জুমবাংলা ডেস্ক : ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৮০০-৯০০ টন বিষাক্ত ছাই বোঝাই একটি জাহাজ গত ২৫ মে সুন্দরবনের প্রান্তে হাটানিয়া-দোনিয়া নদীতে ডুবে যায়। ইন্দো বাংলা প্রটোকলের আওতায় সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে ২০২০ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ৫ম বারের মত এ ধরনের ছাই বাংলাদেশে রপ্তানি করা হচ্ছিল। এ বিষয়ে পরিবেশবাদীরা জানিয়েছেন, এই ধরনের ছাইয়ে ভারী বিষাক্ত ধাতু রয়েছে যা সুন্দরবনের প্রকৃতি এবং পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিসাধন করতে পারে। এই ছাই ভারতের কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন সিমেন্ট তৈরির কারখানায় রপ্তানি করা হয়।
এ বিষয়ে রিভারাইন পিপল নামক একটি নদী বিষয়ক সংগঠনের প্রধান শেখ রোকন বলেন, গত ৫ বছরে এই নৌরুট ধরে ৭ থেকে ১০টি জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে। তবে আমি কখনো শুনিনি ডুবে যাওয়া এই সব জাহাজ উদ্ধার বা প্রকৃতির যে ক্ষতিসাধন হয়েছে তা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কোন কাজ করা হয়েছে।
২০১৬ সালে ভারতের পরিবেশ আদালত দ্বারা গঠিত একটি কমিটি তাপবিদ্যুত কেন্দ্র থেকে পাওয়া এই ছাই, প্রকৃতিতে কি পরিমাণ দূষণ করে তা নির্ণয়ের চেষ্টা করেছিল। এ বিষয়ে ভারতের একটি এনজিও, লিগ্যাল ইনিশিয়েটিভ ফর ফরেস্ট এন্ড এনভাইরনমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা আইনজীবী রিত্তিক দত্ত জানান, এইসব কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি ১ কেজি কয়লা পোড়ার পর ৩৪০ গ্রাম ছাই উৎপাদন করা হয়। এই ধরনের বিষাক্ত ছাইয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চেয়ে ১০০ গুন বেশি বিকিরণ ক্ষমতা রয়েছে।
এদিকে রিভারাইন পিপলের প্রধান শেখ রোকন জানান, এই বিষাক্ত ছাই পরিবহণ করা হয় যে জাহাজগুলোতে তা বেশিরভাগই বাংলাদেশি মালিকানায় চলে। তিনি আরও বলেন, নদীপথে বিশেষত সুন্দরবনের মাধ্যমে ছাই পরিবহন নিয়ে পরিবেশগত উদ্বেগ অবশ্যই রয়েছে। তবে এই বিষয়টি নিয়ে খুব কম আলোচনা হয়েছে এবং লোকেরা সচেতন নয়। বাংলাদেশে কয়েক’শ সিমেন্ট কারখানা আছে। এতে যে পরিমাণ ছাই লাগে সেই পরিমাণ ছাই উৎপাদনের জন্যে বাংলাদেশে এত কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নেই। এক্ষেত্রে সিমেন্ট কারখানাগুলি বেশিরভাগই ভারতের ওপর নির্ভরশীল।
এছাড়া লিগ্যাল ইনিশিয়েটিভ ফর ফরেস্ট এন্ড এনভায়রনমেন্ট প্রতিষ্ঠাতা আইনজীবী ঋত্তিক দত্ত জানান, ২০০৯ সালে অভ্যন্তরীণ জল পরিবহন ও বাণিজ্য সম্পর্কিত ভারত-বাংলাদেশ প্রোটোকলটির আওতায় ভারত থেকে এই কয়লা বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়। পরে ২০১৫ সালে এই চুক্তি আবার নবায়ন করা হয়।
ভারতের একটি এনজিও মন্থন অধ্যয়ন কেন্দ্র যারা পানি ও জ্বালানী নীতি নিয়ে গবেষণা করে তাদের এক গবেষক অভিল শর্মা জানান, ভারত-বাংলাদেশের নৌ প্রোটকল রুট দিয়ে যত ধরনের রপ্তানি হয় তার ৯৭ শতাংশই এই বিষাক্ত ছাই রপ্তানি করা হয়। এমনকি গত এপ্রিলে যখন ভারতে মহামারি করোনা ভাইরাসে কঠোর লকডাউন চলছিল ঠিক ওই মুহূর্তেও ২ লাখ ১২ হাজার ৮৯৮ টন বিষাক্ত ছাই বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়। আর এই প্রটোকল নৌরুটের মধ্যেই সুন্দরবন রয়েছে যা ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্যতম স্থান নিয়ে আছে।
এখন পরিবেশবীদদের দাবি, অচিরেই সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে এই বিষাক্ত ছাই পরিবহন বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এই বিষাক্ত ছাই পরিবহন বন্ধ না করা হয় অচিরেই সুন্দরবনের প্রাণ ও প্রকৃতি ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে আশঙ্কা করছেন তারা।
সূত্র: দ্যা থার্ড পোল, সময় নিউজ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।