মার্কিন নতুন শুল্কনীতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্যকর হলেও ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি এখনো ঝুলে আছে। তবে শিগগিরই ভারতীয় পণ্যের ওপর আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক কমে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশে নামতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সম্ভাবনা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলমান। যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি, তবু ভারতের গণমাধ্যমে খবর এসেছে—শুল্ক হ্রাসের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এগোচ্ছে। ফলে বিষয়টি এখন বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মহলের ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
গত বুধবার দীপাবলির শুভেচ্ছা জানাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফোনালাপের পর বিষয়টি আলোচনায় আসে। ভারতের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম ও একটি ইংরেজি দৈনিক জানিয়েছে, ফোনালাপের পর দুই দেশের কর্মকর্তারা শুল্ক ইস্যুতে অগ্রগতি নিয়ে কাজ করছেন।
তবে এখন পর্যন্ত দুই দেশের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য বা ঘোষণা পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের ব্যবসায় মহল মনে করছে, ভারতীয় পণ্যে শুল্ক কমলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও অন্যান্য রপ্তানি খাত মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতায় চাপের মুখে পড়তে পারে।
দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্প মালিকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত বাংলাদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ভারতের জন্য শুল্কনীতি নির্ধারণ করতে পারে।
এদিকে ফোনালাপের পর এক্স (সাবেক টুইটার)–এ দেওয়া পোস্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পোস্টে তিনি সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্যের কথা উল্লেখ করলেও শুল্ক সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেননি।
জানা গেছে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। শুল্ক কমানোর শর্ত হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন চায়, রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত সস্তায় জ¦ালানি কেনা বন্ধ করুক। রাশিয়া থেকে জ¦ালানি কেনার কারণেই চলতি বছর আগস্ট মাসে ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে শুল্কের পরিমাণ ৫০ শতাংশ।
একই সময় বাংলাদেশসহ ৯০টির বেশি দেশের জন্য নতুন শুল্কহার ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দরকষাকষির পর বাংলাদেশের শুল্ক ৩৫ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা হয়েছে, যা দেশের রপ্তানি খাতের জন্য স্বস্তিদায়ক। তবে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ভারতের ওপর আরোপিত শুল্ক কমে আসার সম্ভাবনায় রপ্তানি খাতে নতুন চিন্তার কারণ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এর লক্ষণ দেখা গেছে, গতকাল রাশিয়ার দুই বৃহৎ তেল কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার পর রুশ তেল আমদানি ব্যাপকভাবে কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় তেল পরিশোধনাগারগুলো। সূত্রের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির পথ সুগম করতে পারে। নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক কমার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। এই শুল্কের অর্ধেকই রুশ তেল কেনার প্রতিক্রিয়ায় আরোপ করা হয়েছিল। ফলে মস্কো থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি কমালে এ শুল্ক এশিয়ার অন্যান্য দেশের সমান পর্যায়ে নামতে পারে বলে আলোচনায় রয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে।
সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে বিষয়টি আজকে (গতকাল) সামনে এসেছে, তার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত বা মার্কিন দিক থেকে কোনো ঘোষণা পাইনি। ফলে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করার অবস্থা তৈরি হয়নি। তারপরও প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে আমাদের শুল্ক পার্থক্যের (কম থাকা) থাকবে, সেটি আমরা সবসময় আশা করছি। এখন ভারতের ১৫ শতাংশ শুল্ক হলে আমাদের শুল্ক যাতে ৫ শতাংশে নেমে আসে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’ তিনি বলেন, ‘যে সংবাদের ভিত্তিতে শুল্ক বিষয়টি সামনে এসেছে, সেখানে বলা হয়েছে, ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল কম কিনে বা ওইটা হলে, ওই রমক হলে শুল্ক এমন হতেও পারে। এতে মনে হচ্ছে, অনেক শর্ত ও ফাঁকফোকর রয়ে গেছে। ফলে বিষয়টি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগ পর্যন্ত মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’
‘আমার মনে হচ্ছে, ভারতের ওপর শুল্ক কমানো হলে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওপরও ট্রাম্প সরকার শুল্ক কমিয়ে আনবে। কারণ, যে হারে শুল্কারোপ করা হয়েছে, সেখানে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, যা দিন শেষে তার দেশের জনগণের ওপর পড়বে। ফলে এই উচ্চ শুল্কনীতি থেকে ট্রাম্প প্রশাসন সরে আসার সম্ভাবনা বেশি’ বলছিলেন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



