জুমবাংলা ডেস্ক : শামিমা নূর পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন গানের শিক্ষক মতিউর রহমান চৌধুরীর বড় ছেলে। মতিউর রহমান স্থানীয় নজরুল একাডেমির অধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন।
এক সময় সুমনেরও তেমন কিছুই ছিল না। আধাপাকা টিনশেড ঘরেই কেটেছে তার শৈশব। এসএসসি গণ্ডি পার হওয়ার পর থেকেই তার অপকর্মের সূত্রপাত।
২০০০ সালের দিকে নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমনের উত্থান শুরু। শৈশব থেকেই চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্লাকমেইল ছিল সুমনের প্রধান পেশা।
দূরদর্শী চতুর ও মাস্টার মাইন্ড সুমন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। ২০০১ সালে পৌরসভার কমিশনার মানিক মিয়াকে যাত্রা প্যান্ডেলে গিয়ে হত্যার পর তিনি আলোচনায় আসেন।
প্রেমের সম্পর্কের পর ২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল শামিমা নূর পাপিয়াকে বিয়ে করেন শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন। তাদের ঘরে মাদহাত চৌধুরী ইসাব নামে আট বছরের একটি ছেলে রয়েছে।
২০১২ সালের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নরসিংদী শহরের বাসাইল এলাকায় নিজ বাসার সামনে সুমনের ওপর গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিটি বিদ্ধ হয় তার স্ত্রী পাপিয়ার পেটে। এরপর তারা নরসিংদী ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান।
ঢাকায় এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে পাপিয়ার। এর পর থেকে পাপিয়া চৌধুরী ও তার স্বামী সুমন ওরফে মতি সুমন রাজধানীর সাবেক এক সংরক্ষিত এমপির আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ওই এমপির সঙ্গে তার গাড়ির ব্যবসা আছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে পাপিয়া ও সুমনের অস্বাভাবিক উত্থান হয়।
২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর জেলা যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে তৌহিদা সরকার রুনা সভাপতি ও পাপিয়া চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরু হয় অস্বাভাবিক উত্থান। আর এ সবই করেছেন রাজধানী ঢাকায় বসে। মাঝে মধ্যেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের মিটিং-মিছিলে দলবল ও বহর নিয়ে যোগ দিতেন এই দম্পতি।
সুমন শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও তার স্ত্রী পাপিয়া যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় এলাকায় তাদের বিশাল কর্মীবাহিনী রয়েছে। বিশাল শোডাউন আর শত শত লোকজন নিয়ে আওয়ামী লীগের মিছিল, সভায় তারা যোগ দেয়।
নরসিংদী কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও জেলা ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী যারা তার অনুসারী তারা ‘কিউ অ্যান্ড সি’ ট্যাটু ব্যবহার করেন। মাঝে মধ্যেই তারা বিশাল শোডাউন দেন আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে।
জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসিবুল ইসলাম মিন্টু বলেন, পাপিয়া ও সুমনের সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে তাদের সঙ্গে কারো ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকতে পারে। এ ব্যাপারে আমার ধারণা নেই।
নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি তৌহিদা সরকার রুনা বলেন, মহিলা যুবলীগের কমিটিতে ছয় বছর ধরে পাপিয়া ও আমি একসঙ্গে রয়েছি। আমরা একসঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছি। কিন্তু কোনোভাবেই জানতে পারিনি পাপিয়া এত বড় অপরাধের সঙ্গে জড়িত। শনিবার তাদের গ্রেফতারের পর আমরা এ বিষয়ে জানতে পারি।
নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভুঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, খারাপ লোকের অপকর্মের দায় আওয়ামী লীগ বহন করবে না। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অন্যায়মূলক কাজ করেছে। যা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। তাদের বিরুদ্ধে দল ও আইন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
শনিবার ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়া ও তার স্বামীসহ ৪ জনকে আটক করে র্যাব। এই দুই দম্পতি তাদের দুই সহযোগীকে নিয়ে বিদেশে পালানোর চেষ্টা করছিলেন বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানায় র্যা ব।
পাপিয়া ছাড়া আটক অন্যরা হল- তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন, সুমনের ব্যক্তিগত সহকারী এক তরুণী ও তাদের আরেক সহযোগী সাব্বির খন্দকার। সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।