আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আকাশে উড়ছে যুদ্ধ বিমান, বাড়ছে সংঘাতের তীব্রতা। সম্প্রতি পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান। যা ইতিমধ্যেই আলোচনার ঝড় তুলেছে। অনেকের মতেই এটি পাকিস্তানের একটি বড় পদক্ষেপ। তবে এই পরিস্থিতিতে একটি প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে, কেন ইসলামাবাদের হাতে থাকা অত্যাধুনিক এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলো ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারছে না পাকিস্তান?
দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যানের ভাষায়, পাকিস্তানে ভারতের হামলার পরিধি ২০১৯ সালের চেয়ে অনেক বেশি। পাল্টা জবাবে একাধিক ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের খবর সেই আগের সংকটকেও ছাড়িয়ে গেছে। উত্তেজনা এখন তুঙ্গে।
যুদ্ধ কোন দিকে মোড় নেয়, তা সময় বলবে। তবে আকাশপথে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করাই যে প্রধান লক্ষ্য হতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য। ভারতের প্রায় ৬০০টির বেশি যুদ্ধবিমান আকাশ পাহারায় সদাপ্রস্তুত। অন্যদিকে পাকিস্তানের অস্ত্রাগারে রয়েছে ৪১০টির বেশি যুদ্ধবিমান। তবে এখানেই বাঁধছে বিপত্তি।
পাকিস্তানের বিমান বহরে থাকা প্রায় ৭৫টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কেনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। শোনা যাচ্ছে, এই যুদ্ধবিমানগুলো ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ওয়াশিংটন। কারণ সেই পুরনো ‘এন্ড-ইউজার চুক্তি’ এবং ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ।
সূত্রের খবর, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে এই এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলো দিয়েছিল মূলত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে ব্যবহারের জন্য, বিশেষত আফগানিস্তানের প্রেক্ষাপটে। অন্য কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, বিশেষত ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে এই বিমান ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি তারা।
যদি পাকিস্তান এই শর্ত ভঙ্গ করে, তবে যুদ্ধবিমানের খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ এবং রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি বাতিল হতে পারে। এমনকি নিষেধাজ্ঞার খাঁড়াও নেমে আসতে পারে ইসলামাবাদের ওপর।
২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর বালাকোটে ভারতীয় বিমান হামলার প্রেক্ষিতে অভিযোগ উঠেছিল, পাকিস্তান এফ-১৬ ব্যবহার করে ভারতীয় সামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছিল। যদিও সেই সময় যুক্তরাষ্ট্র নীরব থেকে বিষয়টির নিষ্পত্তি করেছিল।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক এক কর্মকর্তা দ্য প্রিন্টকে জানিয়েছেন, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের করার খুব বেশি কিছু নেই। কারণ এন্ড-ইউজার চুক্তির শর্ত আইনিভাবে মানা বাধ্যতামূলক নয়।
তবুও প্রশ্ন থেকে যায়, পাকিস্তান কি শেষ পর্যন্ত এই ঝুঁকি নেবে? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা হয়তো এফ-১৬ ব্যবহারের পথে হাঁটবে না।
তবে পাকিস্তানের হাতে অন্য একটি শক্তিশালী বিকল্পও রয়েছে, চীনের তৈরি জে-১০সি ভিগোরাস ড্রাগন। অত্যাধুনিক গতি, পাল্লা, রাডার এবং ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লায় এই যুদ্ধবিমান অনেককেই টেক্কা দিতে পারে। এই বিমানে রয়েছে পিএল-১৪ নামক অত্যাধুনিক দূরপাল্লার এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র, যা ভারতের রাফাল জেটের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে পাকিস্তানের বিমান বহরে ২৫ থেকে ৩০টি জে-১০সি রয়েছে বলে খবর।
এছাড়াও তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি অত্যাধুনিক মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান জেএফ-১৭ ব্লক থ্রি-ও রয়েছে। সব মিলিয়ে, পুরনো এফ-১৬ হয়তো এই আকাশযুদ্ধে প্রধান ভূমিকা নাও নিতে পারে। এখন দেখার, উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকা এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত কোন অস্ত্রের ওপর ভরসা রাখে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।