বাংলাদেশের রেলপথে আবারো দেখা দিলো এক উদ্বেগজনক দৃশ্য – ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা। শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে ঘটলো আরেকটি লাইনচ্যুতির ঘটনা। যাত্রীরা আতঙ্কিত, এবং প্রশ্ন উঠছে – নিরাপত্তা কি যথেষ্ট?
ট্রেন লাইনচ্যুত: দুর্ঘটনার ধারাবাহিকতা উদ্বেগজনক
আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে শনিবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে কনটেইনার ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এই ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রেলওয়ে সুপারিনটেনডেন্ট মো. নুরুন্নবী জানিয়েছেন, “ঢাকা অভিমুখী কনটেইনার ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে না। দুর্ঘটনায় পড়া বগিটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।” এই ঘটনা আরও উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়ায় কারণ এর একদিন আগেই, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পৈরতলা এলাকায় ঘটে একই ধরনের দুর্ঘটনা।
Table of Contents
সেই দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা একটি কনটেইনার ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে, যার ফলে কয়েক ঘণ্টার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে উদ্ধারকারী ট্রেন কোচ সরিয়ে নিলে স্বাভাবিক হয় চলাচল। কিন্তু, আধা ঘণ্টার মধ্যেই আবার একই স্থানে লাইনচ্যুত হয় কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের কোচ।
নতুন পোপ নির্বাচিত: শিকাগোর রবার্ট প্রেভোস্ট হলেন পোপ লিও চতুর্দশ
রেলপথের নিরাপত্তা: বারবার কেন ঘটছে একই ঘটনা?
এই ধরনের ধারাবাহিক দুর্ঘটনা আমাদের রেলপথের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার বিষয়টি পরিষ্কার করে তোলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের অবকাঠামো এখনও যথেষ্ট রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বাজেট হলেও সময়মতো রেললাইন মেরামত না হওয়া, সংকেত ব্যবস্থার ত্রুটি, এবং ট্রেনচালকদের প্রশিক্ষণের অভাব – এইসব কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরিবহন ও সড়ক প্রকৌশল বিভাগের এক গবেষক বলেন, “প্রতিটি দুর্ঘটনার পেছনে থাকে একটি না একটি বড় গাফিলতি। কখনো তা প্রযুক্তিগত ত্রুটি, কখনো মানবিক ভুল।” তিনি আরও বলেন, এই দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়তে থাকলে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে এবং রেলযাত্রার জনপ্রিয়তা কমে যাবে।
আরও তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে মোট ৪৫টি ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে অধিকাংশ দুর্ঘটনার কারণ ছিল ট্র্যাকের দুর্বলতা এবং রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি। এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট যে একটি জাতীয় পর্যায়ের সংস্কার প্রয়োজন।
ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ও যাত্রী দুর্ভোগ
দূরপাল্লার ট্রেনগুলোর দেরি
লাইনচ্যুতির পর সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ট্রেনগুলোর নির্ধারিত সময়ে পৌঁছানো। আখাউড়ার দুর্ঘটনার পর স্বাভাবিক ঘোষণা দিলেও, বাস্তবে অনেক ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারেনি। এই দেরির কারণে যাত্রীরা দীর্ঘক্ষণ প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করতে বাধ্য হন।
রেল কর্তৃপক্ষের করণীয়
প্রতিটি দুর্ঘটনার পরই রেল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, এসব কমিটির রিপোর্ট খুব কমই বাস্তবায়িত হয়। এই কারণে দুর্ঘটনা রোধে দীর্ঘমেয়াদী কোনো সমাধান দেখা যায় না। এক্ষেত্রে স্বচ্ছ তদন্ত এবং তদারকির ব্যবস্থা চালু করা জরুরি।
পাঠকদের জন্য কিছু তথ্যবহুল লিংক
রেল নিরাপত্তা বিষয়ে আন্তর্জাতিক মতামত ও তথ্য জানতে চাইলে, এখানে দেখুন।
এই ধরনের ধারাবাহিক দুর্ঘটনা প্রমাণ করে যে, ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়া শুধু প্রযুক্তিগত সমস্যা নয় – এটি একটি ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা।
❓ প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
ট্রেন লাইনচ্যুত মানে কী?
ট্রেন লাইনচ্যুত অর্থ ট্রেনের একটি বা একাধিক বগি রেললাইনের বাইরে চলে যাওয়া। এটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা সৃষ্টি করতে পারে।
এই ধরনের দুর্ঘটনা কেন ঘটে?
বেশিরভাগ সময় ট্র্যাকের দুর্বলতা, অতিরিক্ত গতি, এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবই এর কারণ হয়।
এতে যাত্রীদের কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে?
দুর্ঘটনার সময় যাত্রীরা আহত হতে পারেন, যাত্রা বিলম্বিত হয়, এবং মানসিক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নেয়?
সাধারণত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, তবে তার বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন থাকে।
এই সমস্যা সমাধানে কী করা দরকার?
নিয়মিত ট্র্যাক পরিদর্শন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, এবং কার্যকর তদারকি জরুরি।
রেল যাত্রা কি এখনো নিরাপদ?
সতর্কতা অবলম্বন করে রেলভ্রমণ এখনো নিরাপদ, তবে ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন দরকার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।