জুমবাংলা ডেস্ক : ব্যাংক একীভূত হলে দুর্বল ব্যাংকে রাখা আমানত ফেরত দেওয়া হবে, নাকি সবল ব্যাংকে তার আমানত হিসাব স্থানান্তর হবে– এ প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী একীভূত হওয়া ব্যাংকে আমানত হিসাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থানান্তর হবে। তবে আমানত তুলে নেওয়ার বিকল্পও থাকবে। আর যে ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে, ওই ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী আমানতের সুদহার নির্ধারিত হবে। তবে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করায় কোনো ভালো ব্যাংকের অবস্থা যেন খারাপ না হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেজন্য বিভিন্ন নীতি সহায়তা দেবে। এ নিয়ে দৈনিক সমকালের করা প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সুশাসন ঘাটতি, উচ্চ খেলাপি ঋণ, ব্যবস্থাপনার অদক্ষতাসহ বিভিন্ন কারণে আস্থাহীনতায় পড়েছে ব্যাংক খাত। এতে পুরো ব্যাংক খাতে চরম তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি উত্তরণে খুব খারাপ অবস্থায় থাকা ৭ থেকে ১০টি ব্যাংক একীভূত করার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। একীভূতকরণ হলে আমানতকারীর কী হবে, প্রচলিত ধারার ব্যাংকের সঙ্গে শরিয়াহ ব্যাংক এক হবে কীভাবে, নিয়মিত ঋণগ্রহীতার প্রকৃতিতে পরিবর্তন আসবে কিনা– এসব প্রশ্ন সামনে আসছে। গত বৃহস্পতিবার এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে নাজুক অবস্থায় থাকা পদ্মা ব্যাংক একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্তের পর এ আলোচনা আরও জোরালো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, দুর্বল কয়েকটি ব্যাংকের আমানতের একটি অংশ বছরের পর বছর ফেরত পাচ্ছে না। এখন ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের ফলে সেই অনিশ্চয়তা কেটে যাবে। আমানত স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থানান্তর হবে। আমানত তুলতেও পারবে। তবে একবারে যদি সবাই আমানত ফেরত নিতে আসে, তাহলে তো ফেরত দিতে পারবে না। সুতরাং ধাপে ধাপে দেওয়ার জন্য একটি কর্মসূচি দেবে।
তিনি বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা ও জালিয়াতি বা কমিশন নিয়ে ঋণ দেওয়ার কারণে ব্যাংক দুর্বল হয়েছে। এখন একটি ভালো ব্যাংকের দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে খারাপ ব্যাংক ভালো হতে পারে। খেলাপি ঋণ কেনার জন্য আলাদা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি খোলার একটি আইন হচ্ছে। তখন খেলাপি ঋণ কিনে নিলে সংকট কমবে। তিনি জানান, একীভূতকরণের প্রথমেই একটি অডিট ফার্ম দিয়ে নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাংকটির দায় ও সম্পদের প্রকৃত হিসাব বের করা হবে। এসবের ভিত্তিতে একেক ব্যাংকের জন্য একেক রকম নীতি সহায়তা ও ছাড় দেওয়া হবে। ফলে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার কারণে কোনো ভালো ব্যাংক খারাপ হবে না, তা বলা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক নিজ থেকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে খারাপ ব্যাংক একীভূত হওয়ার জন্য আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। আর ডিসেম্বরের তথ্যের ভিত্তিতে আগামী বছরের মার্চ থেকে বাধ্যতামূলক একীভূতকরণের ঘোষণা দিয়েছে। এরই মধ্যে ইসলামী ধারার এক্সিমের সঙ্গে প্রচলিত ধারার পদ্মা ব্যাংকের একীভূত করার ঘোষণা এসেছে। এ ছাড়া প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আরও কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একীভূতকরণের আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।
পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রিয়াজ খান বলেন, পদ্মা ব্যাংকে ক্ষুদ্র আমানত ফেরত দেওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। প্রাতিষ্ঠানিক আমানত নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তবে একীভূতকরণের ফলে আমানতকারীর অর্থ আরও নিরাপদ হবে। এ প্রক্রিয়ায় বড় আমানতকারীদের মধ্যে একটা স্বস্তি ফিরেছে। তিনি বলেন, খারাপ হওয়া ঋণের সবই দেওয়া হয়েছিল ফারমার্স ব্যাংক থাকা অবস্থায়। সাধারণভাবে একটি দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণের সময় বিভিন্ন নীতি সহায়তা দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও হয়তো সেরকম কিছু করা হবে।
জানা গেছে, খারাপ সম্পদের বিপরীতে বিভিন্ন ছাড় দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে খারাপ ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতির ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) এবং বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণে (এসএলআর) ছাড় দেওয়া হবে। আবার খেলাপি ঋণের বিপরীতে সাধারণভাবে যে হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ করতে হয়, এ ক্ষেত্রে রাখতে হবে কম। এর বাইরেও নানা নীতি সহায়তা দেওয়া হবে।
এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, পদ্মা ব্যাংক একীভূতকরণের ফলে আমানতকারীর এক টাকাও মার যাবে না। বরং আমানত আরও সুরক্ষিত হবে। তিনি বলেন, ‘আগামী সোমবার দুই ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হলো একীভূতকরণের প্রথম ধাপ। এর পর কয়েক ধাপে এটা কার্যকর হবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করা সময়সাপেক্ষ, তবে আমরা চেষ্টা করব যত দ্রুত এটা কার্যকর করা যায়।’
মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা পাবে ‘নগদে’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।