আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তথাকথিত লাভ জিহাদ বা ধর্মান্তরিত বিয়ে বন্ধের লক্ষে গেল মাসে ভারতের উত্তর প্রদেশ সরকার যে আইন কার্যকর করেছে তার আওতায় প্রতিদিন একজনের বেশি মুসলমানকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ।
বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) এক প্রতিবেদনে জানায়, এ সময়ে গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ৩৫ জন মুসলমানকে।
ধর্মান্তর নিষিদ্ধ করে পাস করা আইন চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর কার্যকর করা হয়। কার্যকরের পর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই আইনে অর্ধশত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পিটিআই জানায়, বেরেলি থেকে উয়াইশ আহমাদ, মুজাফফরনগর থেকে নাদিম এবং তার বন্ধুকে, মুরাদাবাদ থেকে রাশিদ এবং সালিম দুই ভাইকে, মাও থেকে শাদাব খান, সিতাপুর থেকে ৫ মুসলিম যুবককে, বিজনর থেকে আফজাল এবং হারডোই থেকে মোহাম্মদ আজাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ওই রাজ্যে সাবিক নামে ১৭ বছর বয়সী এক মুসলিম কিশোরকেও গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ।
সাকিবের মা জানান, মুসলমান হওয়ার কারণে তার ছেলেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পরিবার জানায়, ১৬ বছর বয়সী দলিত গোত্রের এক কিশোরীর সঙ্গে পিৎজা শপে যায় সাকিব। তারপরই সাকিবকে লাভ জিহাদ আইনে আটক করে পুলিশ।
কিশোরীর বাবা জানান, সাকিব তার মেয়েকে কখনো বিয়ের প্রস্তাব দেয়নি, ধর্মান্তরের কথাও বলেনি।
বিয়ের মাধ্যমে হিন্দু নারীদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ বন্ধে আইন কার্যকরের পরদিনই বেরেলিতে প্রথম অভিযোগ দায়ের করা হয়।
প্রথম অভিযোগ দায়ের তিনদিন পর উওয়াইশ আহমেদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০ বছর বয়সী ওই নারীর বাবার অভিযোগ, উওয়াইশ তার মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। তার মেয়েকে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য নানাভাবে উৎসাহী করে, লোভ দেখায় এবং জবরদস্তি করে।
মুজাফফরনগর থেকে ৩২ বছর বয়সী নাদিম এবং তার এক বন্ধুকে ৬ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয়।
নাদিমের বিরুদ্ধে অক্ষয় কুমার ত্যাগী অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে অক্ষয় জানান, তার স্ত্রী পারুলকে বিয়ের জন্য ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করছে নাদিম। নাদিম তাদের পূর্ব পরিচিত এবং অক্ষয়দের বাড়িতে মাঝে মাঝে তার যাতায়াত ছিল বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এ অভিযোগ চ্যালেঞ্জ করে এলাহাবাদ হাইকোর্টে যায় নাদিমের পরিবার। এক সপ্তাহ পর এলাহাবাদের উচ্চ আদালত জানান, নাদিমের বিরুদ্ধে দমনপীড়নমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ হবে না।
‘ভুক্তভোগী (অভিযোগকারী স্ত্রী) স্বীকৃতভাবে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক। সে তার ভালো মন্দ নিজে বোঝে। ভুক্তভোগী এবং আবেদনকারী (নাদিম) প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে নিজেদের গোপনীয়তা এবং সম্পর্ক বজায় রাখার মৌলিক অধিকার রাখে। কারণ তারা তাদের সম্পর্কের বিষয়ে সচেতন।’ বলা হয়, আদালতের পর্যবেক্ষণে।
পর্যবেক্ষণে বিচারকরা দেশটির সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদের তৃতীয় ধারার তৃতীয় উপধারা তুলে বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীনভাবে ধর্ম গ্রহণ, বিশ্বাসের চর্চা এবং ধর্মের প্রচারের সমান অধিকার রয়েছে।
মোদারাবাদ থেকে সালিম আলি এবং তার ভাই রাশিদ আলিকে গ্রেফতার করা হয়। পরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের নির্দেশে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিজনগরে দলিত গোত্রের বান্ধবীর সঙ্গে হাঁটার সময় এক মুসলিম কিশোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৪ ডিসেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয়। দলিত ওই কিশোরী মুসলিম কিশোরের সহপাঠী। আরেক বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার পথে একদল উগ্রবাদী তাদের ঘিরে ধরে।
উগ্রবাদীরা তখন ওই কিশোরকে মারধর করে। তাদের ধর্মীয় পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় দেওয়ার পর যখন উগ্রবাদীরা দেখলো তারা, দু’জন আলাদা ধর্মের, তখন তাদের স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মুসলিম কিশোরের বিরুদ্ধে ধর্মান্তরবিরোধী আইন এবং অপহরণের অভিযোগে মামলা দেয় পুলিশ।
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সরকারের ধর্মান্তরবিরোধী আইন চ্যালেঞ্জ করে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এবং এলাহাবাদ উচ্চ আদালতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পিটিশন দায়ের করা হয়েছে।
ভারতের সংবিধানে লাভজিহাদ নামে কোনো শব্দ নেই। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য নাথ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি’র নেতাকর্মী এবং স্থানীয় বিভিন্ন কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী মুসলমানদের কোণঠাসা করার জন্য ব্যাপকভাবে লাভজিহাদ শব্দটি ব্যবহার করছে। তাদের অভিযোগ, হিন্দু নারীদের ভালোবাসার মাধ্যমে ধর্মচ্যুত করতে ষড়যন্ত্র করছে মুসলমান পুরুষরা।
এর আগে জৌনপুরে এক সভায় লাভজিহাদের বিরুদ্ধে সতর্কবানী উচ্চারণ করেছিলেন যোগী আদিত্য নাথ। বলেন, যারা পরিচয় গোপন করে আমাদের বোনদের ইজ্জত নিয়ে খেলছেন, যদি নিজেদের শুধরিয়ে না নেন, তাহলে আপনার রাম রাম সত্য যাত্রা শুরু হয়ে যাবে।‘ হিন্দুদের মরদেহ যাত্রায় রাম রাম সত্য জপ করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।