১৯৭০-এর গোড়ার দিকে হকিং কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে কাজ করছিলেন। বলে রাখা ভালো যে আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুসারে কৃষ্ণগহ্বর হলো এমন কোনো মৃত তারা বা মহাবিশ্বের এমন কোনো এলাকা যেখান থেকে আলো বা অন্য কোনো কিছুই নির্গত হতে পারে না।
কৃষ্ণগহ্বরের প্রচণ্ড শক্তিশালী মহাকর্ষ ক্ষেত্র তার চারপাশের স্থানকালকে অতিমাত্রায় বাঁকিয়ে ফেলে বলেই এমনটি ঘটে। হকিং ভেবে দেখলেন সাধারণ আপেক্ষিকতা ও কণাবাদী নীতির যুগপৎ প্রয়োগ করার জন্য কৃষ্ণগহ্বর একটি মোক্ষম জায়গা। শক্তিশালী মহাকর্ষক্ষেত্রের উপস্থিতিতে কণাবাদী ক্ষেত্রতত্ত্ব কী ফল দেবে?
হিসাব কষে তিনি দেখলেন যে কণাবাদী নীতির কারণে কৃষ্ণগহ্বর থেকেও সামান্য হারে আলো বা অন্য বিকিরণ নির্গত হতে পারে। আমরা একে বলি হকিং বিকিরণ। পরিমাণে সামান্য হলেও দীর্ঘকাল হকিং বিকিরণ করতে করতে একটি কৃষ্ণগহ্বর কালক্রমে উবে যেতে পারে। সমস্যা হলো হকিং বিকিরণ দেখে বলা যাবে না কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে কী ছিল।
কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে এক কেজি ভরের কোনো পাথর কিংবা সোনাদানা কিংবা বিশ্বকোষের কোনো খণ্ড যা-ই পড়ে গিয়ে থাকুক না কেন, ফল একই হবে। কাজেই তথ্য হারিয়ে যাওয়ার একটি ব্যাপার ঘটবে। এটি কণাবাদী ক্ষেত্রতত্ত্বের একত্বতাকে সরাসরি লঙ্ঘন করে। একেই আমরা বলি কৃষ্ণগহ্বর তথ্য কূটাভাস বা ব্ল্যাকহোল ইনফরমেশন প্যারাডক্স।
আসলে হকিং এই ফলে উপনীত হতে যা ব্যবহার করেছেন, তা কণাবাদী মহাকর্ষের পুরোদস্তুর কোনো তত্ত্ব ছিল না, ছিল আইনস্টাইনের মহাকর্ষতত্ত্ব ও কণাবাদী নীতির সহজ একটি খিচুড়ি। কেতাবি ভাষায় এর নাম অর্ধচিরায়ত সন্নিকর্ষ বা সেমিক্ল্যাসিকাল অ্যাপ্রক্সিমেশন।
এই রেসিপি সঠিক ফলই দেবে এমন কথা হলফ করে বলা যায় না। পদার্থবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার জ্ঞান দৃঢ়ভাবে ইঙ্গিত করে যে একত্বতা অলঙ্ঘনীয় এবং তথ্য হারিয়ে যেতে পারে না। কাজেই সাধারণ আপেক্ষিকতা ও কণাবাদী নীতির সম্মিলন ঘটিয়ে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ তত্ত্ব তৈরি করা দরকার, যাতে একত্বতা বজায় থাকে এবং তথ্যের সংরক্ষণ ঘটে। এই তত্ত্বই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরিসরে মহাকর্ষের আচরণ সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করবে।
কণাবাদী মহাকর্ষ বা কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি তত্ত্ব আমরা একেই বলি। হকিংয়ের কাজ তাই আইনস্টাইনের তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা ও কণাবাদী মহাকর্ষের পুরোদস্তুর একটি তত্ত্বের প্রয়োজনীয়তাকেই প্রকট করে তোলে। হকিং তাঁর কাজের মাধ্যমে অমর হয়ে থাকবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।