চিরাচরিত ভালোবাসার সম্পর্কগুলো পড়ে যাচ্ছে ব্রেডক্রাম্বিংয়ের মতো কৃত্রিমতার প্রকোপে। কিন্তু এর লক্ষণগুলো দেখেও আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি না বা বুঝে চাই না আমাদের সঙ্গে কী হচ্ছে। সেই সোনালি দিনগুলোয় সম্পর্ক মানেই ছিল দুটো মনের সত্যিকারের মিলন। হাতে হাত রেখে বহু দূর হেঁটে যাওয়ার প্রত্যয়। কিন্তু অস্থির এই সময়ে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করার বিষয়গুলোয় যোগ হয়েছে ভিন্নতা। পাল্টে গেছে আজকাল দুই পক্ষের সম্পর্কের ভিত্তি।
সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্রেডক্রাম্বিং, গোস্টিংয়ের মতো সব শব্দ সংগত কারণেই সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে বেশ প্রচলিত এখন। ব্রেডক্রাম্ব খাবার তৈরিতে একধরনের বাইন্ডিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। অন্য উপকরণগুলোকে অনেকটা ধরেবেঁধে রাখে ব্রেডক্রাম্ব। কিন্তু সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা কীভাবে প্রযোজ্য, সেটাই দুরূহ মনে হয় বুঝতে গেলে।
আসলে মাঝেমধ্যে দুজন মানুষের ভেতর এমন সম্পর্ক গড়ে ওঠে, মূলত যার কোনো ভবিষ্যৎ নেই এবং হওয়ার সম্ভাবনাও অত্যন্ত ক্ষীণ। অথচ দেখা যায়, তাঁরা একে অপরের প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ করেন। মূল কারণ আসলে নিছক রোমান্টিসিজম। এর ধারাবাহিকতায় যখনই একজন সঙ্গী বুঝতে পারেন যে গোলকধাঁধার মতো নিজেকে খুঁজে না পাওয়ার ছক ছাড়া এই সম্পর্ক আর কিছুই নয়, তখন তিনি সরে আসতে চাইলেও পারেন না।
আর তা অপর পক্ষের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় হয় বেশি অ্যাটেনশন, পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রবল যত্নশীল আচরণ ও কথার মায়াজালসহ নানা ছলের কারণে। ভিডিও গেমের সিক্রেট লুপে আটকে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় ব্রেডক্রাম্বিংয়ের ক্ষেত্রে।
শুকনো কথায় চিড়ে না ভিজলেও ব্রেডক্রাম্বারদের প্রতিশ্রুতির জোয়ারে ভিজে যাবে হৃদয়। হ্যাঁ-এর সঙ্গে হ্যাঁ, না-এর সঙ্গে না মিলিয়ে সঙ্গীর আস্থা এবং ভালোবাসা অর্জন করে নিলেও আদতে দেখা যাবে, সেই ব্রেডক্রাম্বার শেষ পর্যন্ত কোনো প্রতিশ্রুতিই রাখছেন না। এ ধরনের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বুঝতে পেরে শক্তি সঞ্চয় করে পিছিয়ে যাওয়াই ভালো।
ব্রেডক্রাম্বিংয়ের মায়াজালে সম্পর্কের কোথায় যে কে দাঁড়িয়ে আছে, সেটাই ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারা যাবে না। একটি সুস্থ-স্বাভাবিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুজনই জানেন দুজনের অবস্থান এবং এটি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে। কিন্তু ব্রেডক্রাম্বিংনির্ভর সম্পর্কগুলো বিক্ষিপ্ত, অসংলগ্ন এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা খুব ভালো এবং খুব খারাপ ধরনের অপ্রত্যাশিত আচরণের সমষ্টি ছাড়া আর কিছুই নয়।
কাকডাকা ভোরে মুঠোফোনে সঙ্গীর পাঠানো এই কবিতা দিয়ে শুরু হওয়া দিনটি কীভাবে শেষ হবে, তা হয়তো ভাবতে পারাও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এমনও হতে পারে, আগামী তিন দিন আর একটিও মেসেজ বা ফোনকল আসবে না তাঁর কাছ থেকে। আসলেও তা হবে নিতান্ত দায়সারা বা কেজো ধরনের। একই দিনে উত্তর মেরু এবং সাহারা মরুভূমি ভ্রমণের মতো অভিজ্ঞতা ব্রেডক্রাম্বিংয়ের ক্ষেত্রেই ঘটে।
সম্পর্কের তুমুল জোয়ারের মধ্যেই সঙ্গীর হুট করে ডুব দেওয়া—এটাকেই বলা হয় গোস্টিং। স্বাভাবিক অবস্থায়, তাঁর কোনো সমস্যা থাকলে যোগাযোগের অপারগতা জানিয়ে দেওয়াটাই সমীচীন। কিন্তু ব্রেডক্রাম্বার তা কখনোই হতে দেবেন না। অপর পক্ষের সম্পূর্ণ আস্থা অর্জন এবং সব রকমভাবে তাঁর আত্মসমর্পণের অনুভব টের পাওয়ার পর থেকেই শুরু হবে গোস্টিং। অথবা নিজেকে ব্রেডক্রাম্বার গুটিয়ে নেবেন চরম নির্লিপ্ততায়। এসব রেড ফ্ল্যাগ খেয়াল করে নিজেকে গুটিয়ে নিলে নিজেরই মঙ্গল।
ব্রেডক্রাম্বার সঙ্গীটি দৈনন্দিন ছোট ছোট তথ্য এবং মজার ঘটনা শেয়ার করবেন, কিন্তু সবিস্তার তাঁদের কাছ থেকে কিছুই জানা যাবে না। ব্যক্তিগত তথ্য প্রদানে তাঁর সঙ্গী যেভাবে নিজেকে মেলে ধরেন, একজন ব্রেডক্রাম্বার কিন্তু কখনোই সেভাবে কোনো কিছু খোলাসা করেন না। ‘তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না বন্ধু’? ‘তোমার কি আমাকে সন্দেহ হয়’? এসব কথার বেড়াজাল বুনে পার পেয়ে যান তাঁরা। আস্থা অর্জনের পর তাঁরা এভাবেই কথা বলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।