জুমবাংলা ডেস্ক: গত ১৫ বছরে ক্রোম আর কাচের তৈরি ঝকঝকে অফিস ভবন, বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট এবং বিলাসবহুল শপিং মলগুলো নয়াদিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থিত কৃষিপল্লী গুরগাঁওকে একটি ব্যবসায়িক জেলায় পরিণত করেছে যার আকর্ষণে ভারতের গ্রামাঞ্চল থেকে হাজার হাজার অভিবাসী শহরটিতে এসে ভিড় জমাচ্ছে। খবর ভয়েজ অব ইন্ডিয়ার।
বিশাল বিশাল নির্মাণ প্রকল্প ও ব্যস্ত কারখানাগুলো গুরগাঁওয়ে স্থিতিশীল কাজ পাওয়া সহজ করে তুলেছে। ২০০৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভারতে দশক-দীর্ঘ অর্থনৈতিক বিস্ফোরণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত বেড়ে উঠেছে গুরগাঁও। এ অর্থনৈতিক বিস্ফোরণ দেশটির ২৭ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছে।
এমনই একজন ২৭ বছর বয়সী জভেদ খান। এক দশকের বেশি সময় আগে শহরটিতে আসেন তিনি। প্রথমদিকে কাজ খোঁজার জন্য তার নিয়মিত জায়গা ছিল গুরগাঁওয়ের একটি ইন্টারসেকশন। যেখানে দিনমজুররা ঠিকাদারদের ডাকের অপেক্ষায় বসে থাকেন। জাভেদ জানান, প্রথম এখানে এসে বেশ ভালো মজুরি পেতেন তিনি। কাজও চলছিল ভালো।
কিন্তু এখন ইন্টারসেকশনে কাজের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা হতাশ করে তুলছে জাভেদ খানকে। গত বছর থেকে কাজ পাওয়াই মুশকিল হয়ে পড়েছে বলে জানান জাভেদ। অনেকেই ধীরে ধীরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
কাজের খোঁজে থাকা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি আশ্চর্যের কোনো বিষয় নয়। যখন দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতিটির প্রবৃদ্ধি এক দশকের সর্বনিম্নে পৌঁছে গেছে, তখন নতুন ভবনের সংখ্যা খুব বেশি বাড়ার কথা নয়। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে ৫ শতাংশে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চার বছর আগে দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ শতাংশ।
ভারতের নির্মাণ খাতের মন্থরগতি থেকে (কৃষির পর দেশটির দ্বিতীয় বৃহৎ কর্মসংস্থান উৎস) দেশটির পতনমুখী অর্থনীতির সবচেয়ে স্পষ্ট আভাস পাওয়া যাচ্ছে। মন্থর নির্মাণ খাত দেশটির কয়েক লাখ দিনমজুরের জন্য ভয়াবহ আঘাত হয়ে উঠেছে, যারা নিজেদের ও গ্রামে পরিবারের
ভরণ-পোষণের জন্য শহরের দৈনিক কাজের ওপর নির্ভরশীল। পল্লী অঞ্চলগুলো শহুরে অভিবাসী নির্মাণ শ্রমিকদের পাঠানো অর্থের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
তিন বছর আগে গুরগাঁওয়ে আসা ২১ বছর বয়সী আদর্শ কুমার বলেন, দুই বছর বাড়িতে পাঠানোর মতো যথেষ্ট অর্থ আয় করলেও বর্তমানে ১০ দিনের মজুরি দিয়ে মাসের বাকি ২০ দিন চলতে হচ্ছে।
মন্থর নির্মাণ খাতের কারণে কেবল নিম্ন আয়ের শ্রমিকরাই নন কয়েক লাখ বাড়ি ক্রেতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যারা অর্থনৈতিক বিস্ফোরণের সময় নয়াদিল্লির পাশে দ্রুতবর্ধনশীল নয়ডায় আবাসন প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করেছিল। বর্তমানে অসমাপ্ত বহুতল ভবন ও স্থগিত হয়ে পড়া কয়েকশ প্রকল্পের কারণে বিপাকে রয়েছেন এসব ক্রেতা। অসমাপ্ত বাড়ির বন্ধকের অর্থ পরিশোধে নিজেদের সঞ্চয় শেষ করতে হচ্ছে বহু মধ্যবিত্ত পরিবারকে।
পকেটের অর্থ কমায় উচ্চাকাঙ্ক্ষী মধ্যবিত্তের গাড়ি ও রেফ্রিজারেটরের মতো পণ্যের পেছনে ব্যয়ও কমেছে, যা ভোক্তা ব্যয়ের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ভারতের অর্থনীতিকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মন্থর চাহিদা দেখছে গাড়ির শোরুমগুলো। একই সময় ছোট দোকানগুলোর বিক্রি কমছে আর জীবিকা নির্বাহে সংগ্রাম করতে হচ্ছে দিনমজুরদের।
অন্যান্য বড় নিয়োগ প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও রফতানি ইউনিটগুলোও খুব বেশি ভালো করছে না। টানা ছয় মাস ভারতের রফতানিতে পতন দেখা গেছে। কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় রয়েছে। কোম্পানিগুলোতেও কোনো নিয়োগ নেই।
এ মুহূর্তে ভারতের অর্থনৈতিক মন্থরতা ‘ফেটে পড়ার পর্যায়ে’ পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন নয়াদিল্লির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফিন্যান্স অ্যান্ড পলিসির অর্থনীতিবিদ এন আর ভানুমূর্তি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।