তাকী জোবায়ের: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্বে দেশের আর্থিক খাতের ক্যানসার হিসেবে চিহ্নিত ‘খেলাপি ঋণ’ যখন কমতির দিকে তখন এই উদ্যোগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অগ্রণী ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিসেম্বর ভিত্তিক হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমেছে ৯ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। বছর শেষে পুরো ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমলেও অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি বেড়েছে ১ হাজার ২২২ কোটি টাকা। এতে, খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে তা বিঘ্নিত হয়েছে।
ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. মুরশেদুল কবীরের আমলে খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২২ সালের আগস্টে শীর্ষ নির্বাহীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। ওই বছরের ডিসেম্বরে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয় ১৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৯ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এসে এটা বেড়ে হয়েছে ১৮ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে ১৭ দফার রোডম্যাপ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কমিয়ে ১০ শতাংশ ও বেসরকারি খাতে ৫ শতাংশে নামানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। ব্যাংকিং খাতে করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে সীমাতিরিক্ত, বেনামি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ঋণ বিতরণ শূন্যে নামিয়ে আনার কথাও বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই সিদ্ধান্তগুলো আসে যেখানে সভাপতিত্ব করেন গভর্নর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে পুরো ব্যাংক খাতে ইতিবাচক সাড়া পড়লেও এর ব্যতিক্রম এক সময়ে দেশের ব্যাংক খাতের অগ্রে থাকা ব্যাংক অগ্রণী।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশঙ্কা, যোগ্য নেতৃত্ব না আসলে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই ব্যাংকটি বিডিবিএলের মতো সংকটে পড়তে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) খেলাপি ঋণ প্রায় এক শতাংশ কমলেও ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়েছে অগ্রণীর। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ১৬ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা যা বিতরণকৃত ঋণের ২৪ শতাংশ। তিন মাসের ব্যবধানে অগ্রণীর খেলাপি বেড়ে হয়েছে ২৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে অগ্রণীর খেলাপির হার ছিল ২২ শতাংশ।
দিন দিন ব্যাংকটির আর্থিক ভিত্তি সংকটাপন্ন হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে কথা হয় বাংলাদেশ ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে। তারা বর্তমান সংকটের বেশ কয়েকটি কারণ জানিয়েছেন। এর মধ্যে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ব্যাংকটির এমডি মুরশেদুল কবীরের নেতৃত্বের দুর্বলতা ও অদূরদর্শীতাকে। তারা মোটা দাগে জানিয়েছেন, মুরশেদুল কবীর ব্যবসায়ীবান্ধব নন এবং ব্যাংকিং বুঝেন না। যে কারণে অনেক ভালো ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান অন্য ব্যাংকে চলে গেছে। পাশাপাশি দূর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ পরিচর্যা করতে না পাড়ায় এগুলো ব্যাংক খাতের জন্য আরো বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মাঝেও তিনি আস্থার জায়গা তৈরি করতে পারেননি। তার গত ১৮ মাসের মেয়াদকালে ৫ শতাধিক কর্মকর্তাকে বদলি করে পুরো ব্যাংকে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছেন। যে কারণে ব্যাংকাররা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি অদক্ষ ও অসৎ মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসিয়েছেন যারা তাকে ভুল পথে পরিচালিত করছেন।
মুরশেদুল কবীরের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড বিব্রত করেছে ব্যাংক খাতের অন্য শীর্ষ নির্বাহীদেরকেও। আদালতের নির্দেশ অমান্য করায় সম্প্রতি মুরশেদুল কবীরকে ৩ মাসের সাজার রায় দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত, আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে যা পরে স্থগিত হয়েছে।
ব্যাংকে খেলাপি বাড়ার কারণ জানতে মো. মুরশেদুল কবীরের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি যোগাযোগ করেননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।