আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মোহাম্মদ সানা উল্লাহ। ৫২ বছরের এই সেনা কর্মকর্তা ভারতের হয়ে যুদ্ধ করেছেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ‘কারগিল যুদ্ধ’-এ অংশ নেওয়া এই ব্যক্তিকে অভিবাসী হিসেবে আটক করেছে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাকে গত বুধবার পাঠানো হয়েছে আটককেন্দ্রে।
ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মারপ্যাঁচে আটক হয়েছেন ওই সেনা কর্মকর্তা। যদিও ভারত সরকারের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে দেশজুড়ে চলছে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানায়, বিদেশিদের চিহ্নিত করার জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের আদেশের ভিত্তিতে মোহাম্মদ সানা উল্লাহকে আসামের একটি আটককেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
আসামের একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি (সানা উল্লাহ) ৩০ বছর ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তাকে বিদেশি হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে আমরা তাকে আটককেন্দ্রে প্রেরণ করেছি।’
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা কেবল ট্রাইব্যুনালের আদেশ মেনে চলি। কী কারণে বা কেন তাকে বিদেশি ঘোষণা করা হয়েছে সে সম্পর্কে অবগত নই।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্স’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সানা উল্লাহ জানান, আটককেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের একটি গাড়িতে তাকে ধাক্কা মেরে ওঠানো হয়। পুলিশের এমন আচরণে তিনি মর্মাহত।
আসাম পুলিশের সীমান্ত শাখার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ সানা উল্লাহ বলেন, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ৩০ বছর চাকরি করার পরে আমি এই পুরস্কার পেয়েছি। আমি একজন ভারতীয়, সম্পূর্ণ ভারতীয় এবং চিরকাল ভারতীয় হয়েই থাকব।’
সানা উল্লাহর আইনজীবী আমান ওয়াদুদ বলেন, এটি একটি ভুল মামলা। কারণ আদেশে তার মক্কেলকে শ্রমজীবী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি ১৯৭১ সালের পরে আইনী দলিল ছাড়াই ভারতে এসেছিলেন। অথচ তার পরিবারের কাছে ১৯৩৫ সালেরও আগের আসামের জমির দলিল রয়েছে।
ওই আইনজীবী আরও বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার তিনি এই আদেশের বিপরীতে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করবেন।
ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল যে, তারা অবৈধভাবে দেশে বসবাসরত সমস্ত অভিবাসীকে চিহ্নিত করবে। প্রতিবেশী মুসলিম দেশ যেমন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সমস্ত অমুসলিমকে নাগরিকত্ব দিয়ে বাকি সবাইকে দেশ থেকে বহিষ্কার করবে।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫০ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে মুসলিম অভিবাসীদের চিহ্নিত করার কার্যক্রম শুরু করেছে। যদিও ভারতের এই কার্যক্রম নিয়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ চলছে দেশটিতে।
উল্লেখ্য, ভারতের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের পর আসামের লাখ-লাখ মুসলিম তাদের নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে। আসামের মুসলিমদের এখন প্রমাণ দেখাতে হবে যে, তারা বা তাদের পরিবারের সদস্যরা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকেই ভারতে বসবাস করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।