ভারতীয় ভিসা জটিলতা বাংলাদেশের বাজারে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। প্রতি বছর ঈদ, বিয়ে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে বাংলাদেশের বহু মানুষ ভারতে গিয়ে কেনাকাটা করতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভিসা পাওয়ার জটিলতায় এই প্রবণতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে স্থানীয় বাজারে কেনাকাটা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশীয় অর্থনীতির জন্য নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে। ব্যবসায়ীরাও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছেন।
কেন ভারতে কেনাকাটা কমেছে?
গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছে ভারত ছিল কেনাকাটার অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। বিশেষ করে কলকাতা, দিল্লি এবং মুম্বাইয়ের বড় বড় শপিং মল, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পোশাক, প্রসাধনী ও গয়নার প্রতি তাদের আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। কিন্তু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিবর্তনের কারণে সম্প্রতি ভারতীয় ভিসা জটিলতা বেড়ে গেছে। ফলে অনেক বাংলাদেশি এখন সহজে ভারত ভ্রমণের ভিসা পাচ্ছেন না।
Table of Contents
এই ভিসা জটিলতার কারণে যারা আগে সহজেই ভারতে যেতেন, তারা এখন বিকল্প হিসেবে দেশীয় বাজারের দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দিনগুলোতে যদি এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তবে বাংলাদেশের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দীর্ঘমেয়াদে আরও লাভবান হবেন।
ভারতে কেনাকাটা কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক কিছু বিধিনিষেধ আরোপ। এই নতুন নিয়মের ফলে ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে ব্যয়ের হারও কমেছে, যার ফলে মানুষ দেশেই কেনাকাটা করতে আগ্রহী হচ্ছেন।
স্থানীয় বাজারের সম্ভাবনা ও অর্থনীতির উন্নয়ন
ভারতীয় ভিসা জটিলতা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য ইতিবাচক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, বরিশালসহ বিভিন্ন শহরের শপিং মলগুলোতে ক্রেতার ভিড় লক্ষ্যণীয় হারে বেড়েছে। বিশেষ করে, রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, নিউ মার্কেটসহ অন্যান্য মার্কেটে বেচাকেনা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পোশাক, গয়না এবং কসমেটিক্সের বিক্রিতে ইতোমধ্যে বড় ধরনের বৃদ্ধি দেখা দিয়েছে।
এছাড়া দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো তাদের পণ্যের মান বৃদ্ধি এবং মূল্য নির্ধারণে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। বিশেষ ছাড়, অফার এবং গ্রাহকদের আকর্ষণে নতুন নতুন পণ্যের সংযোজন হচ্ছে নিয়মিত। ফলে ক্রেতারা এখন স্থানীয় বাজারে প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি সাশ্রয়ী কেনাকাটার সুবিধাও পাচ্ছেন।
ই-কমার্স খাতে নতুন সুযোগ
ভারতীয় ভিসা জটিলতা দেশের ই-কমার্স খাতের জন্য বড় সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। যারা আগে অনলাইনে ভারতীয় পণ্য ক্রয় করতেন, তারা এখন দেশীয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে ঝুঁকছেন। দারাজ, ইভ্যালি, আজকেরডিলসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম দ্রুত ডেলিভারি, সহজ রিটার্ন, গুণগত মান যাচাই ও সাশ্রয়ী দামের কারণে ক্রেতাদের মন জয় করছে।
অনলাইনে কেনাকাটার প্রবণতা বৃদ্ধির ফলে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য নিয়ে অনলাইনে উপস্থিতি বৃদ্ধি করছেন। এটি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিকল্প দেশের দিকে ঝোঁক
ভারতীয় ভিসা জটিলতা শুধু কেনাকাটায় নয়, চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। বাংলাদেশিরা যারা আগে নিয়মিত ভারতে চিকিৎসার জন্য যেতেন, তারা এখন বিকল্প হিসেবে চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো দেশে ঝুঁকছেন। চীনের ইউনান প্রদেশ ইতোমধ্যেই বাংলাদেশিদের কাছে জনপ্রিয় চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তুলনামূলক কম খরচে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার কারণে অনেক বাংলাদেশি সেখানে যাচ্ছেন।
বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যয়ের নতুন ধারা
ভারতের ভিসা জটিলতার কারণে বাংলাদেশের বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যয়ের চিত্রেও বড় পরিবর্তন এসেছে। ভারত আগে বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে শীর্ষে ছিল। কিন্তু এখন ভারত এই তালিকায় সপ্তম স্থানে চলে এসেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্যের মতো দেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড খরচ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় নতুন দিক উন্মোচন করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, ভারতে ভিসা জটিলতার কারণে দেশীয় ব্যবসার জন্য একটি নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশিরা এখন দেশীয় পণ্যের প্রতি ঝুঁকছেন, যা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য ইতিবাচক। তবে একইসঙ্গে বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশিদের খরচের প্রবণতাও বাড়ছে।”
ভারতীয় ভিসা জটিলতা বাংলাদেশের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য ইতিবাচক সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে দেশীয় বাজারে স্থায়ী পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও চাঙা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।