ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক ইতিহাসজুড়ে এক উত্তেজনাপূর্ণ অধ্যায়। এশিয়ার এই দুটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে বহুবার সংঘর্ষ হয়েছে, যার শেষ সংযোজন হিসেবে ২০২৫ সালের মে মাসে সংঘটিত সামরিক উত্তেজনা গোটা উপমহাদেশে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। কিন্তু সেই উত্তেজনার মাঝে অবশেষে এক শান্তির পরশ— ভারত পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এই ঘোষণা একদিকে যেমন স্বস্তি দিয়েছে সাধারণ মানুষকে, অন্যদিকে আবার অনেকের মনেই উঠেছে প্রশ্ন—এই শান্তি কতটা স্থায়ী?
ভারত পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত: শান্তির নতুন আশার আলো
১০ মে ২০২৫ তারিখে সন্ধ্যা ৫:৩৫ মিনিটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ঘোষণায় জানান যে, তাঁর সরকারের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান একটি পারস্পরিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এরপরই দুদেশের কর্মকর্তারা পৃথকভাবে এই চুক্তির সত্যতা নিশ্চিত করেন। এমন এক সময়ে এই চুক্তি হলো, যখন জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে আবারও গোলাগুলির শব্দ এবং শ্রীনগরে বিকট বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
Table of Contents
এই যুদ্ধবিরতি হলো এক দীর্ঘ আলোচনার ফল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসাক দার জানান, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন এই আলোচনায়। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘরাত ধরে আলোচনা করেন।
সংঘর্ষের পরও শান্তির বাস্তবতা: স্থায়ীত্ব নিয়ে শঙ্কা
যুদ্ধবিরতির ঘোষণা হবার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে জম্মু ও শ্রীনগরজুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়, যা এই চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। জম্মু শহরের আকাশে উড়ে আসা বস্তু প্রতিহত করে ভারতীয় আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, যেটি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগের জন্ম দেয়।
এই প্রসঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “যুদ্ধবিরতি কি তবে ছাই হয়ে গেল?” তাঁর এই মন্তব্যই তুলে ধরে সাধারণ নাগরিকদের উদ্বেগ। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ভারত এই লঙ্ঘনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং উপযুক্ত জবাব দিচ্ছে।”
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে রয়েছে এবং পাকিস্তানের প্রতিটি আক্রমণ বা উস্কানির যথাযথ জবাব দেওয়া হবে। যুদ্ধবিরতি ঘোষণা ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে আই নিউজ জুমবাংলা।
আজকের আবহাওয়ার খবর: তীব্র তাপপ্রবাহ নিয়ে যা বলা হয়েছে পূর্বাভাসে
পাকিস্তানের ভূমিকা এবং ভিন্ন ভিন্ন বার্তা
নতুন চুক্তি, পুরোনো সন্দেহ
যদিও পাকিস্তানের সরকার যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সম্মত হয়েছে বলে জানায়, ভারতীয় পক্ষ দাবি করেছে যে এই চুক্তির পরপরই পাকিস্তান তা লঙ্ঘন করেছে। শ্রীনগরে বিস্ফোরণের পাশাপাশি, ভারতের পশ্চিম সীমান্তে গোলাবারুদ ছোঁড়ার ঘটনাও এই সন্দেহকে জোরালো করে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে ভারত মিথ্যা প্রচার করছে এবং মুসলিমদের উপাসনালয়কে লক্ষ্যবস্তু করেছে। তবে ভারতীয় বিমানবাহিনী স্পষ্ট করে জানায়, তাদের লক্ষ্য কেবল সন্ত্রাসীদের শিবির এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে ব্যবহৃত স্থাপনাগুলো।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ভারত ও পাকিস্তানের নেতাদের সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং মার্কিন মধ্যস্থতাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এই প্রতিক্রিয়া থেকেও বোঝা যায় যে, আঞ্চলিক শান্তি নিয়ে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর উদ্বেগ কতটা গভীর।
সামরিক প্রস্তুতি ও রাজনীতিক প্রতিক্রিয়া
যুদ্ধবিরতির পরে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর কমোডর রঘু নায়ার বলেন, “যুদ্ধবিরতি মেনে চলা হলেও, পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।” একইভাবে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ভ্যোমিকা সিং পাকিস্তানের অভিযোগগুলো নাকচ করে বলেন, “ভারতীয় বাহিনী কোনো ধর্মীয় স্থান আক্রমণ করেনি।”
জনমত এবং ভবিষ্যতের আশঙ্কা
ভারত পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও, সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রশ্ন রয়ে গেছে—এই শান্তি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে? রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য এবং মিডিয়ার প্রতিবেদনগুলো থেকে স্পষ্ট, জনগণ এখনো পুরোপুরি আশ্বস্ত নয়। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার—আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখতে হলে, দুই দেশের নেতৃত্বের সদিচ্ছাই একমাত্র উপায়।
এই মুহূর্তে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। তবে বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে বলতে হয়, এই অধ্যায় কতটা শান্তিপূর্ণ হবে তা নির্ভর করবে ভবিষ্যতের প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর।
FAQs
- ভারত পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে কবে সম্মত হয়?
২০২৫ সালের ১০ মে তারিখে সন্ধ্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘোষণার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত জানানো হয়। - এই যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা কে করেছে?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও এই মধ্যস্থতা করেন, যুক্তরাজ্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। - যুদ্ধবিরতির পর কোন অঞ্চলে উত্তেজনা দেখা দেয়?
জম্মু, শ্রীনগরসহ ভারতীয় সীমান্তে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। - বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানায় এবং প্রতিবেশী শান্তির আহ্বান জানায়। - ভারতীয় সেনাবাহিনীর কী পদক্ষেপ ছিল?
সেনাবাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং ভবিষ্যতে যে কোনো হুমকির জবাব দিতে প্রস্তুত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।