আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে স্কুলে পাঠ্যবই থেকে মুঘল শাসকদের নিয়ে একটি অধ্যায় পুরোপুরি বাদ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে- তাহলে স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে কিভাবে ইতিহাস শেখানো উচিত! নতুন পাঠ্যবই প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশন রিসার্স অ্যান্ড ট্রেইনিং (এনসিইআরটি)। এটি কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। সরকার পরিচালিত সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশনের অধীনে শিশুদের পরীক্ষায় কি কি বিষয় থাকবে তার সিলেবাস ও পাঠ্যবিষয় তদারকি করে এনসিইআরটি। এবার পাঠ্যবইয়ে আরও যা পরিবর্তন করা হয়েছে তা হলো, মহাত্মা গান্ধীকে হত্যার বেশ কিছু রেফারেন্স মুছে ফেলা হয়েছে। ২০০২ সালে গুজরাটে যে দাঙ্গা হয় তাও মুছে ফেলা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
সিলেবাস পরিবর্তনের ঘোষণা গত বছরেই প্রথম দেয় এনসিইআরটি। তারা বলেছে, এই পরিবর্তনের ফলে জ্ঞান আহরণে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না। পক্ষান্তরে করোনা মহামারির পরে শিশুদের ওপর থেকে ‘লোড’ কমবে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এসব বিষয় পাঠ্যবই থেকে মুছে দেয়া উদ্বেগজনক ব্যাপার।
দেশ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ধারণা প্রভাবিত হবে। বিশেষ করে তারা মুঘল বংশের রেফারেন্স বাতিলের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অভিযোগ করছেন, হিন্দুত্ববাদী গ্রæপগুলো বছরের পর বছর ধরে যে প্রচারণা চালিয়ে আসছে, সেই অনুযায়ী ইতিহাসের অংশবিশেষ মুছে দিচ্ছে এনসিইআরটি।
অনেক ডানপন্থি অধিকারকর্মী এবং ইতিহাসবেত্তা মুঘলদেরকে দেখে থাকেন বিদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে। তারা কয়েক শতাব্দী ভারত উপমহাদেশের বিশাল এলাকা শাসন করেছেন। অভিযোগ করা হয়, তারা ভারতের নিজস্ব সংস্কৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিজের শিক্ষক এবং পলিটিক্যাল ইসলাম বিষয়ে কাজ করা হিলাল আহমেদ বলেন, গভীরভাবে বিভক্ত সময়ে আমাদের জাতীয় ইতিহাস শিক্ষা নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অস্বস্তিকর অথবা অসুবিধাজনক অংশগুলো মুছে দিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের সমালোচনামুলকভাবে চিন্তা করতে উৎসাহিত করছি না।
তবে এনসিইআরটি-এর পক্ষে যারা তারা যুক্তি দেখান যে, স্কুলের পাঠ্যবইয়ে কিছু সংশোধন জরুরি ছিল। কারণ, এসব বই মুসলিম শাসকদের খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। এনসিইআরটি প্রণীত পাঠ্যবইয়ের অনেক অধ্যায় লিখেছেন শিক্ষাবিদ ও ইতিহাসবেত্তা মাখন লাল। তিনি বলেন, ভারতের ইতিহাসে অন্যতম রক্তাক্ত সময়কাল ছিল মুঘল শাসন। তিনি হিন্দু শাসকদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আমরা কি বিজয় নগর সাম্রাজ্য, চোল এবং পান্ড্যদের বিষয়ে অধিক পরিমাণে লিখতে পারি না?
ইতিহাসবিদ ও লেখক মানু এস পিল্লাই বলেন, এখন যা ঘটছে তাতে বোঝানো হচ্ছে মুঘলরা ছিলেন সহিংস। প্রকৃতপক্ষে সহিংসতা সর্বত্রই রাজ্য শাসনের অংশ ছিল। আরও বলা হচ্ছে মুঘলরা প্রথমত মুসলিম। তারা হিন্দুদের নির্যাতন করতে ছিলেন বদ্ধপরিকর। কিন্তু এই রেকর্ড আরও জটিল।
এনসিইআরটি-এর পরিচালক দিনেশ সাকলাইন পাঠ্যবইয়ের এই পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ককে অপ্রয়োজনীয় বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মুঘলদের ইতিহাস এখনও স্কুলের শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে। তবে মিডিয়া এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করলে তার উত্তর তিনি দিতে চাননি। ভারতে ইতিহাসের পাঠ্য রিভিশন নতুন কিছু নয়। অতীতে বিভিন্ন সরকারের সময়ে পাঠ্যপুস্তক রিভাইজ করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।