ভারত ও পাকিস্তান—এই দুটি প্রতিবেশী দেশ ইতিহাসের শুরু থেকেই পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত, আর সেই দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কাশ্মীর। সাম্প্রতিক পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
ভারত পাকিস্তান: চিরায়ত সংঘাতের পটভূমি
ভারত পাকিস্তান সংঘাতের মূল কেন্দ্রবিন্দু কাশ্মীর নিয়ে হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে বিরোধ চলে আসছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও তার সাম্প্রতিক বক্তব্যে এ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন যে, “কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হাজার বছর ধরে লড়াই চলছে।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, এ সংঘাত নতুন নয় বরং ইতিহাসের গভীর থেকে উঠে আসা একটি জটিল সমস্যা।
Table of Contents
পহেলগামের সাম্প্রতিক হামলার পর ট্রাম্প বলেন, তিনি উভয় দেশের ঘনিষ্ঠজন। তিনি বিশ্বাস করেন, দুই দেশ কোনো না কোনোভাবে সমস্যার সমাধান করবে। অতীতে ২০১৯ সালেও তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
পহেলগাম হামলা ও সীমান্ত উত্তেজনা: ভারত পাকিস্তান সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা
২২ এপ্রিল পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়। এর ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ফের উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সীমান্তে টানা দুই দিন গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী দাবি করেছে, পাকিস্তানি বাহিনী প্রথমে গুলি চালায় এবং তাদের পক্ষ থেকে পাল্টা জবাব দেওয়া হয়। যদিও পাকিস্তান এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, ভারত ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাকিস্তান এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং এটিকে যুদ্ধ ঘোষণার সামিল বলে উল্লেখ করেছে।
সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যস্থতার প্রস্তাব: শান্তির সম্ভাবনা
কাশ্মীরে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে সৌদি আরব ও ইরান মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এবং ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পৃথকভাবে কথা বলেছেন।
ইরানের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যে বোঝাপড়ার চেষ্টা করবে। এই উদ্যোগ ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে, যদিও সংঘাত প্রশমনের বাস্তবিক ফলাফল এখনো অনিশ্চিত।
সিন্ধু পানি চুক্তির তাৎপর্য এবং ভারতের সিদ্ধান্তের প্রভাব
১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তির মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নদীগুলোর পানি বণ্টনের নিয়ম নির্ধারণ করা হয়েছিল। ভারতের উজানে অবস্থিত ইরাবতী, বিপাশা এবং শতদ্রুর পানি ব্যবহার করতে পারবে ভারত, আর পাকিস্তান সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর পানি পাবে।
ভারতের একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে পানিপ্রবাহে প্রভাব ফেলবে না, তবে ভবিষ্যতে পাকিস্তানের কৃষি ও অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। পাকিস্তান ভারতের এ পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন বলে বিবেচনা করছে এবং কূটনৈতিক ও সামরিক প্রতিক্রিয়ার হুমকি দিয়েছে।
ভারত পাকিস্তান উত্তেজনার ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
সাম্প্রতিক পহেলগাম হামলা, সীমান্তে গুলিবিনিময়, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতকরণ—সবকিছু মিলিয়ে ভারত পাকিস্তান সম্পর্ক বর্তমানে চরম উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে। সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যস্থতার প্রস্তাব পরিস্থিতি শান্ত করার একটি আশার আলো দেখালেও বাস্তবিক প্রেক্ষাপটে দুই দেশের আস্থা ও সদিচ্ছা ছাড়া কোনো সমাধান সম্ভব নয়।
ভারত পাকিস্তান সম্পর্কের উত্তাপ এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। এ সংকট সমাধানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও বাড়াতে হবে এবং পারস্পরিক আস্থা গড়ে তুলতে হবে।
FAQs
ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের মূল কারণ কী?
কাশ্মীর অঞ্চলের উপর সার্বভৌমত্বের দাবি এবং ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মতপার্থক্যই ভারত পাকিস্তান সংঘাতের মূল কারণ।
সৌদি আরব ও ইরান কীভাবে মধ্যস্থতা করছে?
উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে পৃথকভাবে যোগাযোগ করে, শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়ে সৌদি আরব ও ইরান মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে।
সিন্ধু পানি চুক্তির গুরুত্ব কী?
এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নদীগুলোর পানি বণ্টনের নির্দিষ্ট নিয়ম নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা দুই দেশের কৃষি ও জীবনযাত্রার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করতে পারে কি?
চুক্তিতে একতরফাভাবে বাতিলের বিধান নেই। এর জন্য আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা বা উভয় পক্ষের সম্মতি প্রয়োজন।
ভারত পাকিস্তানের মধ্যে ভবিষ্যৎ শান্তি আলোচনা সম্ভব?
যদি উভয় পক্ষ আস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয় এবং তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা কার্যকর হয়, তবে ভবিষ্যতে শান্তি আলোচনা সম্ভব।
কাশ্মীর সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনা কতটা?
যদিও রাজনৈতিক বাস্তবতা কঠিন, তবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, আন্তর্জাতিক চাপ এবং পারস্পরিক সদিচ্ছা থাকলে শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।