আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠে হিমবাহ ফেটে দুইটি নদীতে প্রবল বন্যা। ভেসে গেল বিদ্যুৎকেন্দ্র, ব্রিজ, ঘরবাড়ি। নিহত বহু। খবর ডয়চে ভেলে’র।
বছর সাতেক আগে ক্লাউড বার্স্ট বা মেঘ ভেঙে বন্যা ও ধসে ভেসে গিয়েছিল উত্তরখণ্ডের একটি বড় এলাকা। এবার মেঘ ভাঙা নয়, হিমবাহ ফেটে ভেসে গেল উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠের বিস্তীর্ণ এলাকা। চামোলি জেলার জোশীমঠে অলকানন্দা ও ধৌলিগঙ্গা নদীতে জল বেড়ে ভাসিয়ে দিল বহু গ্রাম, জনপদ, ব্রিজ, এনটিপিসি-র তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ঋষিগঙ্গায় একটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র।
মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত জানিয়েছেন, ”মোট ১৪টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকারীরা প্রাণপাত করে মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। ইন্দো-টিবেটান বর্ডার ফোর্স(আইটিবিপি)-র জওয়ানরা উদ্ধারের কাজে নেমে পড়েছেন। সেনা নামানো হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কেন এই বিপর্যয় হলো, তা খতিয়ে দেখতে বিজ্ঞানীদের একটি দল গঠন করা হয়েছে।
প্রশাসনের চিন্তা বাড়িয়েছে, এনটিপিসি-র ১৪৮ জন এবং জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের ২২ জন নিখোঁজ কর্মী। তাঁদের সন্ধানে সেনা ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। আইটিবিপি ইতিমধ্যে নির্মীয়মান দুইটি টানেল থেকে তিরিশ জনকে উদ্ধার করেছে।
দিল্লিতে ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট টিমের সদস্যরা বৈঠকে বসেছিলেন। তারা জানিয়েছে, সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের পক্ষ থেকে তাদেরকে জানানো হয়েছে, জোশীমঠে বিপর্যয় হলেও তার নীচের দিকের এলাকায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই। অলকানন্দা ও ধৌলিগঙ্গার জল কমে গেছে।
ভিডিও এবং ছবিতে দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ করে নদীতে বিপুল বেগে জল বইতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে ব্রিজ, বাড়িঘর ভেসে যায়। সংকীর্ণ উপত্যকায় জল ঢুকে পড়ে।
গ্লেসিয়ার ভাঙা
উত্তরাখণ্ডে এই বিপর্যয় হয়েছে গ্লেসিয়ার ভাঙার জন্য। এ এক বিরল ঘটনা। কিন্তু গ্লেসিয়ার ভাঙা মানে কি? আসলে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে গ্লেসিয়ার গলতে শুরু করে। গ্লেসিয়ারে ধরে রাখা জল হঠাৎ নেমে আসে নদীতে। নদীতে তখন বিপুল জলোচ্ছ্বাস হয়। সেই ঘটনাই ঘটেছে জোশীমঠে।
একুশ শতকের শুরুতে হিমালয়ের গ্রেসিয়ার গলতে শুরু করে। ২০১৯ সালে বিজ্ঞানীরা একটি সমীক্ষা করেন। গত ৪০ বছরের স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করেন তাঁরা। তাতে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারত, চীন, নেপাল, ভুটানে গ্লেসিয়ার গলছে। তার ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন এবং পড়বেন এই সব দেশের মানুষ।
কেন এমন হলো
নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র আনন্দবাজারকে বলেছেন, শীতের শেষে এই ধরনের তুষারধস একেবারে অস্বাভাবিক নয়। নদী যে জায়গা দিয়ে বয়ে চলে, তার দুই পাশে প্লাবনভূমি থাকে। সেটা দখল করলে এরকম হবে। তাছাড়া বাঁধ তৈরি করাও এর একটা কারণ।
উত্তরাখণ্ডে যত্রতত্র বাঁধ তৈরি করা নিয়ে এর আগে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ ও ভূতাত্ত্বিকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বাঁধ-বিরোধী আন্দোলনও হয়েছে। জি ডি আগরওয়াল সহ অনেকেই ড্যাম বানানোর বিরুদ্ধে অনশন করেছেন। তাঁদের আন্দোলনের ফলে গঙ্গার উপর একগুচ্ছ বাঁধ বানানোর পরিকল্পনা সরকার স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছে।
সাহায্যের হাত
জাতিসংঘ জানিয়েছে, তারা সব ধরনের সাহায্য করতে প্রস্তুত। সেক্রেটারি জেনারেল আন্তোনিও গুতেরেস বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, তিনি এই ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখিত। জাতিসংঘ সব ধরনের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।