ভানিয়া আগরওয়াল মাইক্রোসফট: এক ভারতীয়-আমেরিকান সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার যিনি প্রযুক্তি জগতে সফল ক্যারিয়ার গড়ার পর হঠাৎ করেই সংবাদ শিরোনামে উঠে আসেন। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে মাইক্রোসফটের ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে এক অনন্য প্রতিবাদে অংশ নিয়ে তিনি পুরো বিশ্বকে চমকে দেন। ভানিয়া মাইক্রোসফট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন গাজায় চলমান সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে। এই প্রতিবাদ শুধুমাত্র একটি কর্মী উদ্যোগ ছিল না; এটি ছিল প্রযুক্তি জগতে একটি সাহসী বার্তা।
ভানিয়া আগরওয়াল মাইক্রোসফট ছাড়ার পেছনের কারণ
ভানিয়া আগরওয়াল ২০২৩ সালে মাইক্রোসফটে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার II হিসেবে যোগ দেন এবং AI ডিভিশনে কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, মাইক্রোসফটের একটি চুক্তি – ১৩৩ মিলিয়ন ডলারের ক্লাউড এবং এআই চুক্তি – ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে যে প্রযুক্তি সরবরাহ করা হয়েছে, তা গাজায় যুদ্ধের অংশ হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
Table of Contents
মাইক্রোসফটের ৫০তম বর্ষপূর্তিতে বিল গেটস, স্টিভ বালমার এবং বর্তমান CEO সত্য নাদেলা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। ঠিক তখনই ভানিয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “তোমাদের সকলের লজ্জা হওয়া উচিত। তোমরা সকলেই ভণ্ড। গাজায় ৫০,০০০ ফিলিস্তিনি Microsoft প্রযুক্তি দিয়ে মারা গেছেন।” তার এই সাহসী পদক্ষেপ তাকে প্রযুক্তি জগতের মধ্যে মানবিক অধিকার রক্ষার এক মুখপাত্রে পরিণত করে।
ভানিয়া আগরওয়ালের ব্যাকগ্রাউন্ড এবং শিক্ষা
ভানিয়া আগরওয়াল অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ২০১৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ‘Summa Cum Laude’ সম্মানে উত্তীর্ণ হন এবং ২০১৭ সালে গ্রেস হপার স্কলারশিপ অর্জন করেন। তার পেশাগত জীবনে তিনি অ্যামাজনেও কাজ করেছেন ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে। ২০২৩ সালে মাইক্রোসফটে যোগ দেওয়ার পূর্বে তিনি আমাজনে সিনিয়র ডেভেলপার হিসেবে কাজ করতেন।
তবে তার ক্যারিয়ারের সূচনা ছিল আরও সাধারণ এবং বৈচিত্র্যময়—চা পরামর্শদাতা, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এমনকি তিনি ২০১২ সালে ‘Vannushka’ নামে একটি Etsy শপ চালাতেন।
মাইক্রোসফট AI এবং ইসরায়েলের সামরিক প্রযুক্তি
ভানিয়া তার বিদায়ী ইমেইলে Microsoft-এর Azure এবং AI প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ইসরায়েল কিভাবে “mass state surveillance” এবং “genocide systems” তৈরি করছে তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, Microsoft-এর ক্লাউড এবং AI প্রযুক্তি ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে চালানো অপরাধে অংশগ্রহণ করছে। এমনকি BDS (Boycott, Divestment, Sanctions) মুভমেন্ট মাইক্রোসফটকে তাদের প্রধান টার্গেট হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এই অংশে তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, Microsoft-এর AI ডেটা ইসরায়েলের “target bank” এবং ফিলিস্তিনিদের জনসংখ্যা রেজিস্ট্রি তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ধরনের ব্যবহারের মাধ্যমে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
ভানিয়ার ইমেইলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ
তার ইমেইলে তিনি বলেন: “আমি আর এই কোম্পানির অংশ হতে পারি না। Microsoft একটি ডিজিটাল অস্ত্র প্রস্তুতকারক হয়ে উঠেছে। আমাদের শ্রম এই অন্যায়ের অংশ হচ্ছে। আমি সকলকে অনুরোধ করব Microsoft-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে এই পিটিশনে স্বাক্ষর করুন।”
এই বার্তা ছিল শুধু সহকর্মীদের উদ্দেশে নয়, বরং সমগ্র টেক ইন্ডাস্ট্রির প্রতি এক আহ্বান। তিনি বলেন, “আমি জানি সবাই চাকরি ছাড়তে পারবে না। তবে যারা রয়েছেন, তাদের উচিত নিজেদের অবস্থান ব্যবহার করে কোম্পানিকে মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিতে ফেরত আনা।”
প্রযুক্তি দুনিয়ায় প্রতিবাদের গুরুত্ব
টেক ইন্ডাস্ট্রি সাধারণত রাজনৈতিক কিংবা মানবিক ইস্যুতে নিরব থাকে। ভানিয়া আগরওয়ালের এই পদক্ষেপ এই রীতি ভেঙে দেয়। তিনি বুঝিয়ে দেন যে, একজন প্রযুক্তিবিদ শুধুমাত্র কোড লিখেই দায়িত্ব শেষ করেন না—তাদেরও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। তার এই প্রতিবাদ দেখিয়ে দিয়েছে যে, প্রযুক্তির সঙ্গে নৈতিকতার সম্পর্ক এখন অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
অভ্যন্তরীণভাবে অনেক কর্মী Microsoft-এর এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানিতেও কর্মীরা এখন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নীতির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছেন, যা একটি বৃহত্তর নৈতিক সচেতনতা তৈরি করছে।
ভবিষ্যতের বার্তা ও প্রেরণা
ভানিয়ার এই সাহসী পদক্ষেপ নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তিবিদদের জন্য এক বিরাট উদাহরণ। আজকের দিনে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারও বিশ্ব রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারেন, যদি তার মধ্যে নৈতিকতা ও সাহস থাকে।
Microsoft-এর মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মানবিক অধিকার রক্ষার বার্তা দেওয়া সহজ কাজ নয়। ভানিয়া দেখিয়েছেন, একটি সাহসী পদক্ষেপ কিভাবে বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি প্রমাণ করে যে, প্রযুক্তির পাশাপাশি মানবিকতাও একসঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে। ভানিয়া আগরওয়ালের সাহসী কাহিনী আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রযুক্তি শুধু উন্নয়নের মাধ্যম নয়, বরং ন্যায়বিচারের হাতিয়ারও হতে পারে।
FAQs
ভানিয়া আগরওয়াল কে?
ভানিয়া আগরওয়াল একজন ভারতীয়-আমেরিকান সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার যিনি মাইক্রোসফটে কাজ করতেন এবং গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে দেন।
কেন ভানিয়া আগরওয়াল মাইক্রোসফট ছেড়ে দিয়েছেন?
তিনি Microsoft-এর প্রযুক্তি ইসরায়েলি সামরিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হওয়ায় প্রতিবাদ স্বরূপ পদত্যাগ করেন।
তার প্রতিবাদ কিভাবে ঘটেছে?
মাইক্রোসফটের ৫০তম বর্ষপূর্তিতে বিল গেটস ও সত্য নাদেলার সামনে তিনি সরাসরি প্রতিবাদ জানান।
Microsoft এর কোন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ?
Microsoft Azure এবং AI প্ল্যাটফর্ম গাজায় নজরদারি ও সামরিক অভিযানে ব্যবহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ।
তিনি কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন?
তিনি অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং গ্রেস হপার স্কলারশিপও পান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।