হওয়ার কথা। কিন্তু সংবেদনশীল ও জটিল এই কাজটি করতে আন্তর্জাতিকভাবে অনুসৃত মানদণ্ড ও রীতিনীতি এবং এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজের ঘোষিত নীতিমালা না মেনে তড়িঘড়ি করা হচ্ছে।
টিআইবি বলছে, স্বেচ্ছাচারীভাবে চাপিয়ে দেওয়া কয়েকটি ব্যাংক একীভূতকরণের ঘোষণা এবং এ প্রক্রিয়ায় থাকা ভালো ব্যাংকগুলোর অস্বস্তি, একীভূত হতে কোনো কোনো দুর্বল ব্যাংকের অনীহা, সব মিলিয়ে ব্যাংকিং খাতে শঙ্কা, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা গভীরতর করেছে। যা একীভূতকরণের পুরো প্রক্রিয়াটিকে শুরুর আগেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
টিআইবি মনে করে, প্রস্তাবিত একীভূতকরণের মাধ্যমে খেলাপি ঋণে জর্জরিত দুর্বল ব্যাংকের মন্দ ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং জবাবদিহিসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে যে ধরনের অস্পষ্টতা তৈরি করা হয়েছে, তা সংকটের মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে ঋণখেলাপি ও জালিয়াতির জন্য দায়ী মহলকে “দায়মুক্তি” প্রদানের নামান্তর।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, একটি দুর্বল ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকই নিজ উদ্যোগে একীভূত হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি, আবার এ প্রক্রিয়ায় নাম আসা সবল ব্যাংকগুলো স্বীয় উদ্যোগে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে এতে যুক্ত হতে সম্মত হয়েছে তাও নয়। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়াটি প্রথম থেকেই স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা ঘোষিত নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
তিনি বলেন, ‘তা ছাড়া, দুর্বল ব্যাংকের সম্পদ ও দায়-দেনার পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন ছাড়া আপাত সবল ব্যাংকের ঘাড়ে একীভূতকরণের নামে ঋণখেলাপি ও জালিয়াতির বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত? অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, যা ঘটছে তা ক্যান্সার চিকিৎসায় প্যারাসিটামল প্রয়োগের নামান্তর। একীভূতকরণের নামে একদিকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ও জালিয়াতির জন্য যারা দায়ী তাদের যেমন সুরক্ষা দিয়ে খেলাপি ঋণের সংস্কৃতিকে গভীরতর করা হচ্ছে, অন্যদিকে সবল ব্যাংকগুলোর সাফল্যের পরিণামে খারাপ ব্যাংক হজম করিয়ে দেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চলছে।’
দুর্বল ব্যাংককে বাঁচানোর এই প্রক্রিয়া হিতে বিপরীত হবে কি-না আশঙ্কা প্রকাশ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘একীভূতকরণের আলোচনায় সরকারি-সরকারি, বেসরকারি-সরকারি এবং বেসরকারি-বেসরকারি তিন ধরনের ব্যাংকই রয়েছে। এক্ষেত্রে কোন বিবেচনায় এই ব্যাংকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একীভূত করার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে, কিংবা কোন সবল ব্যাংকের সঙ্গে কোন দুর্বল ব্যাংক একীভূত হবে, তা কীভাবে ঠিক করা হয়েছে- তাও স্পষ্ট নয়।’
টিআইবি মনে করে, ব্যাংকিং খাতের মূল সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজন কার্যকর জবাবদিহি-ভিত্তিক সুশাসন। এটি নিশ্চিত করা ছাড়া, শুধু একীভূত করলেই সংকট মোকাবিলা করা যাবে বা গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা পাবে কিংবা খেলাপি ঋণ কমে আসবে- এমন ভাবনা সত্যিই অলীক।’
একীভূতকরণ নীতিমালায় দুর্বল ব্যাংকের পরিচালকদের পাঁচ বছর পর পুনরায় একীভূত হওয়া ব্যাংকের পর্ষদে ফেরত আসার সুযোগের সমালোচনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
তিনি বলেন, ‘এ বিধান দুর্বল ব্যাংকের সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির বদলে পুরস্কৃত করা এবং এক ধরনের দায়মুক্তি দেবার বিধান। পাশাপাশি, দুর্বল ব্যাংকের নিরীক্ষাকালে নতুন কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির চিত্র উঠে এলে সে বিষয় গোপন রাখার যে বিধান নীতিমালায় রাখা হয়েছে, তা শুধু আর্থিক অনিয়মের চিত্রকেই ধামাচাপা দেবে না, একই সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির মুখোমুখি করার প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হবে। যা এক কথায় অন্যায়কে সুরক্ষা দেওয়ার শামিল।’
এভাবে একীভূতকরণের নামে যা ঘটছে, তা হতাশাজনক এবং ঋণখেলাপিদের হাতে ব্যাংকিং খাতের অব্যাহত জিম্মিদশার পরিচায়ক বলে জানিয়েছে টিআইবি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।