আন্তর্জাতিক ডেস্ক : খাদ্য সংকটে লাখ লাখ মানুষ কাঁঠাল খেয়ে জীবন ধারণ করছে বহু মানুষ। স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আকাশছোঁয়া।
এক সময় ফল হিসেবে সবচেয়ে অবজ্ঞা করা হতো যে কাঁঠালকে, সেটিই এখন প্রাণরক্ষাকারী আহার হয়ে দাঁড়িয়েছে লাখ লাখ মানুষের। ফলে কোনরকম প্রচারণা ছাড়াই কাঁঠাল গাছের অপর নাম হয়ে গেছে ‘ভাত গাছ’ বা ‘রাইস ট্রি’। অর্থনৈতিক সংকটের আগে প্রতিটি মানুষের ভাত বা পাউরুটি কেনার ক্ষমতা থাকলেও এখন খাবারের দাম চলে গেছে নাগালের একেবারে বাইরে। বাধ্য হয়ে এখন প্রায় প্রতিদিন কাঁঠাল খেয়ে জীবন ধারণ করছে বহু মানুষ।
এমনই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে দ্বীপদেশ শ্রীলংকার খাদ্য সংকট। দেশটিতে এখন নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের তিন বেলার আহার হচ্ছে কাঁঠাল। দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এই খাদ্য নিরাপত্তার অভাবে রয়েছে। শ্রীলংকায় এখন ১৫ কেজির একটি কাঁঠাল কিনতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩১০ রুপি।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি দুই পরিবারের মধ্যে একটিকে বাধ্য হয়ে শুধুমাত্র খাবারদাবারের জন্যই ব্যয় করতে হচ্ছে তাদের আয়ের ৭০ শতাংশেরও বেশি।
এক বছর আগে ৯ জুলাই নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে বিক্ষুব্ধ জনতার রোষের মুখে পদত্যাগ করেছিলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। গণ বিক্ষোভে সরকারের পতন ঘটলে ১২ জুলাই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। সরকার পতনের সেই লঙ্কাকাণ্ডের সময় থেকেই দারিদ্র্যতায় ধুঁকছে দ্বীপরাষ্ট্রটি। খাবার জোগাড়ে নিয়মিত হিমশিম খাচ্ছে দেশটির বড় একটি জনগোষ্ঠী।
২০২২ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে নজিরবিহীন গভীর অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হয় শ্রীলংকা। দেশটির অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ায় ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে মানুষের আয় এবং লাগামহীনভাবে বেড়েছে খাদ্যদ্রব্যের দাম। সংসারের খরচ, খাদ্য সংস্থান এবং বাচ্চাদের স্কুলের ফি জোগাড় করতে নাভিশ্বাস উঠছে কলম্বোর বাসিন্দা নাদিকা পেরেরার। তিনি দেশটির জাতীয় ক্যারাম চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী সাবেক প্রতিযোগী।
নাদিকা পেরেরা বলেন, ‘আগে আমরা তিন বেলা খেতাম। এখন খাচ্ছি দুবেলা। ১২ কেজি ওজনের রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম গত বছর পর্যন্তও ছিল ১৬০০ রুপি। এখন সিলিন্ডারের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়ে গেছে। ফলে এখন বাধ্য হয়ে পুরোনো পদ্ধতিতে চুলা জ্বালিয়ে রাঁধতে হচ্ছে। মাংস বা ডিম কেনার সঙ্গতি এখন আমাদের নেই। এসবের দাম বেড়ে গেছে ছয় গুণ। বাস ভাড়া এতটাই বেড়েছে যে, আমরা প্রতিদিন বাচ্চাদের বাস ভাড়া জোগাতে পারছি না। ফলে প্রায়ই তাদের স্কুল কামাই করতে হচ্ছে। আমি প্রার্থনা করি, যেন একদিন রান্নার গ্যাস আর বিদ্যুতের বিল কমে আমাদের নাগালের মধ্যে আসে।
শুধু নাদিকাই নয়, শ্রীলংকায় এমন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছেন লাখও মানুষ। দেশটিতে এখনও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আকাশছোঁয়া। গেলো মাসে মুদ্রাস্ফীতি নেমেছে ১২ শতাংশে, যদিও ফেব্রুয়ারিতে তা ছিল ৫৪ শতাংশ। তারপরও পরিবারগুলোর আয় কমে যাওয়ায় মূল্যবৃদ্ধি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকার। আর ধুঁকে ধুঁকে এই অচলাবস্থা পার করতে দিন গুনছে অসহায় জনগণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।