জুমবাংলা ডেস্ক: বরিশাল সদর উপজেলা কমপ্লেক্সে শোক দিবসের ব্যানার খোলাকে কেন্দ্র করে লঙ্কাকাণ্ড হয়েছে। আনসার সদস্য ও পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগ এবং সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের সংঘর্ষে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার (১৮ আগস্ট) রাত ১১টার পর বরিশাল সদর উপজেলার ইউএনও মুনিবুর রহমানের ওপর হামলার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে এই লঙ্কাকাণ্ড হয়েছে বলে জানা গেছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনের বক্তব্য অনুযায়ী, বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানের কার্যালয় কম্পাউন্ডে রাতে ব্যানার খুলতে যায় নগর ভবনের কর্মচারীরা। এসময় বাসভবন থেকে বের হয়ে উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ড থেকে ব্যানার খোলার কারণ জানা নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের কথাকাটাকাটি হয়।
উপজেলা কমপ্লেক্সে ইউএনও’র নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন আনসার সদস্য জানান, কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ব্যানার খোলার কথা বলে কম্পাউন্ডে ঢোকা ২৫/৩০ জন ইউএনওর বাসভবনে ঢুকে তাকে ঘিরে ফেলে। তাকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে আনসারদের সাথে হাতাহাতির একপর্যায়ে হামলা চালানো হলে আনসার সদস্যরা গুলি ছোড়ে।
সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ আহত হওয়ার বিষয় নিজেই নিশ্চিত করেছেন। আহতদের মধ্যে তিন পুলিশ ও দুই আনসার সদস্যও রয়েছেন।
দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর গুলির খবর শুনে কয়েকশ নেতাকর্মীও জড়ো হন সেখানে। তাদের নিয়ে মেয়র উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে ঢুকতে গেলে দ্বিতীয় দফায় ভেতর থেকে গুলি ছোড়ে আনসার সদস্যরা। গুলির মুখে ভেতরে ঢুকতে না পেরে কমপ্লেক্সের বাইরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে অবস্থান নেন মেয়র সাদিক।
দ্বিতীয় দফা এই গুলি বর্ষণেও ২/৩ জন গুলিবিদ্ধ হন। ছাত্রলীগকর্মীরা এসময় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধসহ একটি বাস ভাঙচুর করে। পরে মেয়র ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।
উপজেলা কমপ্লেক্সে এসব ঘটনা চলার মধ্যেই সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পৌঁছায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। বাস ভাঙচুরসহ সড়ক অবরোধ ঠেকাতে গেলে তাদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয় সেখানে থাকা ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ কর্মীদের সঙ্গে। এক পর্যায়ে পিছু হটে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা। এরইমধ্যে নগর ভবনের বেশ কয়েকটি ময়লা ফেলার গাড়ি এনে এলোপাতাড়ি ফেলে রেখে অবরোধ করা হয় ঢাকা বরিশাল মহাসড়ক।
গুলিবিদ্ধদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার বাবু, হারুন অর রশিদ ও তানভীর নামে তিনজনকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থাযর অবনতি হলে তানভীরকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান বলেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে ৮/১০টি মোটরসাইকেলে ১৫/২০ জন আমার উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে ঢুকে ঘোরাফেরা করছিল। আমি তাদের এখানে আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা জোর করে আমার ঘরে ঢুকে পরে। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল রাজীব নামে এক ছাত্রলীগ নেতা। তিনি নিজেই তার পরিচয় দিয়েছেন।
পরে আনসার সদস্যরা তাদের বের করে দেন। খানিকক্ষণ পরে ৬০/৭০ জন যুবক হঠাৎ করে আমার বাসার ভেতরে ঢুকে পরে এবং দোতলায় উঠে আসে। আমি জানতে চাইলে তাদের একজন নিজেকে মাহমুদ হাসান বাবু এবং আরেকজন সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত এবং দু’জনেই নিজেদের আওয়ামী লীগ নেতা বলে পরিচয় দেয়। তারা আমাকে উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এসময় আনসার সদস্যরা আমার প্রাণ বাঁচান। এরপর কয়েকশ লোক এসে কমপ্লেক্সে হামলা চালায়। তারা গেট ভেঙে ফেলাসহ অনেক ক্ষতি সাধন করেছে।
রাত সাড়ে ৩ টায় সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ তার বাসভবনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিসিসির কর্মীরা সেখানে তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন। অথচ তাদের ওপর ন্যাক্কারজনকভাবে গুলি চালানো হয়েছে। ঘটনা সর্ম্পকে জানতে আমি সেখানে গেলে আমার ওপরও গুলি চালানো হয়েছে। আমার বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধও হয়েছে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। বিচার চাই। এভাবে তো দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।