এই তালিকায় ভারতের দুটি পরিবারসহ স্থান করে নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও থাইল্যান্ডের তিনটি পরিবার। সম্মিলিতভাবে এই পাঁচটি পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ ২৪৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
ভারতের আম্বানি পরিবার
ভারতের আম্বানি পরিবার বিশ্বজুড়ে আলোচিত। এশিয়ার শীর্ষ ধনী পরিবারের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে তারা।
মুকেশ আম্বানির নেতৃত্বে এই পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৯০.৫ বিলিয়ন ডলার। এসেছে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পেট্রোকেমিক্যাল, টেলিকম, খুচরা এবং আর্থিক পরিষেবাসহ অসংখ্য খাতে এই কম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে। মূলত সুতা ব্যবসায়ী ধীরুভাই আম্বানির হাতে ১৯৬৬ সালে ছোট টেক্সটাইল কারখানার মধ্য দিয়ে রিলায়েন্স গ্রুপের যাত্রা শুরু।
২০০২ সালে ধীরুভাইয়ের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে মুকেশ ও অনিল আম্বানি পারিবারিক ব্যাবসায়িক সাম্রাজ্য ভাগ করে নেন। ছোট ভাই অনিল ব্যবসায় বিপুল লোকসান দিয়ে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন। তবে বড় ভাই মুকেশ আম্বানি তার ব্যবসাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।
থাইল্যান্ডের শেরাভানন্ত পরিবার
এশিয়ার দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী থাইল্যান্ডের শেরাভানন্ত পরিবার। তাদের সম্পদের পরিমাণ ৪২.৬ বিলিয়ন ডলার।
চীনের এক টাইফুন দুর্যোগ থেকে বেঁচে চীনা বংশোদ্ভূত চিয়া এক চোর ১৯২১ সালে থাইল্যান্ডে চলে এসেছিলেন। সেখানে তার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে সবজির বীজ বিক্রির একটি দোকান দেন। সেদিনের সেই ছোট্ট ব্যবসাটি ১০০ বছরেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে আজ চারোয়েন পোকফান্ড গ্রুপ (সিপি) হয়ে উঠেছে। এই প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম পশুখাদ্য এবং পশুসম্পদ উৎপাদনকারী। পাশাপাশি চীন ও হংকংয়ের বীমা ও টেলিকম খাতেও এই গ্রুপের বিনিয়োগ রয়েছে। তারা থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় খুচরা চেইনশপ টেস্কোরও মালিক। বর্তমানে চিয়ার ছেলে ধানিন শেরাভানন্ত সিপি গ্রুপের সিনিয়র চেয়ারম্যান।
ইন্দোনেশিয়ার হরটোনো পরিবার
এশিয়ার তৃতীয় শীর্ষ ধনী পরিবার ইন্দোনেশিয়ার হরটোনো পরিবার। তাদের সম্পদের পরিমাণ ৪২.২ বিলিয়ন ডলার। এই বিপুল সম্পদের সূচনা হয়েছিল ওয়েই উই গনের হাত ধরে। ১৯৩০-এর দশকে তিনি একটি আতশবাজির কারখানা চালাতেন। পরে ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ক্রেটেক সিগারেট ব্র্যান্ড কিনে নেন। ১৯৫০ সালে সেই সিগারেট ব্র্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে রাখেন জারুম। এই সিগারেট দ্রুত বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ১৯৬৩ সালে ওয়েই উই গনের মৃত্যুর পর তার সব সম্পদের মালিক হন দুই ছেলে রবার্ট বুদি হরটোনো ও মাইকেল বামবাং হরটোনো। সিগারেট ব্যবসার পুঁজিকে কাজে লাগিয়ে পরে হরটোনো ভাইয়েরা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ‘সেন্ট্রাল ব্যাংক এশিয়া’ অধিগ্রহণ করেন। এটিই এখন তাদের সম্পদের প্রাথমিক উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের মিস্ত্রি পরিবার
পঞ্চম প্রজন্মের মিস্ত্রি পরিবার এশিয়ার চতুর্থ বৃহৎ ও ভারতের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী। তাদের সম্পদের পরিমাণ ৩৭.৫ বিলিয়ন ডলার। এই পরিবারের অর্থের উৎস শাপুরজি পালোনজি (এসপি) গ্রুপ। ১৮৬৫ সালে এই উদ্যোগের সূচনা করেন ভারতের প্রয়াত বিলিয়নেয়ার পালোনজি মিস্ত্রির দাদা। এই কম্পানির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নির্মাণসহ একাধিক খাতে বিনিয়োগ রয়েছে। ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের টাটা গ্রুপের সঙ্গে এসপি গ্রুপের কয়েক দশকের ব্যাবসায়িক সম্পর্ক ছিল। কিন্তু পরে এই সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং আইনি জটিলতার কারণে মিস্ত্রি পরিবারের এসপি গ্রুপ ১৫০ বিলিয়ন ডলার বাজারমূল্যের টাটা গ্রুপের ১৮.৪ শতাংশ অংশীদারি পেতে ব্যর্থ হয়। ২০২২ সালে ৯৩ বছর বয়সে মারা যান পালোনজি মিস্ত্রি। তার বড় ছেলে শাপুর মিস্ত্রি বর্তমানে পারিবারিক ব্যবসার চেয়ারম্যান।
হংকংয়ের কিওক পরিবার
এশিয়ার পঞ্চম ধনী হংকংয়ের কিওক পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৩৫.৬ বিলিয়ন ডলার। কিওক পরিবারের ভাগ্যের চাকা ঘুরেছিল কোওক তাকুসেংয়ের হাত ধরে। ১৯৬৩ সালে তিনি ‘সান হাং কাই’ এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৭২ সালে ওই প্রতিষ্ঠানটি সান হাং কাই প্রপার্টিজ নামে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বেশ কয়েক দশক পাড়ি দিয়ে সেই কম্পানি এখন হংকংয়ের অন্যতম বড় লাভজনক প্রতিষ্ঠান। কিওক তাকুসেংয়ের তিন ছেলে ওয়াল্টার, থমাস ও রেমন্ড কিওক। ১৯৯০ সাল থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে তারা পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হন। তবে পারিবারিক কলহের কারণে বর্তমানে রেমন্ড কিওক সান হাং কাই প্রপার্টিজের একমাত্র চেয়ারম্যান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।