জুমবাংলা ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত হবিগঞ্জের আদিবা আক্তার সোহা, আলী মোহাম্মদ ইউসুফ, সুজন মিয়া ও রুবেল মিয়া।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় হবিগঞ্জের ৬ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। মর্মান্তিক এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারসহ হবিগঞ্জবাসীদের মধ্যে চলছে শোকের মাতম। আর স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ।
নিহতরা হচ্ছেন- হবিগঞ্জ শহরতলির বড় বহুলা গ্রামের আলমগীর আলমের ছেলে ইয়াছিন আলম, আনোয়ারপুর এলাকার বাসিন্দা জেলা ছাত্রদল সহসভাপতি আলী মোহাম্মদ ইউসুফ, বানিয়াচং উপজেলার তাম্বুলিটুলা গ্রামের সোহেল মিয়ার আড়াই বছরের মেয়ে আদিবা আক্তার সোহা, একই উপজেলার মদনমুরত গ্রামের আল-আমিন, চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা গ্রামের পশ্চিম তালুকদার বাড়ির ফটিক মিয়া তালুকদারের ছেলে রুবেল মিয়া তালুকদার, একই উপজেলার মিরাশী ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামের আবুল হাসিম মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া।
নিহত আল-আমিনের চাচা বানিয়াচংয়ের বড়ইউড়ি ইউপির সাবেক মেম্বার কুতুব উদ্দিন জানান, আল-আমিন চট্টগ্রামে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। ১৯ দিন পূর্বে তার এক ছেলের জন্ম হয়। ছেলের নাম রাখতে তিনি সম্প্রতি বাড়িতে আসেন। একমাত্র ছেলের নাম রাখেন ইয়ামিন। তার রনিহা (৬) ও নুছরা (৮) নামে আরও দুটি মেয়ে রয়েছে। ছেলের নাম রেখে চাচা মনু মিয়া ও ফুপাতো ভাই শামীমকে নিয়ে সোমবার রাতে উদয়ন ট্রেনে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। রেল দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। অপর দুজন মনু মিয়া ও শামীম গুরুতর আহত হন। নিহত আল-আমিনের কোন ভাই-বোন নেই। অনেক আগেই মারা গেছেন মা-বাবাও।
বানিয়াচং উপজেলার তাম্বুলিটুলা গ্রামের সোহেল মিয়া জানান, তিনি ও তার স্ত্রী নাজমা বেগম চট্টগ্রামের একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। বৃহস্পতিবার তারা বাড়ি আসেন। সোমবার স্ত্রী ও ২ সন্তানকে নিয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে ট্রেন দুর্ঘটনায় আড়াই বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে আদিবা আক্তার সোহা মারা যায়। আহত হন তিনি, তার স্ত্রী ও সাড়ে ৪ বছর বয়সী ছেলে নাছির। তারা এখন ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেয়ের মৃত্যুতে নির্বাক হয়ে পড়েছেন নিহত সোহার মা-বাবা।
শহরের আনোয়ারপুর গ্রামের আব্দুল আহাদ জানান, তার চাচাতো ভাই আলী মোহাম্মদ ইউসুফ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার স্ত্রী চিশতিয়া বেগম চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কর্মরত। স্ত্রী ও দেড় বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে ইশা আক্তারকে বাড়িতে আনার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন। ট্রেন দুর্ঘটনায় তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমেদ চৌধুরী জানান, নিহত আলী মোহাম্মদ ইউসুফ ৪ চার ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয়। তার বাবা মারা গেছেন ২০১১ সালে। আর বড় ভাই উসমান গনি ২০১৭ সালে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ইউসুফই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী।
ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত শহরতলির বড়বহুলা গ্রামের আলমগীর আলমের ছেলে ইয়াছিন আলম (১১) বাবার সাথে চট্টগ্রামে যাচ্ছিল সাগর ও দর্শনীয় স্থান দেখতে। আহত হন তার বাবা পৌর আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর আলম। নিহত ইয়াছিন স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। সে স্টুডেন্ট কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য ছিল। ছেলেকে হারিয়ে তার মা হাসিনা আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
বন্ধুদের নিয়ে কক্সবাজারে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা গ্রামের পশ্চিম তালুকদার বাড়ির ফটিক মিয়া তালুকদারের ছেলে রুবেল মিয়া তালুকদার। ট্রেন দুর্ঘটনায় তার মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারসহ পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
একই উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের সুজন মিয়া চাকরির ইন্টারভিউ দিতে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। নিহত সুজন হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজে অনার্সের ছাত্র। পাশাপাশি তিনি হবিগঞ্জ আদালতে মুহুরির হিসেবে কাজ করতেন। তিনি ওই গ্রামের আবুল হাসিম মিয়ার ছেলে। চার ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।