আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশিত হবার পরে নানা ধরণের চমকপ্রদ বিষয় বেরিয়ে এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আর্থিক অনুদান দেবার জন্য স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া নির্বাচনী বন্ড ছেড়েছিল। প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সবচেয়ে বেশি অর্থ দিয়েছেন একজন লটারি ব্যবসায়ী, যিনি একসময় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে বন্ড সংক্রান্ত তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। আদালতের নির্দেশনার পর ভারতের নির্বাচন কমিশন এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি গত পাঁচ বছরে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি অনুদান পেয়েছে। খবর বিবিসি বাংলা
বন্ড ছাড়ার সময় স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া নিশ্চয়তা দিয়েছিল যারা বন্ড ক্রয় করবে তাদের নাম প্রকাশ করা হবেনা। কিন্তু ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশনা দিয়েছে যারা বন্ড ক্রয় করবে এবং যেসব রাজনৈতিক দল এর মাধ্যমে অর্থ পাবে সবকিছুই বিস্তারিত প্রকাশ করতে হবে।
এ ধরণের বন্ড ছাড়ার বিষয়টি অসাংবিধানিক হিসেবে বর্ণনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট।আদালতের রায় অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে কারা এসব বন্ড ক্রয় করেছে, সেটি কত টাকার এবং কোন রাজনৈতিক দল কত টাকা পেয়েছে এসব কিছুর বিস্তারিত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
আদালতের নির্দেশ মতে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এসব তথ্য নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে এবং কমিশন এসব তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে ১৫ই মার্চের মধ্যে।
নির্বাচনী বন্ডের ইউনিক নম্বর জানানোর জন্য স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু তারা সেটি করেনি। । আগামী সোমবারের মধ্যে তা প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
বন্ডের ওই ইউনিক নম্বরের সাহায্যে জানা যাবে, কোন দাতা কোন রাজনৈতিক দলকে কত অর্থ দিয়েছেন।
এর মাধ্যমে আরো স্পষ্ট হবে, যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওই নির্বাচনী বন্ড কিনেছে তার সঙ্গে যে রাজনৈতিক দল ওই বন্ড ভাঙিয়েছে তার সম্পর্ক। সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এর পরিবর্তে কোনও বিশেষ সুবিধা পেয়েছিল কি না এটাও জানা যাবে
অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস বা এডিআর ভারতে নির্বাচনী স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে কাজ করে। নির্বাচনী বন্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ওই সংস্থা।
এডিআর -এর পক্ষ থেকে অধ্যাপক ত্রিলোচন শাস্ত্রী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “নির্বাচন কমিশনের ওয়াবসাইটে এখন সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে। মানুষ জানতে পারবে কোন রাজনৈতিক দল কত টাকা পেয়েছে অনুদান হিসাবে। একই সঙ্গে জানা যাবে দাতাদের নাম, এতদিন যা মানুষের অগোচরে ছিল। সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই।”
বেশি বন্ড কিনেছে কে?
আর নির্বাচনী বন্ড যারা সবচাইতে বেশি কিনেছে সেই তার তালিকায় সবার উপরে রয়েছে ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’।
তারা প্রায় ১৪শ কোটি টাকা মূল্যের নির্বাচনী বন্ড কিনেছে। ওই সংস্থার মালিক সান্টিয়াগো মার্টিন। গত কয়েক বছর যাবত এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টোরেট বা ইডির নজরে রয়েছে ওই সংস্থা।
তার এই বন্ড ক্রয়ের অর্থ কোন রাজনৈতিক দল পেয়েছে সেটি এখনো জানা যায়নি। ইউনিক নম্বর প্রকাশিত হবার পরে সেটির বিস্তারিত জানা যাবে।
নব্বই দশকে শুরু হওয়া ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড’ এর নাম আগে ছিল ‘মার্টিন লটারি এজেন্সিস লিমিটেড’।
দুইশ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি টার্নওভারসহ এই সংস্থাটি ভারতে সবচেয়ে বড় লটারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম।
যে সমস্ত রাজ্যে লটারি বিক্রির অনুমতি আছে সেই রাজ্যের ডিলার এবং এজেন্টদের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে তারা।
রাজ্য সরকার অনুমোদিত পেপার লটারির বিতরণ এবং মার্কেটিং-সহ একাধিক বিষয় তারা দেখে।
সান্টিয়াগো মার্টিন কে?
সান্টিয়াগো মার্টিন এই কোম্পানির চেয়ারম্যান। তাকে ‘লটারি কিং’ও বলা হয়। কর্মজীবন শুরু মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে। সেখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি।
পরে তিনি ভারতে ফিরে আসেন। ১৯৮৮ সালে তামিলনাড়ুতে লটারির ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে কর্ণাটক ও কেরালায় তার লটারির ব্যবসা প্রসারিত হয়। ধীরে ধীরে অন্যান্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পরে তার ব্যবসা।
২০২৩ সালে চেন্নাইয়ের ফিউচার গেমিং সলিউশনস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে সান্টিয়াগো মার্টিন এবং অন্যান্যদ কর্মকর্তাদের আবাসস্থল এবং কোয়েম্বাটুরের ব্যবসায়িক প্রাঙ্গণে তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। সে সময় প্রায় ৪৫৭ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
২০২৩ সালে কলকাতার বিশেষ পিএমএলএ আদালতে ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড এবং আরও ১৫টি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ইডি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।